বেডরুম ভ্যানিটি ঘরের আভিজাত্যের প্রতীক
সিনেমার সেটে ‘ভ্যানিটি ভ্যান’ কিংবা ‘ভ্যানিটি ইউনিট’-এর কথা তো আমরা অনেকেই শুনেছি। ভ্যানিটিতে তারকারা সাজগোজ করে। কিন্তু ভ্যানিটি যে শুধুই সিনেমার তারকাদের ব্যবহার্য জিনিস, তা নয়। ভ্যানিটি থাকতে পারে নিজের ঘরেই।
আমাদের প্রায় সবার ঘরেই ড্রেসিং টেবিল থাকে। যেখানে আমরা রোজ তৈরি হই। ভ্যানিটির কাজটাও অনেকটা ড্রেসিং টেবিলের মতোই। ভ্যানিটি মূলত প্রসাধনসামগ্রী রাখা, সাজগোজ ও তৈরি হওয়ার কাজে ব্যবহৃত হলেও এটি ঘরের আভিজাত্যের প্রকাশও ঘটায়। ভ্যানিটি কয়েক ধরনের হলেও আমাদের দেশে বেডরুম ভ্যানিটির প্রচলন ইদানীং খুব দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন নকশার ভ্যানিটি কিনতে পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। কিন্তু যারা সরাসরি না কিনে নিজের পছন্দমতো বা ঘরের ধরন অনুযায়ী ভ্যানিটি তৈরি করে নিতে চান, তাদের কাজ সহজ করতে বলছি পাঁচটি উপায়।
টেবিল ও চেয়ার
ঘরের আবহের সাথে মিল রেখে ভ্যানিটি টেবিল বাছাই করা ভালো
নিজের ঘরে ছোটখাটো একটা ভ্যানিটি তৈরি করতে যে জিনিসগুলো সবচেয়ে জরুরি, তা হলো একটি টেবিল ও একটি চেয়ার। টেবিল আয়না, প্রসাধন ইত্যাদি রাখা ও চেয়ার বসে সাজগোজ করার জন্য দরকার হয়। ঘরের আবহের সাথে মিল রেখে ভ্যানিটি টেবিল ও চেয়ার বাছাই করাই ভালো।
আধুনিক ভাবধারায় সাজানো ঘরে হালকা নকশার টেবিল-চেয়ার মানানসই। আবার ভারী নকশার টেবিল-চেয়ার মানাবে ট্র্যাডিশনাল আবহে সাজানো ঘরে। টেবিল শুধু একটা তলবিশিষ্টও হতে পারে আবার ড্রয়ারওয়ালা বা তাকওয়ালা টেবিল হতে পারে।
ভ্যানিটি ছাড়াও প্রসাধন রাখার অন্য জায়গা থাকলে ছোট টেবিলই চলনসই। চেয়ারের ক্ষেত্রে বাছাই করতে হবে ছোট আরামদায়ক চেয়ার, যেন বসে সাজগোজ করতে কোনো অসুবিধা না হয়। কাপড়ের ছোট ব্যারেল চেয়ার, কাঠের উইশবোন চেয়ার ভ্যানিটি চেয়ার হিসেবে ভালো। টেবিলের সাথে মিল রেখে ফোল্ডিং চেয়ার বা কুশনিং টুল হতে পারে আরেকটি বিকল্প।
আয়না
ভ্যানিটিকে পূর্ণ রূপ দেয় আয়না। বর্তমানে ভ্যানিটিতে ভিন্ন ধরনের আয়নার ব্যবহার দেখা যায়। ভ্যানিটির আয়নার হিসেবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাধারণ আয়নাই ব্যবহার করা হয়। তবে অনেক ভ্যানিটিতে নিজেকে কাছ থেকে দেখার জন্য কনকেভ মিরর ব্যবহার করা হয়। আয়নাসহ ভ্যানিটি টেবিল কিনলে আলাদা আয়নার দরকার পড়ে না। তবে আয়না টেবিলের সাথে সংযুক্ত না হলে নিজের পছন্দমতো আয়না ব্যবহার করার সুযোগ থাকে। টেবিলের পেছনের দেয়ালে গোল, ডিম্বাকৃতি, চৌকো বিভিন্ন নান্দনিক ফ্রেমের আয়না লাগানো যেতে পারে। আয়নার ফ্রেম যত আকর্ষণীয় হবে, ভ্যানিটিকে দেখাবে তত অভিজাত। আবার এপিঠ-ওপিঠ সাধারণ আয়না ও কনকেভ আয়না বা ট্রাই-ফোল্ড আয়নার সুন্দর স্ট্যান্ড ফ্রেমও ভ্যানিটিকে দিতে পারে অন্য রকম ছোঁয়া।
ড্রয়ার ও তাক
হাতের কাছে চিরুনি, ব্রাশসহ অন্যান্য প্রসাধনসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি রাখার জন্য ভ্যানিটিতে ড্রয়ার ও তাক খুবই প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে ড্রয়ারওয়ালা টেবিল কেনাটাই সবচেয়ে সুবিধাজনক। তবে টেবিলের সাথে ড্রয়ার না থাকলে আলাদা করে ড্রয়ারসহ একটি কেবিনেট বানিয়ে নেওয়া যায়। তবে টেবিল, চেয়ার ও আয়নার ধরন, রং ও নকশার সাথে মিল রেখে বানাতে হবে কেবিনেট। নয়তো পুরো ভ্যানিটির সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। আর সেটি রাখতে হবে একদম হাতের কাছেই। আলাদা ড্রয়ারে আলাদা প্রসাধন গুছিয়ে রাখাটা সুবিধাজনক। কোনটায় অলংকার, কোনটায় সাজগোজের প্রসাধন আবার কোনটায় হেয়ার ড্রায়ার, কার্লার স্ট্রেইটনারের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্র। সে ক্ষেত্রে আগে থেকে মাপমতো ড্রয়ার বা তাক বানানোই ভালো; যেন সবকিছু সহজে সংরক্ষণ করা যায়।
আলো
সাজগোজের সময় ঘরের আলো ছাড়াও বাড়তি আলোর প্রয়োজন হয়। আলোটা ঠিকঠাকমতো না থাকলে সাজ নিখুঁত হয় না। তাই ভ্যানিটিকে এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে সহজেই প্রাকৃতিক আলো পাওয়া যায়।
সেটি সম্ভব না হলে আলাদা কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। ইদানীং আয়নার ফ্রেমে একাধিক আলোর আলোকসজ্জা বেশ প্রাধান্য পাচ্ছে। এতে ভ্যানিটির সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনই আলো সরাসরি সামনে থেকে আসায় সাজগোজেও সুবিধা হয়।
এভাবে আলোর ব্যবস্থা না করতে পারলে স্ট্যান্ড ল্যাম্প বা টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করা যেতে পারে। আকর্ষণীয় নকশার টেবিল ল্যাম্প ভ্যানিটিকে দেবে নান্দনিকতার ছোঁয়া। তবে কখনোই ভ্যানিটির ওপরে সিলিংয়ে বাতি লাগানো যাবে না। এতে ওপর থেকে আলো পড়ে মুখের ওপর চুলের, নাকের ছায়া পড়বে। তাতে সাজগোজে অসুবিধা হবে।
বৈদ্যুতিক সংযোগ
ভ্যানিটি তৈরি বা কেনার ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সংযোগের সুবিধা থাকাটা খুবই জরুরি। সেজেগুজে চুল শুকানো বা স্ট্রেইট করার জন্য বৈদ্যুতিক সংযোগের খোঁজে যদি দৌড়াদৌড়ি করতে হয় তাহলে বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই ভ্যানিটি এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন সহজে বৈদ্যুতিক সংযোগ পাওয়া যায়। ভ্যানিটির কৃত্রিম আলো, স্ট্রেইটনার, ড্রায়ার, কার্লারের মতো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিগুলোর জন্য আলাদা সকেটের পাশাপাশি সংযোগটি যেন সুরক্ষিত থাকে, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে।
আভিজাত্যের প্রতীক ভ্যানিটি। নিজের ঘরের ভ্যানিটিকে সহজে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলতে এই উপায়গুলো আপনার জন্য কতটা কার্যকর, তা কমেন্টে জানাতে পারেন।
লেখক: এশনা বিনতে আলী