একটি বাড়ি কে ঘর হিসেবে গড়ে তুলতে প্রয়োজন বসবাসযোগ্য আরামদায়ক পরিবেশ। বাসায় চলাফেরা করার মত যথেষ্ট স্থান না থাকলে গুমোট পরিবেশে অনেকেই অস্বস্তি বোধ করেন। তাই ঘর সাজানোর জন্য দরকার এমন সব ফার্নিচার যা বাসার স্পেস দখল করে গুমোট পরিবেশ সৃষ্টি করবেনা। অনেক সময় বেডরুম এর সাইজ ছোট হলেও বেড, ওয়্যারড্রোব, ড্রেসিং টেবিল সহ অনেক কিছু রাখতে গিয়ে স্থান সংকুলান হয়না। যেহেতু সারাদিনের কর্মব্যাস্ততা শেষে বাসার বেডরুমেই বাকি পুরোটা সময় অতিবাহিত করেন, সেক্ষেত্রে স্থান-সংকুলান সম্পর্কৃত এই সমস্যা থেকে পরিত্রানের জন্যই আছে স্পেস সেভিং ফার্নিচার, যা ঘরের স্থান বাচিয়ে আপনার বেডরুমের পুরো ব্যবহার নিশ্চিত করবে। শহুরে এলাকায়, যেখানে লিভিং স্পেস লিমিটেড এবং এক্সপেনসিভ, সে সকল স্থানে ঘরের পুরোটা অংশ ব্যবহার করার জন্য স্পেস সেভিং মিনিমালিস্টিক ফার্নিচারের বিকল্প নেই।
বাসার স্পেস বিবেচনা করুন
বাসার জন্য স্পেস সেভিং ফার্নিচার সিলেক্ট করার সময় আপনার বেডরুমের স্টোরেজ এবং ইউটিলিটি রিকোয়ারমেন্টস পরিক্ষা করা উচিত। এইসব পরিক্ষা করার জন্য আপনাকে আগে আপনার রেগুলার লাইফস্টাইল এবং প্র্যাত্যাহিক এক্টিভিটিস ডিটারমাইন করতে হবে । যেমন, আপনার যদি কাপড় চোপড় বেশি থাকে, তাহলে বড় ক্লোজেটের দরকার পড়বে। আবার আপনার ওয়ার্কপ্লেস যদি বাসাতেই হয়ে থাকে, তাহলে আপনার কাজ করার জন্য একটা ডেস্কও প্রয়োজন হবে। তাই আপনি যদি বাসার ফার্নিচারের কেনার সময় স্পেস সেভিং ফার্নিচার সিলেক্ট করাটাই দুর্দান্ত আইডিয়া হবে, কারন এতে করে বেডরুমের স্পেসের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যাবে, আবার , ঘরের সৌন্দর্যও বজায় থাকবে। যেমন, আপনি একটি স্টোরেজ বিছানা ব্যবহার করতে পারেন, এটি এমন একটি বিছানা যার মধ্যে ড্রয়ার বা তাক রয়েছে। এটি আপনার জন্য আইডিয়াল চয়েস হবে কারণ এতে করে আপনার জামাকাপড় রাখার করার জন্য আপনার আলাদা ড্রেসার বা ড্রয়ারের প্রয়োজন পড়বে না।
আবার, ফুল বডি ডেস্কের ব্যবহার না করে যদি ওয়াল মাউন্ট টেবিল ব্যবহার করেন তাহলে আপনার বেডরুমে হাটা-চলার জন্য আরো বেশি স্পেস অবশিষ্ট থাকবে। আবার সিঙ্গেল স্ট্যান্ড হ্যাংগার কিংবা ওয়াল মাউন্ট হ্যাংগার ব্যবহার করে ঘরের ফ্লোরে রাখা আসবাবপত্রের চাপ কমিয়ে নিয়ে আসতে পারেন। এছাড়াও, ফার্নিচার চয়েসের সাথে সাথে এর কালার ও ডিজাইনও এমন ভাবে সিলেক্ট করতে হবে যেন বেডরুমে সেটা কোন আন কম্ফোর্টেবল অনুভুতির উদ্রেক না করে। যখন সবকিছু মিলে একসাথে সুন্দর দেখাবে, তখন এটি আপনার ঘরকে স্পেশাল এবং আরামদায়ক করে তুলবে!
কেমন হওয়া উচিত স্পেস সেভিং ফার্নিচার?
আপনি যদি কখনও এমন অনুভব করে থাকেন যে আপনার বেডরুমে পর্যাপ্ত স্পেস এভেইলেবল নেই, সেক্ষেত্রে নিম্নে বর্নিত ফার্নিচার গুলো আপনার বেডরুমকে আরও ভাল ভাবে ব্যবহার করতে সাহায্য করবে। পাশাপাশি, বলে রাখা ভাল যে, এসব ফার্নিচার আপনার দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি কোন ঝামেলা যোগ করবে না, বরং আপনার জীবনকে আরো সহজ ও সুন্দর করে তুলবে।
- স্টোরেজ বেড: এগুলি হল আপনার জামাকাপড় বা জিনিসগুলি রাখার জন্য নীচে ড্রয়ার বা তাক সহ বিছানা। আপনার আলাদা ওয়্যার ড্রোব কিংবা আলমারির প্রয়োজন হবে না, তাই আপনার শোবার ঘরে আরও জায়গা থাকবে।
- ওয়াল-মাউন্টেড ডেস্ক: এই ডেস্কগুলি আপনার ঘরের ওয়ালের সাথে সংযুক্ত থাকে, তাই আপনার মেঝেতে জায়গার প্রয়োজন হয় না। ব্যবহার করার জন্য হুক ধরে টানলে পুরো ফাংশনাল একটি ডেস্কে পরিনত হবে, এবং কাজ শেষ আবার পুনরায় দেয়ালে ভাজ করে রাখতে পারেন।
- বাঙ্ক বেডস: আপনি যদি ব্যাচেলর হয়ে থাকেন এবং একাধিক বন্ধু মিলে একটি রুম শেয়ার করেন, এক্ষেত্রে, বাঙ্ক বেড অনেক ভাল একটি অপশন হতে পারে।বলা যায়, এক বেডের স্পেস দিয়ে দুইটি বেড সেট করার জন্য এই রকম বেডের জুড়ি মেলা ভার। রুম শেয়ার করা ছাড়াও, আপনি যদি আপিনার সন্তানের জন্য একই রুমে স্লিপিং স্পেস ম্যানেজ করতে হয়, তাহলেও এই ধরনের বেড বেশ কাজে দিবে।
- মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার: এই ধরনের আসবাবপত্র একাধিক কাছে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন একটা ডেস্ক যা নাইট স্ট্যান্ড হিসবে কাজ করতে পারে, আবার একটি বেড যার মধ্যে স্টোরেজ ফ্যাসিলিটি এবং ফোল্ড করে সোফা বানানোর সিস্টেম থাকবে।
- বিল্ট-ইন স্টোরেজ: টেবিল, সোফা, ক্লজেট, স্টোরেজ কিউব ইত্যাদি ফার্নিচারের ভার্টিক্যাল প্লেসমেন্টের মাধ্যমে আপনি ঘরের অনেক্ষানি স্থান সেভ করতে পারেন। ফলে আপনার বেডরুম আরো অর্গানাইজড এবং স্পেশিয়াস মনে হবে।
কিভাবে ফার্নিচার অ্যারেঞ্জ করবেন?
আপনার বেডরুমের আসবাবপত্র সেটাপ করার জন্য প্রথমে, আপনাকে আপনার বেডরুমের ডাইমেনশন কত সেটা জানতে হবে। এইভাবে, আপনি যদি আপনার বেডরুমের আয়তন বের করতে পারেন সেটা পরবর্তীতে আপনাকে কোথায় কোন ফার্নিচার সেটাপ করবে, সেই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে। বেডরুমের দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ, সেইসাথে দেয়ালের উচ্চতা পরিমাপ করে নিন এবং পাশাপাশি দরজা জানালা কিংবা অন্যান্য কোন স্টোরেজ যেমন ওয়াল মাউন্ট স্টোরেজ আগে থেকে তৈরি করা থাকলে সেটা ধরেই প্ল্যান করতে হবে।
রুমের সাইজ সম্পর্কে আইডিয়া হবার পর আপনাকে রুমের একটা ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারন করতে হবে, যা আপনার রুমের প্রতি আপনাকে আকৃষ্ট রাখবে। ডিজাইনার বেড, দুর্দান্ত ভিউ সংবলিত জানালা, একটি অসাধারন ছবি কিংবা একটি ফায়ারপ্লেস – যে কোন কিছুই রুমের ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে। ফোকাল পয়েন্ট সিলেক্ট করে সেটাকে ঘিরেই আপনার রুমের বাকি ফার্নিচার এবং ইন্টেরিয়র সাজানো উচিত হবে।
যদিও বেডরুমে অনেকেই ছবি বা ওয়াল শোপিস লাগানোর প্রতি বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে স্পেস সেভ করে বেডরুমের ব্রিথেবলিটি উন্নত করার জন্য ওয়াল মাউন্ট স্টোরেজ ব্যবহার করা উচিত হবে। যেমন , প্রশস্ত বুক শেলফ না কিনে লম্বা বুক শেলফ কিনতে পারেন। আবার ফলস সিলিং ব্যবহার করে উপরে স্টোরেজ অপশন রেডি করতে পারেন। এমনকি আপনার বেডকে ফোল্ডেবল সোফাতে রুপান্তর করতে পারেন। এমন অনেক আইডিয়া রয়েছে, তবে আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে কোনটা আপনার রুমের জন্য ভাল হবে।
আপনার বেড রুমকে কয়েকটি আলাদা জোনে বিভক্ত করতে পারেন যেমন – স্লিপিং, ওয়ার্কিং, ড্রেসিং, ইত্যাদি। এতে করে প্রতিটা সেকশনের ডেকিকেটেড কাজের ধারা থাকলে ক্লাটারড সিচুয়েশন আর তৈরি হবেনা। এই জোন ভাগ করার বিষয়টা মনস্তাত্বিক ও হতে পারে, আবার কার্টেইন বা পার্টিশনিং হার্ড বোর্ড দিয়েও করতে পারেন। তবে যেভাবেই করুন, বড় বড় ফার্নিচারগুল রুমের কোনায় রেখে মাঝের স্থান ফাকা রাখার ট্রাই করবেন। এতে করে আপনার বেডরুমে লিভিং এক্সপেরিয়ান্স আর বৃদ্ধি পাবে।