বর্তমানে ভাল মানের আসবাবপত্র কেনা বেশ খরচের ব্যাপার। বছরের বিভিন্ন সময়ে চাহিদা অনুযায়ী আসবাবপত্রের দামও ওঠানামা করে। এক্ষেত্রে সঠিক সময়ে দোকানে গেলে কম খরচে নামীদামী আসবাবপত্র কিনতে পারবেন।
আপনার কেনাকাটা সহজ করতে আজকের গাইডে আবহাওয়া, ধরণ ও ডিসকাউন্ট অনুযায়ী আসবাবপত্র কেনার সেরা সময় কখন সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করবো। চলুন আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি মূল টপিকে চলে যাই।
কিভাবে আসবাবপত্র কেনার সময় নির্ধারণ করবেন?
দুটো বিষয়ের উপর আসবাবপত্র কেনার সময় নির্ভর করবে, তা হলোঃ কোন ধরণের আসবাবপত্র কিনবেন এবং কেমন দামে আসবাবপত্র কিনবেন। ঘরের ভিতরের আর বাইরের আসবাবপত্রের মান ভিন্ন হয়। তাই ঋতু বা মাস দেখে আসবাবপত্র কিনলে অনুকুল আবহাওয়ার কারণে বেশিদিন টেকসই হবে।
অপরদিকে কমদামে আসবাবপত্র কিনতে হলে বিভিন্ন উৎসবের মৌসুমে বিশেষ ডিসকাউন্ট পাবেন। বছরের শেষে ও শুরুতে ‘স্টক রিনিউ’ হবার আগে আসবাবপত্রের দাম কম থাকে। আপনার প্রয়োজনের সাথে এসব কিছু হিসেব করে সময় নির্ধারণ করতে পারবেন।
বছরের কোন কোন সময়ে আসবাবপত্র কিনবেন?
১. ঘরের ভিতরের আসবাবপত্র কেনার সময়
শীত, গ্রীষ্ম ও শরৎকাল ঘরের ভিতরের আসবাবপত্র কেনার জন্য উপযুক্ত সময়। এসময় শুষ্ক আবহাওয়াতে নতুন কাঠের ও নতুন ডিজাইনের আসবাবপত্র তৈরি হয়। প্রত্যেকটা ফার্নিচার স্টোরে সদ্য আমদানি করা কাঠের খাট, টেবিল, আলমারি, শেলফ ইত্যাদি দেখতে পাবেন।
এসময় আবহাওয়া শুকনো থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে কাঠের আসবাবপত্র নষ্ট হয় না। তাই নিরাপদে আর্টিফিশিয়াল কাঠের ফার্নিচার কিনতে পারবেন। স্টিলের ক্ষেত্রেও অক্সাইডের আক্রমণ হয় না। অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে এই সময়ে যেকোনো জিনিস সহজে পরিবহন করতে পারেন।
২. ঘরের বাইরের আসবাবপত্র কেনার সময়
অনেক সময় ঘরের বাইরে টেবিল, চেয়ার, শেলফ ইত্যাদি রাখার দরকার হয়। শীত ও হেমন্তকাল এই ধরনের জিনিস কেনার জন্য উপযুক্ত সময়। কারণ এই মাসগুলোতে বৃষ্টির সম্ভাবনা খুব কম থাকে ও বাতাসের আর্দ্রতা অনুকুলে থাকে। তাই নতুন আসবাবপত্র নিরাপদে বাইরের আবহাওয়ার সাথে ‘অ্যাডজাস্ট’ হবার প্রয়োজনীয় সময় পায়। পরবর্তীতে বৃষ্টি এলেও সহজে কাঠ পঁচে যায়না।
৩. কম খরচে আসবাবপত্র কেনার সময়
অনেকেই সারা বছর টাকা জমিয়ে শখের জিনিস কিনেন। সঠিক মাপ ও ‘ম্যাটারিয়েল কস্ট’ এর জন্য এসব আসবাবপত্রের দাম স্বাভাবিকভাবে বেশি হয়। তবে এরকম ‘প্রিমিয়াম ফার্নিচার’ কম খরচে পাবার সহজ উপায় আছে। খেয়াল করে দেখবেন, ঈদের মৌসুম ও বছরের শেষে সবকিছুর দাম বেশ কমে যায়।
আসবাবপত্রের দোকান গুলো এসময় স্টক ফাকা করতে বড় অংকের ডিসকাউন্ট জানিয়ে বিজ্ঞাপন দেওয়া শুরু করে।
বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন নতুন বাড়ির জন্য কীভাবে আসবাবপত্র পচ্ছন্দ করবেন
কোন কোন সময়ে আসবাবপত্রে বিশেষ মূল্যহ্রাস দেওয়া হয়?
বাইরের দেশে ব্লাক ফ্রাইডে, নিউ ইয়ারসহ, হ্যালোইনের মত অনেকরকম উৎসব থাকলেও বাংলাদেশে বড় উৎসবের পরিমাণ কিছুটা কম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি কেনাকাটার সময়গুলো হলোঃ
- ঈদ উল ফিতর
- ঈদ উল আযহা
- শীতকাল
- নতুন বছর
- দূর্গা পূজা
এই সময়গুলোতে সবাই পরিবারের জন্য কেনাকাটা করে থাকে। স্যালারি বোনাস ও প্রমোশন পাবার কারণে বেশিরভাগ মানুষ বড় ধরনের কেনাকাটা করার সুযোগ পায়। তাই এসময়গুলোতে ভালো মানের স্টিল ও কাঠের আসবাবপত্র কিনতে কোনো প্রকার সমস্যা হবে না।
আসবাবপত্র কেনার সময় নিয়ে অভিজ্ঞদের মতামত কি?
জনপ্রিয় সামাজিক পণ্য উদ্ভাবনকারী সংস্থা ‘হোম লিভিং ল্যাব’-এর প্রতিষ্ঠাতা অ্যালবার্ট লী বলেন,
“জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বাসার আসবাবপত্র কিনলে ভাল হবে। এসময় পৃথিবীজুড়ে নতুন বছরের ডিসকাউন্ট ও প্রমোশন থাকে।
ক্রেতারাও এসময় নিরিবিল ঘর গোছানোর কাজ করে ফেলে। বিক্রেতারাও তাদের স্টোরে জমা থাকা সব ফার্নিচার ক্লিয়ার করতে অল্প দামে অফার দেয়।”
একইভাবে ‘এলিগ্যান্ট সিম্পিসিটি’ ইনটেরিয়র ডিজাইন এজেন্সির কর্ণধার শেরি মন্টে বলেন,
“ঘর সাজানো লোকজন জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির পরের কয়েক সপ্তাহ এবং আগস্ট-থেকে ডিসেম্বর সময়ে বেশি জিনিস কিনে থাকেন।
কম দামে কিনতে হলে বছরের প্রথমেই ফার্নিচার শপগুলোতে চোখ রাখা উচিৎ, কারণ ব্র্যান্ড গুলো এসমসয় স্টক ক্লিয়ার করতে অফার বেশি দেয়।”
কিভাবে সারাবছর উপযুক্ত দামে আসবাবপত্র কেনা যায়?
হাতিল-এর মত রেপুটেড ফার্নিচার ব্র্যান্ড সারা বছরই সাশ্রয়ী মূল্যে আসবাবপত্র বিক্রি করে থাকে। আপনি সহজেই হাতিলের ওয়েবসাইট ভিজিট করে লিভিং, ডাইনিং, বেডরুম, কিচেন, অফিসসহ যাবতীয় সকল প্রকার ফার্নিচার কিনতে পারেন। আবার ফার্নিচারের হোম ডেলিভারীসহ মোট খরচ কত হবে তাও দেখে নিতে পারবেন।
হাতিলের প্রিমিয়াম ব্র্যান্ডের ফার্নিচার কেনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আপনি একবার কিছু কিনলে সেটা সহজে নষ্ট হবে না। তাই বারবার একই জিনিসে কেনার মত ক্লান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হবে না।
ডিসকাউন্টে আসবাবপত্র কেনার সময় কি কি খেয়াল রাখতে হবে?
যেকোনো উৎসবে বিক্রি ও চাহিদা বেশি থাকায় আসবাবপত্রের দাম কমে যায়। কিন্তু কিছু অসাধু চক্র এসময় গুণগত মান কমিয়ে কম মূল্যের জিনিস বিক্রি করে থাকে। তাই ক্রেতা হিসেবে আপনাকে কিছু জিনিস যাচাই করে নিতে হবে। এগুলো হলোঃ
- কাঠের ধরণঃ সলিড, ভিনিয়ার ও পার্টিকলসহ বিভিন্নরকম কাঠ ব্যবহার করে আসবাবপত্র বানানো হয়। তাই দেখে নিতে হবে কাঠের পুরুত্ব ঠিক আছে কিনা। বেনামী ফার্নিচার শপগুলো আগে ব্যবহৃত কাঠ রিসাইকেল করে নতুন ফার্নিচার বানায়। এ ধরনের ফার্নিচার তেমন একটা মজবুত হয় না।
- ড্রয়ার ও কেবিনেট সংখ্যাঃ দামী ফার্নিচার যদি ঠিকমত ব্যবহার করতে না পারেন কোনো লাভই হবে না। তাই কেনার আগে কয়টা ড্রয়ার বা কেবিনেট আছে তা দেখে নিন। যত বেশি ফাংশনালিটি থাকবে তত বেশিরকম কাজে ব্যবহার করতে পারেন। আবার ড্রয়ার ও কেবিনেট ঠিকমত খুলছে কিনা সেটাও দেখে নিতে ভূলবেন না।
- রঙের পরিমাণঃ সেরা মানের ফার্নিচারে রঙের স্তর হালকা ও পোলিশিং বেশি হয়। অপরদিকে খারাপ মানের ফার্নিচারে বেশি রঙ ব্যবহার করে দাগ ঢাকার চেষ্টা করা হয়। তাই ফার্নিচার বিক্রেতার কাছে কোন ধরনের রঙ ব্যবহার করা হয়েছে, আসল রঙ কিনা, রঙ সহজ উঠে যায় কিনা এসব দেখে-শুনে তারপরই বাকি প্রক্রিয়াতে যাবেনদ।
- দামের ধরনঃ অনেকে দরদাম করে ফার্নিচার কিনতে পছন্দ করেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটা বোকামীতে পরিণত হয়। কারণ বিক্রেতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি দাম লিখে রেখে মুখে কম বলে লোভ দেখানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হাতিলের মত ব্র্যান্ড আপনাকে সবসময় সঠিক দাম দেখাবে। আপনি ওয়েবসাইটে ‘লেটেস্ট’ প্রাইস দেখার পাশাপাশি ডিসকাউন্ট পাবেন কিনা সেটাও চেক করে নিতে পারবেন।
আসবাবপত্র কেনা নিয়ে কিছু প্রশ্নোত্তরঃ
কেমন আসবাবপত্র কেনা ভালো?
নিজের পছন্দ অনুযায়ী আসবাবপত্র কেনা ভালো। অনেকে বেশি টেকসই হবে বলে স্টিলের আসবাবপত্র কিনে, আবার অনেকে সৌন্দর্য বেশি হবে তাই কাঠের আসবাবপত্র কিনে। নিজের বাসার জন্য কিনতে হলে বাসার ডিজাইন কেমন, রঙ কেমন, আর্দ্রতা কেমন এসব বিবেচনা করে মানানসই ম্যাটেরিয়েলের আসবাবপত্র কেনা সেরা সিদ্ধান্ত।
আসবাবপত্রের ডিজাইন ও স্বস্তির মধ্যে কোনটা বেশি প্রয়োজনীয়?
চেয়ার, টেবিল, খাট ও সোফার মত আসবাবপত্র কিনতে হলে অবশ্যই দৈহিক স্বস্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে কাঠের মান, ফোম, পোলিশিং ইত্যাদি কেমন সেটা যাচাই করতে হবে। অপরদিকে ওয়ারড্রোব, আলমারি, বুকশেলফ ইত্যাদি কিনতে হলে ঘরের সাথে কেমন মানানসই হচ্ছে সেটা দেখলেই হয়। অযথা জায়গা নষ্ট করে চলাফেরার ব্যাঘাত করে এরকম আসবাবপত্র কেনা যাবে না।
আসবাবপত্রের ওয়ারেন্টি বলতে কি বোঝায়?
গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে প্রত্যেকটি শপ আসবাবপত্র বিক্রির কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে। যেমনঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো সমস্যা হলে বিনা মূল্যে মেরামত করা অথবা সম্পূর্ণ পরিবর্তন করার ব্যবস্থা থাকে। সাধারণত ওয়ারেন্টি পিরিয়ড ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত হয়ে থাকে। হাতিলের মত ব্র্যান্ডেড শপগুলো তাদের জিনিসপত্র টেকসই হবার জন্য লম্বা সময়ের ওয়ারেন্টি দিতে পারে।