ডিভানের গল্প

ছোট্ট সাফা পড়ে ক্লাস টুতে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই স্কুল। স্কুল শেষে বাসা। এরপর সারা দিনই কাটে বাসায়। ড্রয়িংরুমের সোফাটা সাফার সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। এখানেই ওর প্রায় সারা দিন কাটে। টিভির স্ক্রিনের কার্টুনের সাথেই দিন কাটায় সাফা। মা অবশ্য বিকেল হলে টিভি বন্ধ করে সাফার হাতে গল্পের বই দেয়। সোফায় হেলান দিয়ে বই পড়তে পড়তে প্রায়ই ঘুমিয়ে যায় সাফা। সন্ধ্যায় স্কুলের পড়ার পর রাতের খাবার শেষে আবার কার্টুন। টিভি দেখতে দেখতে সোফাতেই ঘুম। প্রতিদিনই বাবা বাসায় ফিরে সাফাকে সোফায় ঘুমন্ত অবস্থায় পায়। অগত্যা কোলে করে বিছানায় নিয়ে যাওয়া। 

একদিন স্কুল থেকে বাসা ফিরে সাফা তো অবাক। পছন্দের সোফাটা জায়গামতো নেই। সেখানে নতুন এক আসবাব। সে আগে কখনো এমন আসবাব দেখেনি। আসবাবটা দেখতে কিছুটা সোফার মতোই। আবার বিছানার মতোও কিছুটা। দেখতেও বেশ স্মার্ট ও সুন্দর। আরামদায়কও অনেক। কিন্তু এটা আসলে কী? বাবা অফিসে যাওয়ার আগেই বাবার গলায় ঝুলে নতুন আসবাব সম্পর্কে জানতে চাইল সাফা।

সোফায় ঘুমিয়ে পড়া সাফার প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল বলে নতুন এই আসবাব কিনেছে বাবা। নতুন আসবাবে ঘুমিয়ে পড়লেও ঘুমটা বেশ আরামের হবে। সোফার মতো দেখতে এই আসবাবের নাম ‘ডিভান’

 

ডিভানের ক খ গ

সোফা ও বিছানা–এই দুই আসবাবের ভাই বলা যায় ডিভানকে। দুই আসবাবেরই সুবিধা পাওয়া যায় এক ডিভানে। সোফা ও ডিভানের মধ্যে পার্থক্যটা অনেকেরই অজানা। সোফা ও ডিভানের মধ্যে খুব একটা পার্থক্য আসলে নেই। অল্প পার্থক্যটাই বলি।

সোফা সাধারণত ঘরের যেকোনো জায়গায় রাখা গেলেও ডিভান রাখা হয় দেয়ালের পাশে। এর কারণ, সোফার সম্পূর্ণ অংশে হেলান দেওয়ার জায়গা থাকলেও ডিভানে তা থাকে না। বাজারে এমন ডিভানও পাওয়া যায় যার দুই পাশই ফাঁকা, হেলান দেওয়ার কোনো জায়গা নেই। তবে বেশির ভাগ ডিভানেরই কিছু অংশে হেলান দেওয়ার জায়গা থাকে।

ক্লান্তি দূর করতে অল্প সময়ের বিশ্রামের জন্য শোবার ঘরের ডিভানে গা হেলানো যায় খুব সহজেই

সোফার বিকল্প ডিভান হলেও খাটের বিকল্প কিন্তু ডিভান না। সোফা বসার জন্য আর খাট শোবার জন্য। তবে ডিভান মূলত বসার জন্য হলেও এতে শুয়ে থাকাও যায়। শোয়াটা একটা অপশনমাত্র। খাট ডাবল কিংবা সিঙ্গেল হলেও বাজারে ডিভানের ডাবল কোনো সংস্করণ নেই। তবে স্মার্ট ফার্নিচারে আছে কিছু ভিন্নতা।

ডিভানের ব্যবহার এখন প্রায় সব বাসাতেই। সোফার মতো ডিভানের ব্যবহার শুধু বসার ঘরে হয়, ব্যাপারটা এমন না। শোবার ঘরেও হরহামেশাই ব্যবহার হয় ডিভান। ক্লান্তি দূর করতে অল্প সময়ের বিশ্রামের জন্য শোবার ঘরের ডিভানে গা হেলানো যায় খুব সহজেই। শোবার ঘরে টিভি দেখতেও বেশ আরাম দেবে ডিভান। শোবার জন্য যদি ডিভান ব্যবহার হয় নিয়মিত, তবে ডিভানে কুশন রাখাটা জরুরি। কুশনে মাথা এলিয়ে দিলেই ডিভান অনেকটাই খাটের কাজ করবে। তা ছাড়া ডিভানে বসলেও কুশনে হেলান দেওয়াটা বাড়তি আরাম যোগ করবে।

বসার ঘরে সুন্দর কোনো ডিভান আপনার স্মার্ট রুচির বিকাশ ঘটায়। বাড়ির পর্দা কিংবা দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে ডিভানের রং বাছাইটা প্রয়োজনীয়। ডিভান ঘরের কোণে কিংবা দেয়ালের সাথে লাগিয়ে রাখলে আপনার বাড়ির অন্দরসজ্জা আলাদা মাত্রা পাবে।

 

হাতিলের যত ডিভান

হাতিলের ডিভান কালেকশন বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। সেরা কাঠের ব্যবহার ও দারুণ নকশার ডিভানগুলোর প্রত্যেকটি উপাদান উচ্চগুণসম্পন্ন। তাই হাতিলের ডিভানে ভরসা করা যায় খুব সহজেই। বিভিন্ন ধরনের ডিভান একসঙ্গে পাওয়া সম্ভব হাতিলের শোরুম ও ওয়েবসাইটে। হাতিলের ডিভান সেকশনে চোখ বোলালে আপনি বনে যেতে পারেন ডিভান এক্সপার্ট। হাতিলের এত এত ডিভান থেকে কয়েকটি ডিভানের খুঁটিনাটি জেনে নিই চলুন।

প্যারাডাইস-১০৩

প্যারাডাইস-১০৩ : উচ্চতায় ৬১৫ মিলিমিটারের এই ডিভান হতে পারে পড়ার কিংবা শোবার ঘরে ব্যবহারের জন্য সেরা পছন্দ। পেছনে হেলান দেওয়ার জায়গা নেই বলে দেয়ালের সামনে এই ডিভান দারুণভাবে মানাবে। তবে সে ক্ষেত্রে দেয়ালের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিনতে হবে এই ডিভান। দুই পাশের রাজকীয় ও আরামদায়ক দুই হাতল বেশ আরাম দেবে। ১৩৮০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৮০ মিলিমিটার প্রস্থের ডিভানটিতে খুব সহজেই দুজন বসা যাবে। ভিন্ন চারটি রং ও নকশায় পাওয়া যাবে এই ডিভান। রং ও নকশাভেদে ডিভানটির দাম ২৩৮০০ থেকে ২৫৮০০ টাকা।

ক্লাইড-১০৮ : স্মার্ট ও রুচিশীল নকশার দারুণ উদাহরণ এই ডিভানটি। ১৮৪৫ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৮১০ মিলিমিটার প্রস্থের ‘ক্লাইড-১০৮’ লম্বার ও চওড়া দুই দিক থেকেই বেশ বড়। অনেকটা জায়গা নিয়ে আরাম করে বসা যাবে। ডিভানের মাঝামাঝি অংশে কিছু জায়গাজুড়ে আছে হেলান দেওয়ার ব্যবস্থা। কুশনের ব্যবহারে এই ডিভান আরও দারুণ লাগবে। তাই ডিভানটির সঙ্গে আছে কুশন। এই ডিভানেও আছে চারটি ভিন্ন নকশা ও রং বাছাইয়ের সুযোগ। ২৬৯০০ থেকে ২৮৪৯৫ টাকা খরচ করতে হবে দারুণ এই ডিভানটি কিনতে।

সেজিটেরিয়াস-১১১

সেজিটেরিয়াস-১১১ : অন্য ডিভানগুলোর তুলনায় এটি অনেকটাই ভিন্ন। এই ডিভানকে স্মার্টফিট সিরিজের ফার্নিচারও বলা যায়। দৈর্ঘ্যে ১৯৮০ মিলিমিটার ও প্রস্থে ৮১০ মিলিমিটার বিশাল এই ডিভানকে আপনি আপনার ইচ্ছেমতো দিতে পারবেন অনেক রকম চেহারা। পুরোপুরি সোফা থেকে শুরু করে একদম খাটও বানিয়ে ফেলা সম্ভব এই ডিভানকে। এর ভেতরে অল্পবিস্তর জায়গায় পাওয়া যাবে। সেখানে প্রয়োজনমতো রাখা যাবে ডিভানের বিভিন্ন এলিমেন্ট। এই ডিভানের সঙ্গেও মিলবে কুশন। একাধিক সুবিধাসমৃদ্ধ ডিভানটি পাঁচটি রং ও নকশায় পাওয়া যাবে। দাম পড়বে ৫১৮০০ থেকে ৫৫১০০ টাকা।

ফ্লেমেনকো-১০৫ : বেশ ক্ল্যাসিক ডিজাইনের এক ডিভান এটি। কিছুটা পার্কের কাঠের বেঞ্চগুলোর মতো নকশার এই ডিভান উচ্চতায় ৬৬০ মিলিমিটার। সাধারণ ডিভানের নকশার তুলনায় এটি একদমই অন্য রকমের। হাতলের একপাশে কুশন রাখার সুযোগ থাকলেও অন্যপাশে কাঠ। পেছনের একটি অংশে আছে হেলান দেওয়ার জায়গা। ডিভানটি নকশা অনেকটি কাঠ বা বেত বেঁধে তৈরি করা সোফা বা চেয়ারের মতো। ভিন্নধর্মী নকশার এই ডিভান আপনাকে দেবে স্মার্টনেস ও ক্ল্যাসিক্যাল স্বাদ। ডিভানটি কিনতে হলে আপনাকে গুনতে হবে ৩২০০০ থেকে ৩৩৫০০ টাকা। তিনটি ভিন্ন নকশা ও রং বাছাইয়ের সুযোগের পাশাপাশি ডিভানের সঙ্গে পাবেন কুশন।

শোবার জন্য এই ডিভান ব্যবহার করলে হাঁটুর কাছে পাওয়া যাবে টেবিলের মতো কিছুটা জায়গা। সেখানে ল্যাপটপ বা খাতা-কলম রেখে করা যাবে যেকোনো কাজ।

লুইজিয়ানা-১০৯ : এই ডিভানটি আক্ষরিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা রাজ্য না হলেও লুইজিয়ানা রাজ্যের মতোই মনোমুগ্ধকর এর নকশা। এই ডিভানে নকশা বা কোনো কিছু পরিবর্তন না করেই এটি ব্যবহার করা যাবে অনেক রকমভাবে। বসার ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য দুই পাশে রয়েছে বেশ মোটা দুটি হাতল। সেখানে ঘড়ি কিংবা মোবাইল রাখা যাবে খুব সহজেই। একপাশের হাতলে আছে বসার জন্য আরও কিছুটা জায়গা। শোবার জন্য এই ডিভান ব্যবহার করলে মাথার পেছনে পাওয়া যাবে অনেকটা জায়গা, যেখানে রাখা যাবে ছোটখাটো অনেক কিছু। আর হাঁটুর কাছে পাওয়া যাবে টেবিলের মতো কিছুটা জায়গা। সেখানে ল্যাপটপ বা খাতা-কলম রেখে করা যাবে যেকোনো কাজ। এই ডিভানটিও পাওয়া যাবে চারটি ভিন্ন রং ও নকশায়। মূল্য ৪৮৩০০ থেকে ৪৯৮৩০ টাকা।

এই ডিভানগুলোর বাইরেও হাতিলের আছে আরও বেশ কিছু ডিভান। সেসব ডিভানের নকশা ও সুবিধাগুলোও দারুণ ও ভিন্ন।

শুরুর গল্পে ফিরি। বাবার আনা ছোটখাটো সুন্দর ডিভানটাই এখন সাফার বিছানা হয়ে গেছে। রাত ছাড়া অন্যান্য সময় সেখানেই ঘুমায় সে। নতুন ডিভানে মা জায়গা না পেয়ে নিজের রুমে নতুন ডিভানের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছে। শোবার ঘরেও ডিভানের ব্যবস্থা হয়ে গেলে খাটের কী হবে, সেটা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন সাফার বাবা। দেখা যাক কী হয়!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।