Creating the perfect office lounge area Creating the perfect office lounge area

অফিস লাউঞ্জ সাজাবেন যেভাবে

আধুনিক যুগ আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছে সত্যি, তবে বৈপরীত্যও যে নেই, তা নয়। এই যেমন, সময়ের সাথে সভ্যতা যত আধুনিক হয়েছে, তত বেড়েছে কর্মজীবী মানুষের কাজের চাপ। সহস্রাধিক ফাইলের পাহাড় এবং ফ্যানের পাখার ঘর্ঘর শব্দের মাঝে চুপচাপ নয়টা-ছয়টা অফিস করে বেরিয়ে যাওয়া, এই দিন পাল্টে গেছে অনেক আগেই। ইন্টারনেটের যুগে কাজ অতিক্রম করেছে ঘড়ির কাঁটার শিকল। এখন প্রতিটি সেকেন্ডই গুরুত্বপূর্ণ। অফিস এখন প্রায় স্কাউট ক্যাম্প, সবাইকে থাকতে হয় সদা প্রস্তুত। 

কাজের এই বদলে যাওয়া কর্মজীবী মানুষের ওপর চাপ সৃষ্টি করাই স্বাভাবিক। কর্মজীবনে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা বেড়েছে, কিন্তু মানুষ তো আর সায়েন্স ফিকশনের রোবট হয়ে যায়নি। মানবিক সীমাবদ্ধতা বলেও একটা ব্যাপার তো আছে!

তবে সমস্যার সম্মুখীন হলে মানুষ নিজেই তার সমাধান বের করে আনে নানাভাবে। এখন যেমন অফিসে কাজের চাপে দুদণ্ড শান্তি হয়ে দেখা দিচ্ছে অফিস লাউঞ্জ। টানা কাজের মাঝে ক্লান্তি দূর করা কিংবা সতীর্থদের সাথে আড্ডা মারা, এমনকি হাওয়া বদলের জন্য কেবিনের বাইরে বেরিয়ে অফিস লাউঞ্জে বসে কিছু সময়ের জন্য কাজ করাটাও বড় বড় অফিসের কর্মচারীদের মধ্যে হয়ে উঠছে তুমুল জনপ্রিয়। 

শুধু কর্মচারীরা নয়। অফিস কর্তৃপক্ষগুলোর কাছেও দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে অফিস লাউঞ্জ। গবেষণায় দেখা গেছে, অতিরিক্ত চাপের মাঝে কাজ করলে মানুষের কর্মক্ষমতা কমে আসে অতি দ্রুত। তাই অফিসের মাঝে ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরি করতে লাউঞ্জগুলো ঢেলে সাজানোর দিকে মন দিয়েছে অফিস কর্তৃপক্ষগুলো। কীভাবে অফিসের মাঝেই তৈরি করা যেতে পারে একটি দুর্দান্ত লাউঞ্জ, সেই উপায়গুলো দেখে নিন : 

যা যা থাকতেই হবে

একটি আদর্শ অফিস লাউঞ্জ কেমন হওয়া উচিত, একবাক্যে সেই ধারণা পেতে চাইলে বলা যেতে পারে, অফিস লাউঞ্জ হতে হবে বাসার বসার ঘরের সদৃশ। বসার ঘর যেমন সম্ভাব্য অতিথিদের জন্য সাজানো-গোছানো থাকে, আবার প্রয়োজনে ঘরের আরামও দিতে পারেঅফিস লাউঞ্জ হওয়া চাই ঠিক তাই। লাউঞ্জে অফিশিয়াল ফর্মালিটি মেনে চলেও যাতে অফিসে কাজ করা মানুষেরা নিজেদের ক্লান্তি দূর করতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। 

তাই আরামদায়ক তবে অফিস উপযোগী আসবাব, ভালো স্পিডের ইন্টারনেট সংযোগ, হালকা খাবার কিংবা স্ন্যাকস, পানির ফিল্টার, কফি এবং চায়ের ব্যবস্থা, এগুলো একটি ভালো মানের অফিস লাউঞ্জে থাকা চাই। 

Sofa Durham-263ক্লান্তি দূর করতে লাউঞ্জ ব্যবহার করেন কর্মচারীরা 

 

ফার্নিচারে প্রাধান্য পাবে স্বাচ্ছন্দ্য 

অফিস লাউঞ্জের মূল উদ্দেশ্যই কর্মচারীদের ক্লান্তি দূর করা। লাউঞ্জে যদি কর্মচারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে না থাকতে পারেন, তবে লাউঞ্জ বানানোর মূল উদ্দেশ্যটাই ভেস্তে যাবে। লাউঞ্জের প্রতিটি আসবাবেই তাই কর্মচারীদের আরামকে প্রাধান্য দিতে হবে। 

অফিস লাউঞ্জের চেয়ারগুলো যেন আর্গোনমিক হয় সেদিকে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। আবার প্রয়োজনমতো সোফার ব্যবহারও করা যেতে পারে। অফিস লাউঞ্জে এক বা একাধিক কফি টেবিল ব্যবহার করলে তা একই সাথে যেমন নানা কিছু রাখার সুবিধা দেবে, তেমনই আবার কেউ চাইলে লাউঞ্জের অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে কিছু সময়ের জন্য কাজও করতে পারবে। 

এ রকম সোফা সেট ব্যবহার করা যেতে পারে অফিস লাউঞ্জে 

 

সজ্জায় গুরুত্ব পাবে  

মানুষের মনস্তত্ত্বের সাথে রঙের গভীর সম্পর্ক। চোখের সামনে যে রংটি মানুষ দেখছে, সেটি তার মেজাজ এবং বর্তমান মানসিকতার ওপর বড় ভূমিকা রাখে। তাই লাউঞ্জে একটি উদ্দীপনাময় পরিবেশ সৃষ্টি করতে রঙের ব্যবহার করা যেতে পারে নিপুণভাবে। 

অফিস লাউঞ্জে গাঢ় কিংবা বিষন্নতা নির্দেশ করে এমন রং ব্যবহার না করাই ভালো। বরং এমন রং ব্যবহার করা যায়, যা সক্রিয়তা কিংবা কর্মচঞ্চলতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করবে। যেমন, অনেকেই অফিস লাউঞ্জে কালো এবং কমলা, এ দুটি রঙের মিশ্রণ ব্যবহার করে থাকেন। 

বলা হয়ে থাকে, লাল নাকি ইতিবাচকতার রং। তাই লাউঞ্জে বিভিন্ন শেডের লাল রং ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপি কিংবা হলুদও ব্যবহার করেন অনেকেই। রঙের পাশাপাশি বিভিন্ন দেয়ালচিত্র কিংবা নানা ধরনের ডুডল ব্যবহার করেও লাউঞ্জে চাপহীন পরিবেশ নিশ্চিত করা যেতে পারে। 

 

সবুজ এবং খোলামেলা পরিবেশ

অফিসের সবচেয়ে খোলামেলা জায়গাটিকে লাউঞ্জ হিসেবে বেছে নিতে পারেন। এতে বদ্ধ অফিস পরিবেশ থেকে কিছুটা মুক্তি পাবে কর্মচারীরা। এ ছাড়া লাউঞ্জে সবুজের ব্যবহার কর্মচারীদের চাপমুক্ত রাখতে সাহায্য করবে। লাউঞ্জ খোলামেলা না রাখা সম্ভব না হলেও নানা ধরনের ইনডোর গাছগাছালি ব্যবহার করা যেতে পারে। 

 

সংযোগে প্রাধান্য 

লাউঞ্জে ক্লান্তি কমাতেই আসবে কর্মচারীরা। যেই ক্লান্তি কমানোর অন্যতম উপায় হয়ে উঠতে পারে সহকর্মীদের সাথে গল্প-আড্ডা। সুতরাং লাউঞ্জে বসে যাতে তারা এই সময়টুকু দারুণভাবে কাটাতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। এমন কোনো ফার্নিচার কিংবা অফিস স্পেস ব্যবহার করা যাবে না, যা সহকর্মীদের মধ্যে সংযোগের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

বরং নানা ধরনের আইডিয়া কাজে লাগিয়ে সহকর্মীদের আরো সংযুক্ত করার নানা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন, কখনো কখনো লাউঞ্জের আড্ডার মাঝেই করে ফেলা যেতে পারে গুরুত্বপূর্ণ কোনো মিটিং। আবার, লাউঞ্জে রাখা যেতে পারে নানা ধরনের ইনডোর গেমের ব্যবস্থা, যা খেলতে গিয়েই হয়তো দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে কলিগদের মাঝে। 

একটি দারুণ অফিস লাউঞ্জ অফিসের কর্মচারীদের মাঝে উৎসাহ এবং কর্মোদ্দীপনা বাড়িয়ে দিতে পারে শতগুণে। তাই অফিস সাজানোর সময় একটা দারুণ লাউঞ্জ গুছিয়ে নিতে ভুলে যাবেন না যেন!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।