সারাবিশ্বের মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র এবং প্রিয় এক মাস হচ্ছে রমজান। প্রতি বছর একবার ঘুরে আসা এই মাস ঘিরে থাকে ইবাদতের নানা পরিকল্পনা আর আয়োজন। এক মাস সিয়াম সাধনার জন্য আগে থেকেই সকল ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি নানান প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। সেই প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রমজান মাসে ঘর সাজানোর কিছু টিপস বা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এই লেখায়।
রমজান মাসে ঘর সাজানোর টিপস
১/ নামাজ ঘর তৈরি তো?
রমজান মাসে ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ এবং আনুষঙ্গিক ইবাদাতে দিনরাত মশগুল থাকেন। পরিবারের বড়দের নামাজ আদায় করা দেখে এই সময়টায় ছোটরাও উৎসাহি হয় ইবাদত পালনে। বাসায় নামাজ আদায়ের জন্য তাই আলাদা কক্ষ বা স্থানের প্রয়োজন হয় এই মাসে। সেই ভাবনার বাস্তবায়ন করে নামাজের ঘরে শুরুতে কার্পেট বিছিয়ে দিতে হবে।
তছবি, কোরআন শরীফ, হাদিস সহ ইবাদতের কাজে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক সামগ্রী রাখার জন্য নামাজের ঘরে একটি বুক সেলফ বা ওপেন সেলফ রাখতে পারেন।
নামাজের ঘরে সূর্যের আলো ঢুকার ব্যবস্থা রাখা উচিত। কৃত্রিম আলোর চেয়ে প্রাকৃতিক আলোতে নামাজের প্রতি আগ্রহও বাড়বে।
তাছাড়া, নামাজের ঘরে গাছও লাগাতে পারেন। গাছ লাগাতে ব্যবহার করতে পারেন টব কিংবা পট। গাছ আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেবে, দূর করবে ঘরের গুমোট ভাব।
২/ ডাইনিং রুমের সাতকাহন
রোজার সময় সাহরি এবং ইফতারে সকলে একসাথে বসেই খেতে পছন্দ করে থাকি আমরা। বছরের অন্যান্য সময় পরিবারের সদস্যদের এক টেবিলে পাওয়া না গেলেও রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারের সময়ে সকলে এক টেবিল বসেই সাহরি ও ইফতার খেয়ে থাকেন। এতে করে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় তেমনি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও ইতিবাচক প্রভাব ফলে।
সাহরি ও ইফতার একসাথে বসে খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাইনিং টেবিল এর বিকল্প নেই। তাই রমজান মাস সামনে রেখে আপনার বর্তমান ডাইনিং টেবিল এর অবস্থা যাচাই করুন। সকল সদস্য একসাথে বসে খেতে পারার মতো ডাইনিং টেবিল না থাকলে বদলে ফেলুন সেটি৷
পরিবারের সদস্য সংখ্যা বিবেচনায় নিয়ে এবং সকলের মতামতের ভিত্তিতে ডাইনিং টেবিল নির্বাচন করা যেতে পারে। একইসাথে টেকসই এবং মজবুত হার্ডওয়্যার ফিটিং সম্পন্ন ডাইনিং টেবিল দেখে কেনার ব্যাপারে আগানো উচিত।
ডাইনিং রুমের আরেক প্রয়োজনীয় ফার্ণিচার হচ্ছে শোকেস। রোজার দিনগুলোতে ইফতার ও সাহরিতে প্রচুর পেয়ালা বাসন সহ ডাইনিং সেটের প্রয়োজন হয়। হাতের কাছে একটি শোকেস থাকলে সহজেই প্রয়োজনীয় ডাইনিং সেটগুলো যখন তখন নিতে পারবেন আপনি।
শোকেস ছাড়া মিনি কেবিনেটও অনেকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। শোকেসের মতোই রমজানের প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারেন এটিকে।
৩/ লিভিং রুমের সাজসজ্জা
রোজায় ইফতার বা সাহরিতে অনেকেই অতিথিদের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। সেই ভাবনা থেকে লিভিং রুমকে সাজাতে পারেন নতুন করে। তাছাড়া রোজার পরপরই ঈদ আসবে। তাই সবকিছু বিবেচনায় এনে লিভিং রুমের ফার্ণিচারসহ আনুষঙ্গিক উপাদান সমূহের কন্ডিশন যাচাই করে নিতে পারেন এই সময়টায়। এক্ষেত্রে পুরোনো ফার্ণিচার বদলে ফেলে নিয়ে আসতে পারেন নতুন ফার্ণিচার। বর্তমান সোফা বেশি পুরোনো হয়ে থাকলে নতুন এবং আধুনিক সোফা কিনে নিতে পারেন।
লিভিং রুমের দেয়াল জুড়ে লাগাতে পারেন বিভিন্ন সূরা, দোয়া বা হাদিসের বাণী সম্বলিত শো কার্ড। নামাজের ঘরের মতো লিভিং রুমেও একটি ওপেন সেলফ রাখতে পারেন যেখানে ইসলামিক বই রাখা যেতে পারে।
লিভিং রুমে জানালার পাশে একটি রকিং চেয়ার রাখতে পারেন। এই চেয়ারে বসে হাদিস কিংবা ইসলামিক বই পড়তে পারেন। এই চেয়ার অবশ্য যে কোনো রুমেই শোভা পেতে পারে।
৪/ ঘর থাকুক পরিপাটি
রমজান মাসের পুরোটা সময় বাসা রাখতে হবে পরিষ্কার এবং পরিচ্ছন্ন। পবিত্র এই মাসে ঘরবাড়ি নোংরা বা অগোছালো রাখা উচিত হবে না। ঘর অগোছালো থাকাটা মন এবং স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে৷
বাসার প্রতিটি রুম বিশেষ করে নামাজের ঘরে কার্পেট থাকলে সেই কার্পেট নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। কারণ কার্পেটে ময়লা জমলে সেটি দৃষ্টিকটু এবং নোংরা দেখায়। কার্পেট পরিষ্কারের জন্য ব্রাশ ব্যবহার করা যেতে পারে। নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে কার্পেট পরিষ্কার করলে ধুলো-ময়লা জমার সুযোগ পাবে না।
ফার্ণিচারে যেসব ধুলোবালি জমে সেগুলো অনেকেই ভেজা কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করে থাকেন, যা একদমই উচিত নয়। কারণ ভেজা কাপড় দিয়ে ফার্ণিচার পরিষ্কার করতে গেলে সেগুলোর রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এমন কিছু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে যাতে রঙের কোনো ক্ষতি না হয়। রং উঠে গেলে বার্ণিশ করে নিতে পারেন ফার্ণিচার।
শোপিস কিংবা কাচের জিনিসপত্র মোছার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের লিক্যুইড পাওয়া যায়। এগুলো দিয়ে মুছে নিলে শোপিস অনেক দিন ধরে পরিষ্কার থাকে। ঘর সাজানোর জন্য যেসব কৃত্রিম ফুল বা ফুলের গাছ রাখা হয়, সেগুলোতেও জমতে পারে ধুলো-ময়লা। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন এগুলো পরিষ্কার করতে হবে। জানালার গ্রিল শুকনো ন্যাপকিন দিয়ে মুছে ফেলুন। এগুলো অবশ্য শুধু রোজা কেন্দ্রিক পরামর্শ নয়, সারাবছরই করতে হয় এসব। তবে রোজায় পরিচ্ছন্নতা এবং পবিত্রতার স্বার্থে এসব জরুরি ভিত্তিতে করা প্রয়োজন।
ঘরে হালকা সুগন্ধি বা আতর ছড়িয়ে দিতে পারেন। ইবাদতের সুবিধার্থে ডিম লাইটের ব্যবস্থা রাখতে পারেন নামাজের ঘরসহ অন্যান্য সকল রুমে।