বেড যেমন হওয়া চাই বেড যেমন হওয়া চাই

ফেং শুই স্টাইলে সাজাতে পারেন আপনার বেডরুমটিও!

এই লেখার শিরোনামে ফেং শুই শব্দ দুইটি দেখে নিশ্চয়ই মনে প্রশ্ন জাগছে, এগুলো আবার কোন দেশি শব্দ? এরা এখানে কেন? অনেকে অবশ্য শব্দ দুইটির সাথে পরিচিত। ফেং শুই মূলত চীনা শব্দ। এটি এমন এক ধরণের অনুশীলন যার মাধ্যমে প্রকৃতির সাথে মেলবন্ধন বাড়িয়ে নির্দিষ্ট স্থানে একটি আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব। ফেং শুই শোপিস বা ঘর সাজানো জিনিসের মাধ্যমে বাড়ির মধ্যে পজিটিভ এনার্জি ভরিয়ে রাখতে সাহায্য করে। চীনের মানুষ বিশ্বাস করে, ফেং শুইয়ের টোটকা ভাগ্য বদলে দিতে পারে। এজন্য ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে তারা ফেং শুই রীতি মেনে চলে। এই ফেং শুইয়ের আলোকে বেডরুম সাজানোর কিছু পরামর্শ দেওয়া যাক। 

যা করবেন

১. বিছানা সঠিক স্থানে আছে তো?

ফেং শুই রীতিতে বিছানা সঠিক স্থানে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বিছানা একটি কমান্ডিং অবস্থানে আছে কিনা নিশ্চিত করুন। এর অর্থ এই যে আপনি যখন আপনার বিছানায় থাকবেন, আপনি আপনার দরজা দেখতে পারবেন এমন স্থান নির্ধারণ করা কিন্তু দরজা বিছানায় থেকেই খুলতে পারবেন এমন দূরত্বে না রাখা। নিশ্চিত করুন যে এটি আপনার দরজা থেকে যতটা সম্ভব দূরে অবস্থিত, দরজা সরাসরি আপনার বিছানা যেন না হয়। এবং একটি শক্ত, সমর্থনকারী দেয়ালের বিপরীতে হেডবোর্ড  (হেডবোর্ড হল বিছানার এক প্রান্তে সংযুক্ত একটি উল্লম্ব প্যানেল) আছে এমন বিছানা রাখুন। 

hatil bed

২. ঘর সাজান উইন্ড চাইম দিয়ে

ফেং শুই রীতি মেনে বেডরুমে উইন্ড চাইম লাগাতে পারেন। ফেং শুইয়ে উইন্ড চাইমের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বাজারে এখন বিভিন্ন ধরণেরই উইন্ড চাইম কিনতে পাওয়া যায়। পিতল, মাটি, কাঠ কিংবা কাপড়ের তৈরি এসব উইন্ড চাইম পছন্দমতো বেছে নিতে পারেন ঘর সাজানোর জন্য। বাতাসের ধাক্কায় উইন্ড চাইমে যত বেশি শব্দ উৎপন্ন হবে, এটি ঘরের মধ্যে তত পজিটিভ শক্তির সঞ্চার ঘটাবে। ফেং শুই রীতি পালনকারীরা বিশ্বাস করেন, এতে তাদের আর্থিক অবস্থারও উন্নতি হবে।

৩. জোড়ায় গুরুত্ব দিন

ফেং শুইয়ে বিশ্বাস করা হয়, কোনো জিনিস জোড়ায় জোড়ায় থাকা মঙ্গল। যদি সম্ভব হয়, ছোটখাটো আসবাবপত্র বা অন্যান্য বস্তু রাখার সময় জোড়া ব্যবহার করুন। উদাহরণস্বরূপ, বিছানার দুই পাশে দুটি নাইটস্ট্যান্ড ব্যবহার করুন। বিছানায় বালিশ রাখুন দুইটি। আবার দুইটি খাট বা দুইটি ড্রেসিং টেবিল রাখতে যাবেন না যেন! এতে হয়ত হিতে বিপরীত ঘটতে পারে। জোড়া মেলাতে গিয়ে শেষে ফার্নিচারের স্তূপ হয়ে উঠবে আপনার রুম। 

৪. অপ্রয়োজনে দরজা কিংবা ফার্নিচার ড্রয়ার খোলা নয়

ফেং শুই বেডরুমের রীতিতে অপ্রয়োজনে দরজা কিংবা ওয়ারড্রোব বা সাইড টেবিলের ড্রয়ার খোলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। বাইরে থেকে এসে যদি কোনো ফার্নিচারের এমন ড্রয়ার খোলা দেখেন তাহলে তৎক্ষনাৎই তা বন্ধ করে দিন৷ বিশেষ করে ঘুমানোর পূর্বে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখুন। চীনারা মনে করেন, এতে করে দ্রুত ঘুম আসবে এবং ঘুমটাও আরামদায়ক হবে।  

অপ্রয়োজনে দরজা কিংবা ফার্ণিচার ড্রয়ার খোলা নয়

৫. দেয়ালের রং নিয়ে হেলাফেলা নয়

ফেং শুই বেডরুম শান্ত একটি আবহ আনতে পারে এমন রং দিয়ে রাঙানো উচিত। আসবাবপত্র, বিছানাপত্র এবং আনুষাঙ্গিক জিনিসগুলোতে ব্যবহার করুন নিরপেক্ষ রং। ঐতিহ্যগতভাবো প্রাথমিক রং, যেমন লাল এবং নীল, সাধারণত খুব ভালো কোনো পছন্দ নয়।

আপনি বিভিন্ন উপাদানের প্রতিনিধিত্ব করে এমন রংগুলোকে একত্রিত করতে পারেন, তবে নিশ্চিত করুন যে সেগুলো খুব উজ্জ্বল বা অপ্রতিরোধ্য নয়।

৬. আলো কেমন হওয়া উচিত? 

হালকা আলো-ই ভালো ফেং শুই বেডরুমে। ফেং শুই বেডরুমের জন্য টেবিল এবং ডেস্ক ল্যাম্প থেকে নির্গত আলোই আদর্শ। এছাড়া, জানালা থেকে যতটা সম্ভব প্রাকৃতিক আলো যুক্ত করার চেষ্টা করুন। এড়িয়ে যান উজ্জ্বল আলোর ব্যবহার। চাইলে মরিচ আলোও ব্যবহার করতে পারেন। এটি যেমন ঘরের সৌন্দর্য বাড়াবে, তেমনি ঘরের পরিবেশেও হালকা এবং আরামদায়ক আবহ তৈরি করে দেবে। 

৭. আর্টওয়ার্কের কথা কি ভুলে যাচ্ছেন? 

একটা আর্টওয়ার্ক ব্যক্তিগত জীবন বা একজন কীভাবে জীবন অতিবাহিত করে তারই প্রতিচ্ছবি। ফেং শুইয়ে রুমে আর্টওয়ার্ক ঝুলিয়ে রাখার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে উত্তম উপায় হচ্ছে, আপনার পরিবারের ছবি দিয়ে আর্টওয়ার্ক বানিয়ে দেওয়ালে ঝুলিয়ে দেওয়া। এছাড়া, প্রাকৃতিক বা ধর্মীয় দৃশ্যও ব্যবহার হতে পারে আর্টওয়ার্ক হিসেবে। 

আর্টওয়ার্কের কথা কি ভুলে যাচ্ছেন?

যা করবেন না

১. বিছানার নিচের অংশকে কোনো জিনিস জমিয়ে রাখার জন্য স্টোর বানানো যাবে না। স্থানটি যথাসম্ভব ফাঁকা রাখতে হবে। 

 

২. বিছানার অবস্থান এমন স্থানে রাখুন যেখান থেকে আয়নার মুখোমুখি হতে হবে না বা আয়না থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে এসে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। 

 

৩. ঘর যদি অগোছালো থাকে তাহলে কোনো কাজেই মন বসবে না। তাই ঘর অগোছালো রাখা যাবে না। সকল জিনিস নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন।

 

৪. ফেং শুই বেডরুমে পানি বা পানি জাতীয় কোনো বস্তু না রাখাই ভালো। এমনকি পানির কোনো শিল্পকর্ম যদি দেয়ালে ঝুলানো থাকে, সেটিও সরিয়ে ফেলুন। 

 

৫. গাছপালা একটি বেডরুমে অত্যধিক শক্তি প্রবাহিত করে। অতিরিক্ত শক্তি ফেং শুই বেডরুমের জন্য মঙ্গলজনক নয়। তাই বেডরুমে গাছ রাখা যাবে না।  

 

৬. বেডরুমে বই রাখতে পারেন তবে অতিরিক্ত নয়। অতিরিক্ত বই রুমকে স্টোরহাউসে পরিণত করে দেয়। ফলে একটি দমবন্ধ হওয়া পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। 

 

৭. শোবার ঘরে টিভি, ল্যাপটপ এবং স্মার্টফোন সবই আপনার ঘুমকে ব্যাহত করতে পারে। এই ধরণের উপাদানগুলো ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক শক্তি নির্গত করে। এমনকি যখন এই পণ্যগুলো ব্যবহার করা হয় না, তখনও এই শক্তি নির্গত করে। তাই এই পণ্যগুলো বেডরুম থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখার চেষ্টা করুন। 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।