দুর্গাপূজায় ঘরের সাজসজ্জা

কাশফুল আর শিউলির সুবাস জানান দিচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজার আর বেশি দিন বাকি নেই। দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রিয় ধর্মীয় উৎসব। তাই পূজার আগে থেকেই চারদিকে দেখা যায় উৎসবের আমেজ। কোন দিন কোন পোশাক পরা হবে, কোন দিন কোন খাবার খাওয়া হবে, কোন দিন কোন মণ্ডপে ঘোরা হবে, সেসব প্রস্তুতিতেই সব আনন্দ মিশে থাকে। কিন্তু বর্তমানে নতুন স্বাভাবিকের সাথে তাল মিলিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপনের ধরনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বাইরে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে বাড়িতেই উৎসব পালনটাই নিরাপদ। ঘরে থেকে পূজার আমেজ যেন একটুও কমে না যায় তাই নিজের ঘরকে সাজিয়ে তুলতে পারেন ভিন্ন আঙ্গিকে। দুর্গাপূজার আগেই যেভাবে ঘরকে দিতে পারেন অন্য রকম আবহ তাই আজ বলছি।

তাজা ফুলের স্নিগ্ধতা

ঘরে স্নিগ্ধতা আনতে ফুলদানিতে রাখতে পারেন তাজা ফুল


দুর্গাপূজা মানেই হরেক রকম ফুল ও পাতার স্নিগ্ধতা। এবার পূজায় ঘরের সাজে ব্যবহার করতে পারেন তাজা ফুল। তাজা ফুলের বিশুদ্ধতা ঘরের সাজে আনবে পরিপূর্ণতা। ঘর সাজাতে গাঁদা ফুলের মালার জুড়ি নেই। গাঁদা ফুলের মালা ঘরের দরজা, জানালা ও দেয়ালে ঝুলিয়ে দিতে পারেন পছন্দমতো। চাইলে রজনীগন্ধার মালাও ব্যবহার করতে পারেন। তা ছাড়া বসার ঘরে কিংবা ডাইনিং টেবিলে ফুলদানিতে রাখতে পারেন বেশ কিছু তাজা ফুল। পদ্ম, রজনীগন্ধা, অর্কিড, ডালিয়া, গোলাপ ইত্যাদি ফুল ঘরে আনবে সজীবতা। কাঁসা অথবা মাটির পাত্রে পানি দিয়ে তাতে শিউলি কিংবা গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে রাখতে পারেন ঘরের একপাশে। ঘরের মেঝেতে রং দিয়ে আলপনা করার সুবিধা না থাকলে ফুলের পাপড়ি বিছিয়ে তৈরি করতে পারেন ফুলেল গালিচা। এসব ফুলের মিষ্টি গন্ধে ঘর থাকবে স্নিগ্ধ ও সজীব। তা ছাড়া পাতাবাহার ইনডোর প্ল্যান্টও রাখতে পারেন ঘর সাজানোর তালিকায়।

আলোকসজ্জা

দুর্গাপূজার সাজসজ্জার অন্যতম অনুষঙ্গ হলো আলো। যুগ যুগ ধরে ঘিয়ের বাতি বা মঙ্গলপ্রদীপ ব্যবহৃত হয়ে আসছে পূজার আলোকসজ্জায়। প্রদীপ ঘরকে শুধু আলোকিতই করে না, পাশাপাশি ঘরে একটা মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই শুধু পূজার স্থানেই নয়, ছোট ছোট প্রদীপ রাখতে পারেন ঘরের বিভিন্ন জায়গায়। সিঁড়ির কোণে, সদর দরজায়, জানালার কার্নিশে, ডাইনিং টেবিল বা সেন্টার টেবিলে প্রদীপ দিয়ে সাজাতে পারেন মনের মতো করে। তবে প্রদীপ দিয়ে ঘর সাজানোর সময় যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমানে বেশির ভাগই কৃত্রিম বাতিতে আলোকসজ্জা করা হয়। বাড়িজুড়ে রংবেরঙের মরিচবাতি ব্যবহার করেন অনেকেই। মরিচবাতির পাশাপাশি অন্যান্য আলোকসজ্জায় ট্রেন্ডি করে তুলতে পারেন ঘরকে। দরজার বাইরে একটা আংটায় ঝুলিয়ে দিতে পারেন চমৎকার একটি লন্ঠন। লন্ঠনের নরম আলো সাদরে আমন্ত্রণ জানাবে অতিথিদের। তা ছাড়া, বড় ঘরের সিলিংয়ে একটি ঝাড়বাতি থাকলেও ঘরকে দেখাবে আকর্ষণীয়। কারুকার্যখচিত কাঠের বা স্টিলের স্ট্যান্ডে রাখতে পারেন সুগন্ধি মোমবাতি। রঙিন ফুলেল নকশার ল্যাম্পশেড রাখতে পারেন বেডসাইড টেবিলে।

উৎসবের রং

দুর্গাপূজার চিরায়ত লাল-সাদা থিমে সাজাতে পারেন ঘরকে

পূজায় ঘর সাজাতে প্রাধান্য দিন উজ্জ্বল রংগুলোকে। বিছানার চাদর, বালিশের কভার ইত্যাদিতে ব্যবহার করতে পারেন নিজের পছন্দের রংগুলো। বিছানায় যদি একরঙা চাদর থাকলে সাথে রাখতে পারেন ভিন্ন রঙের কিছু বালিশ। আবার সোফায় সাজিয়ে রাখতে পারেন দেশীয় নকশার কুশন। মেঝে সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন জ্যামিতিক নকশার কার্পেট। যাদের ঘরে পূজায় আলপনা আঁকার সুবিধা নেই রঙিন শতরঞ্জি তাদের ঘরে আলপনার অভাব দূর করবে। তবে যারা নানা রঙে রঙিন ঘর চান না, তারা দুর্গাপূজার চিরায়ত লাল-সাদা রঙে ঘর সাজাতে পারেন। আপনার ঘরে যদি একটি লাল সোফা বা ডিভান থাকে সেটিতে সাদা বা অফ হোয়াইট কুশন ব্যবহার করতে পারেন। লাল-সাদা একটি টেবিল ক্লথে টেবিলটাকে দেখাবে চমৎকার। দরজা-জানালায় সাদা পর্দা ঘরকে দেবে শরতের আবহ।
সাদা বিছানার চাদর হলে লাল বালিশ ব্যবহার করে সুন্দর একটা থিমে সাজাতে পারেন নিজের ঘরকে। তা ছাড়া, লাল সাদা কাগজের ঝালর দিয়েও সাজাতে পারেন ঘর। পূজা উপলক্ষে ঘরে ঐতিহ্যের ছোঁয়া রাখতে চাইলে এককোণে পেতে দিতে পারেন লাল-সাদা কুশনওয়ালা একটা শতরঞ্জি।

পূজায় নতুন আসবাব

স্মার্টফিট সেন্টার টেবিলে জমে উঠবে আড্ডা ও নাশতার আয়োজন

দুর্গাপূজায় পূজা হবে, বন্ধুবান্ধবের সাথে দেখা হবে, আড্ডা হবে, জমবে খাওয়ার আয়োজন। তবেই না উৎসব হবে আনন্দের। তবে বসার ঘরে নাশতা নিয়ে দৌড়াদৌড়ির ঝামেলাটা না পোহাতে চাইলে কিনতে পারেন একটি সুন্দর টি-ট্রলি। নাড়ু, লাড্ডুসহ হরেক রকমের খাবার সাজানো একটা ট্রলি আপনার ঘরে দাওয়াতের আয়োজনকে করবে আরো জমজমাট। এবার পূজায় বাড়িতে অনেক মেহমান এলে ছোট ঘরে তাদের কোথায় বসতে দেবেন, ভেবে যদি আপনি চিন্তিত হয়ে থাকেন তাহলে সেই চিন্তা ঝেড়ে ফেলে কিনে ফেলতে পারেন Cappuccino-105 and Espresso-105 মডেলের চার সিটের এই সেন্টার টেবিলটি। এতে বসে খাওয়াদাওয়া, আড্ডা দেওয়ার আলাদা একটি স্থানও হবে আর স্মার্টফিট এই টেবিলটি আপনার ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করবে। তা ছাড়া আপনার ঘরের পুরোনো কোনো আসবাব যদি বদলে ফেলার পরিকল্পনা থাকে তাহলে এবারের পূজায়ই ঘর সাজাতে পারেন আধুনিক আসবাব দিয়ে।

দেবীর আগমন আপনার জীবনে মঙ্গল বয়ে আনুক। দেবী আসার আগেই নিজের মনের মতো সাজিয়ে ফেলুন আপনার ঘর। ঘর সাজানোর এই উপায়গুলো আপনার কেমন লাগল, তা জানাতে পারেন কমেন্টে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।