সূর্যের ক্ষতি থেকে ফার্নিচার রক্ষা করার ৬ টি সহজ উপায়

প্রাকৃতিক আলো সবসময়ই আমাদের প্রকৃতি ও মানব সভ্যতার জন্য এক প্রয়োজনীয় উপাদান। দিনের বেলায় সূর্যের আলো আমাদের কৃত্রিম আলোর অভাব বোধ করতে দেয় না। ঘর আলোকিত করে রাখা এই আলো, আপনার বাসার ফার্নিচারের রঙগুলোকে ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারে। তবে আলোর এই রোশনাই বাসার অভ্যন্তরে থাকা ফার্নিচারগুলোর উপর অতিবেগুনী রশ্মির প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। সূর্যের আলো বিছানা, সোফা এবং অন্যান্য ফার্নিচারের উজ্জ্বল রঙগুলোকে বিবর্ণ করে দেয়। 

সূর্যের ক্ষতি থেকে আসবাবপত্র কীভাবে রক্ষা করবেন তা জানতে এই লেখায় রইলো ছয় পরামর্শ।  

সূর্য থেকে ফার্নিচার রক্ষা করার সহজ উপায়

১/ সূর্যের আলোর সাথে লুকোচুরি 

প্রথম পরামর্শ বেশ সোজাসাপ্টা। সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখুন আপনার ফার্নিচার। মান এবং রঙ ঠিক রেখে দীর্ঘস্থায়ী ফার্নিচারের জন্য এটাই সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকর উপায়৷ সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে ফার্নিচারের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এড়াতে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে এমন স্থানে ফার্নিচার রাখা থেকে বিরত থাকুন। 

Easy Chair Horace-118

 

ঘরের রুমগুলোর কোন অংশে সূর্যের আলো বেশি পড়ে শুরুতে সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিন। ফার্নিচার রাখার ক্ষেত্রে সেসব স্থান এড়িয়ে যান৷ 

বিশেষত, লেদারের ফার্নিচার একটু অনিয়ম হলেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের ফার্নিচার শুকিয়ে ফেটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে সব থেকে বেশি। এ কারণে এই ফার্নিচারগুলোকে খুব বেশি তাপ থেকে কমপক্ষে ২ ফিট দূরে রাখতে হবে। এ ছাড়া সূর্যের আলো সরাসরি যেখানে পড়ে, সেই পাশেও রাখা যাবে না। এ নিয়মের বাইরে গেলে কয়েক বছরেই এই ধরণের ফার্নিচারের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। 

২/ নিয়মিত জায়গা পরিবর্তনে অভ্যস্ত হোন

আপনার বাসায় হয়ত জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। তাই সূর্যের আলোর নিচেই রাখতে হচ্ছে ফার্নিচার। কিন্তু এতে তো রোদের উত্তাপ আর সূর্য থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা যাবে না ফার্নিচারকে। তাহলে উপায় কী? মাস বা বাৎসরিক ভিত্তিতে নিয়মিত ফার্নিচারের স্থান বদল করুন। সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে এমন স্থানে যেসব ফার্নিচার রয়েছে সেগুলোর জায়গা বদল করে ছায়াযুক্ত স্থানে নিয়ে আসুন। 

ছায়াযুক্ত স্থানে যেসব ফার্নিচার রয়েছে সেটি নিয়ে আসুন সূর্যের আলোর নিচে। এতে অবশ্য আরেকটি উপকারও আছে। একটানা বহু দিন যদি একটি ফার্নিচার একই স্থানে থাকে তাহলে সেই স্থানে স্পট পড়ে যেতে পারে। ক্ষতি হতে পারে ফার্নিচারের নিচের দিকের অংশগুলোতেও। জায়গা অদল বদল করার ফলে এই সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া সম্ভব। 

৩/ পর্দায় সমাধান

পুরো রুমটি পুনর্বিন্যাস না করেই আপনার ফার্নিচারগুলো সূর্যের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে রক্ষা করার একটি সহজ সমাধান হল জানালা ও দরজায় ব্ল্যাকআউট পর্দা লাগানো। এই কৌশলটি কার্যকর করার জন্য পর্দাগুলো দ্বারা অবশ্যই পুরো জানালা এবং দরজা ঢেকে রাখতে হবে এবং এমনকি ক্ষুদ্রতম পরিমাণে আলোও যাতে না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

এমন কৌশল হয়ত আপনার ঘরকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করতে পারে, হয়ত ভালোও লাগবে না আপনার কৌশলটি। তবে কৌশল এমন রুমগুলোর জন্য একটি দুর্দান্ত সমাধান হতে পারে যে রুমগুলো আপনি খুব একটা ব্যবহার করেন না বা যখন আপনি বাড়িতে থাকেন না। 

 

সূর্যের ক্ষতি থেকে ফার্নিচার রক্ষাঃ পর্দায় সমাধান

 

পর্দার মাধ্যমে শুধু সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিই নয়, ঘরে সূর্যের উত্তাপও ঢুকতে বাধা পাবে। ঘরের প্রকৃতি অনুযায়ী পর্দা নির্বাচন করতে হবে। কারণ মেঝের টাইলস, দেয়ালসজ্জা, রুমে আলোর ব্যবহার, আসবাব কী রকম সব কিছুই পর্দা বাছাইয়ে সমান গুরুত্ব বহন করে। বসার ঘরে সবচেয়ে নজরকাড়া পর্দাটা লাগান। জানালার পর্দার উপর ভারি সিল্কের পর্দা লাগান। এতে রোদ অনেকটাই আটকানো যায়। 

পর্দার বিকল্প হিসেবে উইণডো ফিল্মও লাগাতে পারেন। এই ফিল্মও সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। ফলে এরাও ফার্নিচারকে সূর্যের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। 

৪/ হালকা ফেব্রিকের ফার্নিচারে গুরুত্ব 

লেদারের ফার্নিচারে লেদারের ফেব্রিক হতে পারে বিভিন্ন ধরন ও রঙের। এ ধরনের ফার্নিচার সূর্যের আলো সরাসরি আসে, এমন জায়গা থেকে একেবারেই দূরে রাখা উচিত। কারণ, ফেব্রিকের রঙ সূর্যের আলোর তীব্রতায় ফ্যাকাশে হয়ে যায়। 

লেদারের ফার্নিচারগুলো বিভিন্ন উপায়ে সূর্য দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং কোনো ফেব্রিকই সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শতভাগ নিরাপদ নয়। এক্রাইলিক, পলিয়েস্টার এবং ভিনাইল দিয়ে তৈরি লেদারের ফার্নিচারগুলো লিনেন বা সিল্কের তৈরি লেদারের ফার্নিচারের তুলনায় সূর্যের আলোতে ক্ষতির আশঙ্কা কম। 

Sagittarius-111

 

লিনেন বা সিল্কের তৈরি লেদারের ফার্নিচার সূর্যের আলোর তীব্রতায় দ্রুত বিবর্ণ হয়ে যেতে পারে। এতে করে লেদারের রঙেও পার্থক্য চলে আসে। হালকা লেদারের ফার্নিচার সূর্যের আলোয় কম বিবর্ণ দেখায় এবং গাঢ় রঙের লেদারের ফার্নিচার অপেক্ষাকৃত বেশি বিবর্ণ দেখায়।  

৫/ হাতের কাছে ক্লিনার বা তেল

আপনার কাঠের ফার্নিচারগুলো সূর্য থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি, আপনি এটিকে নতুনের মতো করে সাজিয়ে রাখতে চাইবেন। এক্ষেত্রে ক্লিনার কিংবা তেল বেশ উপকারি। এমন ক্লিনার ব্যবহার করতে হবে যাতে ক্ষতিকারক মোম এবং সিলিকন থাকে না। এই ধরণের ক্লিনারগুলোতে জৈব তেল রয়েছে যা আপনার ফার্নিচারের কাঠকে পুষ্ট ও দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে এবং শেষ পর্যন্ত তার আসল উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে।

এমনকি এটি ফার্নিচারের কাঠের গায়ে পড়া স্পট এবং অতি বেগুনি রশ্মির দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি প্রশমনেও সাহায্য করে। তবে এই ধরণের ক্লিনার শুধু যে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে বাঁচায় বা ফার্নিচারের উজ্জ্বলতা বজায় রাখে এমন নয়। এটি বাতাসের আর্দ্রতা, শুষ্ক ভাব থেকে ফার্নিচারকে রক্ষা করে। তবে  ফার্নিচারে ক্লিনার ব্যবহার করার আগে অবশ্যই ক্লিনারের গায়ের লেখা সতর্কতার সাথে পড়ে নিয়ে  ফার্নিচার সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করুন। তারপর ব্যবহার করুন ক্লিনারটি। 

৬/ ঘরের বাইরের  ফার্নিচার বাঁচাতে

বারান্দা, ছাদ কিংবা বাসার উঠোনে আপনার হয়ত কিছু  ফার্নিচার রয়েছে। এসব  ফার্নিচারের গায়ে সূর্যের আলো সরাসরি পড়ে। ফলে এদের উপর অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। তাছাড়া ঝড় বৃষ্টি থেকেও রক্ষা করতে হবে ফার্নিচার গুলোকে। এক্ষেত্রে পানিরোধী  ফার্নিচার কভার লাগাতে পারেন আপনার  ফার্নিচারগুলোতে।

 

HATIL Lobby Madrid-123

 

তবে এই কভার সবসময়ের জন্য নয়, যখন  ফার্নিচারগুলো ব্যবহার করা হয় না, তখনই শুধু এই কভার ব্যবহার করবেন। ঘরের বাইরের  ফার্নিচারগুলোর কভার বিভিন্ন আকার এবং ডিজাইনের হয়ে থাকে এবং এই কভারগুলো লাগানো এবং খুলে ফেলা তুলনামূলকভাবে সহজ।  

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।