বেড বেড

বিলাসবহুল বেডরুম ধারনা: বিলাসবহুল বেডরুম সাজিয়ে তুলতে হাতিলের পরামর্শ 

ঘর সাজানোর সময় সকলেরই বোধহয় একটা প্রত্যাশা থাকে এমন যে, কেউ ঘরে ঢুকেই মুগ্ধ হবে, প্রশংসা করবে। তবে তা যদি হয় বেডরুম, সেক্ষেত্রে ঘরটি সাজাতে বাড়তি চিন্তাই কাজ করে। কারণ, সারা দিনের ব্যস্ততা, ক্লান্তি, যান্ত্রিক কোলাহলের শেষে মানুষ প্রশান্তির পরশ খোঁজে নিজের বেডরুমেই। তাই বেডরুমের সাজেও থাকা চাই যত্নের ছোঁয়া। বেডরুমের সাজে শৌখিনতা আর আভিজাত্যের চেয়ে আরামের বিষয়টি বেশি প্রাধান্য পেতে পারে। বেডরুমকে একটি বিলাসবহুল রূপ দিতে হাতিল আপনাকে দিচ্ছে ছয়টি পরামর্শ। 

১. দেয়াল হোক রঙিন

ঘরে প্রবেশ করার পর শুরুতে হয়ত আপনার নজর যাবে ঘরের দেয়ালে। দেয়ালের রং আকর্ষণীয় না হলেও তা তেমন কারো নজর না কাড়াই স্বাভাবিক। বিলাসবহুল বেডরুমের ক্ষেত্রে তাই দেয়ালের রং বেশ গুরুত্ব বহন করে।  এজন্য ওয়াল পেন্টিং করাতে পারেন। কস্টমাইজ ডিজাইনও ব্যবহার করতে পারেন। রং এর ক্ষেত্রে সাদা ব্যবহার না করে পছন্দের অন্য রংকে প্রাধান্য দিন। 

 

দেয়াল হোক রঙিন

 

দেয়ালের রং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফার্নিচার বা অন্যান্য জিনিসের রং বাছাই করুন। দেয়াল শুধু রঙিন করলেই কিন্তু চলবে না, দেয়ালকে সাজিয়ে তুলতে পারেন নানা উপায়েই। বিছানার পেছনের দেয়ালে পারিবারিক একটি ছবি ঝুলিয়ে দিতে পারেন৷ দেয়াল এবং ফার্নিচারের রং এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেয়ালে ওয়াল পেইন্টিং লাগাতে পারেন। ঝুলাতে পারেন শতরঞ্জিও। 

২. বেড যেমন হওয়া চাই

বেডরুমের প্রাণ বলা হয় বেডকে। সময়ের সাথে বেড এর ডিজাইনে এসেছে ভিন্নতা।  কেউ কেউ ঐতিহ্য ধরে রেখে পুরোনো ডিজাইনেই আস্থা রাখলেও অধিকাংশ মানুষ ঝুঁকছেন আধুনিক ডিজাইন এর বেডে। বাজারেও তাই ভিন্ন ভিন্ন আধুনিক ডিজাইনের বেডের চাহিদা বেড়েছে। বিলাসবহুল বেডরুমের জন্য ক্রেতাদের পছন্দের তালিকাতেও আধুনিক ডিজাইন এর বেড এর চাহিদা শীর্ষে রয়েছে। 

হেডবোর্ডযুক্ত বেডগুলোর ধরণ এবং মানের ভিন্নতা বিলাসবহুল বেডরুমের সৌন্দর্যে প্রভাব ফেলে। তবে পুরো বিষয়টিই নির্ভর করবে আপনার নিজের পছন্দের উপর। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, প্রিমিয়াম ডিজাইনের হেডবোর্ডযুক্ত বেড-ই বেছে নিন। বেড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে রং এর চাইতে ডিজাইনকে প্রাধান্য দিন। 

বেড যেমন হওয়া চাই

 

দেয়ালের রং এ যেমন সাদা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তেমনি বেড নির্বাচনেও সাদা রং এর চেয়ে ভিন্ন কোনো রং বেছে নিতে পারেন। তবে আপনার পছন্দের রং যদি হয় সাদা, সেক্ষেত্রে আমরা আপনাকে নিরুৎসাহিত করবো না এ বিষয়ে। বেড নির্বাচনে কোয়ালিটির দিকেও খেয়াল রাখুন। কারণ কিছুদিন পর পর তো আর বেড পরিবর্তন করবেন না আপনি তাই টেকসই বেড বাছাই করুন। 

বিছানায় বালিশের পাশাপাশি কুশনও রাখতে পারেন। এতে সৌন্দর্য যেমন বাড়ে তেমনি দেখতেও ভালো লাগে।

বিছানার চাদর, বালিশের কভার, কুশন কভার যাতে হয় এমন রঙের, যা চোখকে স্বস্তি এনে দেয়; সে বিষয়েও নজর দিন। 

৩. আর কোন ফার্নিচার চাই?

খাটের পর বেডরুমে আর কী কী ফার্নিচার প্রয়োজন হতে পারে তার লিস্ট করে ফেলুন। তবে বেডরুমে খুব বেশি ভারী ফার্নিচার না রাখাই ভালো। ড্রেসিং টেবিল সমেত আয়না তো লাগবেই, তাই না? কিন্তু আয়না এমন স্থানে রাখবেন না যেখানে দরজার বাইরে থেকে আয়নার মাধ্যমে পুরো রুমের দৃশ্য দেখা যায়। আয়না সোজা খাট বরাবর রাখতেও পরামর্শ দিচ্ছি না আমরা। কারণ আয়না থেকে আলো প্রতিফলিত হয়ে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। 

বেডরুমে একটা আলমারি প্রয়োজন হতে পারে, রাখুন সেটিও। থাকতে পারে একটি বুকসেলফও কিংবা বিছানার পাশে ওয়াল ব্রাকেট লাগিয়ে নিতে পারেন। এর সাথে একটি রকিং চেয়ার থাকলে কেমন হয়? রকিং চেয়ারে দুলে অবসরে বই পড়ে সময় কাটালেন৷  

 

rocking chair

 

বেডরুমে যদি টিভি দেখার আয়োজন করতে চান তাহলে টিভি কেবিনেটও কিন্তু প্রয়োজন হবে।

বেডরুমে নিকট আত্মীয় বা বন্ধুদের সঙ্গে গল্পগুজব করার জন্য বেড ছাড়াও একটি আলাদা বসার জায়গা রাখা যেতে পারে। সেটি হতে পারে একটি ডাবল সিটার সোফা বা দুটি সিঙ্গেল সিটার সোফা কিংবা ডিভান। আসবাব রাখার বিষয়টি নির্ভর করবে ঘরের আয়তনের ওপর।

৪. আনুষঙ্গিক যা কিছু সৌন্দর্য বাড়াতে পারে

বেডরুমের দরজা এবং জানালায় রঙিন পর্দা ব্যবহার করুন। পর্দার কাপড় লিনেন হলেই বেশি মানানসই। লিনেন অনেক বেশি লাক্সারি প্রদর্শন করতে সক্ষম। বেডরুমের কেন্দ্রে একটা ঝাড়বাতি ঝুলিয়ে দিতে পারেন৷ 

শোবার ঘরে ওয়াল লাইটের সঙ্গে ঘরের এক কোণে পেনডেন্ট লাইটও লাগিয়ে নিন। শোবার ঘরে ডিমার লাইটিংয়ের ব্যবস্থা রাখুন।  

মেঝেতে রাখতে পারেন রাগস কিংবা ছোট কার্পেট। রঙ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেছে নিন এমন ধরনের রঙ, যা ঘরের সাজের সঙ্গে মানিয়ে যাবে, আবার ময়লা হলেও সহজে চোখে পড়বে না।

৫. আলো বাতাস কিংবা সবুজের পরশও মন্দ নয়

ঘরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখুন। সকালের মিষ্টি রোদ জানালা দিয়ে যখন ঘরে ঢুকবে, দেখবেন মনটাই ভালো হয়ে যাবে। ঘরে ফার্নিচার আর নানা আনুষঙ্গিক জিনিসের ভীড়ে প্রাকৃতিক এই আবহটা আপনাকে মনে অন্য রকম এক প্রশান্তি দেবে। 

বিলাসবহুল একটি বেডরুমে ইনডোর প্লান্টের ব্যবস্থা থাকলে সেটি মনের শান্তি এবং রুমের সৌন্দর্য বাড়াতে দারুণভাবে সহায়তা করে। চেষ্টা করুন বেডরুমে ছোট ছোট ২/১ টি গাছ রাখতে। এই গাছগুলো আপনাকে তাজা অক্সিজেন যোগাবে। এতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকবে। সুস্থ থাকবেন আপনি। 

আলো বাতাস কিংবা সবুজের পরশও মন্দ নয়

 

গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে গতানুগতিক টব ব্যবহার না করে ঝুলন্ত পট বা শোপিস ব্যবহার করে দেখতে পারেন। নিয়মিত গাছের পরিচর্যা করতে ভুলবেন না যেন! 

৬. নিয়মিত তদারকি জারি থাকু্ক 

বেডরুমকে ফার্নিচার আর আনুষঙ্গিক জিনিস দিয়ে সাজানোর পর নিয়মিত পুরো রুমের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। আপনি আপনার বেডরুমকে বিলাসবহুল রূপ দিলেন, কিন্তু নিয়মিত পরিস্কার রাখলেন না, তাহলে পুরো পরিকল্পনাটিই বৃথা হয়ে যাবে। 

দেয়ালে পানি যাতে না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখুন। এতে করে দেয়ালের রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দেয়ালের রং পুরো রুমের পরিবেশেই ভিন্নতা এনে দেয়। তাই দেয়ালের রং কয়েক বছর পর পর পরিবর্তন করে দেখতে পারেন। 

বেডরুমের গাছগুলো ঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কিনা খেয়াল রাখুন। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় ধূলো জমে মলিন হয়ে যাচ্ছে কিনা দেখুন। প্রয়োজনে প্রতি সপ্তাহে গ্লাস ক্লিনার দিয়ে পরিস্কার করুন। 

বেডরুমের পুরো সেটআপ ঘন ঘন পরিবর্তন করা উচিত নয়। এতে করে ফার্নিচার নষ্ট হতে পারে। তবে রুমের সৌন্দর্য বাড়াতে সহজে স্থানান্তর করা যায় এমন জিনিসগুলো এদিক ওদিক করে দেখতে পারেন কিছুদিন পর পর। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।