আজকের কর্মব্যস্ত জীবনে অফিসে যাতায়াত অনেকের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মজীবীরা প্রতিদিন কখন অফিস যাবেন, কীভাবে যাবেন, কখন ফিরবেন—এসব নিয়ে ভাবতে বাধ্য হন। তাই অনেক অফিসই রিমোট ওয়ার্কিং সুবিধা দিয়ে থাকে। এতে অফিস বাসায় হলে যাতায়াতের ঝামেলা ও খরচ কমে যায়। কিন্তু ওয়ার্কস্টেশনের মত সবচেয়ে প্রোডাক্টিভ উপায়ে হোম অফিস রুম সাজানো নিয়ে একটা কনফিউশন থেকে যায়। তাই আজকের পোস্টে আমরা বিস্তারিত এই নিয়ে কথা বলবো। চলুন একে একে জেনেই নিই হোম অফিসের সকল সুবিধা এবং সাজানোর কৌশল।
হোম অফিসের সুবিধাসমূহ কি কি?
একবার চিন্তা করুন তো বাড়িতেই যদি অফিস রুম থাকে তবে কতটাই না সুবিধা হত। করোনা আমাদেরকে বাসায় অফিস করার প্রয়োজনীয়তা খুব ভালো করে বুঝিয়ে গেছে। হোম অফিসের সুবিধাগুলো হলো—
- যাতায়াতের ঝামেলা নেই। তাই ট্রান্সপোর্ট বাবদ অফিসে যাতায়াতে সময় ও অর্থ ব্যয় হয় না।
- আরামদায়ক পরিবেশ পাবেন, কারণ নিজের বাসায় পছন্দমতো পরিবেশে কাজ করা যায়।
- সময়ের সাশ্রয় হবে যেহেতু যাতায়াতের সময় বাঁচিয়ে আরও বেশি প্রোডাক্টিভ হওয়া সম্ভব।
- বাসায় থাকার কারণে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বেশি সময় কাটানো যায়।
- কম খরচে অফিস হয়, মানে অফিস স্পেস ভাড়া নেওয়া, যাতায়াত ও খাবারের খরচ বাঁচে।
- মানসিক চাপ কমে – ট্রাফিক জ্যাম বা পরিবেশগত সমস্যার চাপ থাকে না বলে মানসিক চাপ কমে।
- নিরিবিলি পরিবেশে মনোযোগ বেশি থাকে, যা ক্রিয়েটিভিটি বাড়িয়ে কাজের গুণগত মান উন্নত করে।
এমনকি, প্যান্ডেমিকে যখন পুরো বিশ্ব স্তব্ধ ছিল, সে সময়েও যারা বাসাতেই অফিস বসিয়ে কাজ করেছেন তারা দিব্যি ভালোই দিন কাটিয়েছেন। তারা কোয়ারেন্টাইনের বিরক্তি ও ধাক্কা অনেকটাই কাটিয়ে নিয়েছেন।
কিভাবে সঠিক উপায়ে হোম অফিস রুম সাজানো যায়? জেনে নিন ১০টি স্টেপস!
আপনি ইচ্ছে করলেই বাড়িতেই আপনার অফিস সাজিয়ে নিতে পারেন। আর অফিস যদি বাড়িতেই বসান বা বাড়ি কে অফিস বানিয়ে ফেলেন তাহলে একদিকে যেমন খরচ বেঁচে যাবে অন্যদিকে আপনার সময় বেঁচে যাবে। আমরা আজ আলোচনা করবো কিভাবে হোম অফিস সাজাবেন এবং বাড়িতেই কিভাবে অফিস করতে পারেন সেসব নিয়ে। সব মিলিয়ে ১০ টি টিপস আলোচনা করব যাতে আপনার অফিসকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
১. জায়গা নির্বাচন করুন
অফিসের জন্য প্রথমেই আপনাকে যে কাজটি করতে হবে সেটি হচ্ছে সুবিধামত কক্ষ নির্বাচন করতে হবে। যদি আপনি ফ্ল্যাট বাসায় ভাড়া থাকেন তবে আপনাকে এমন একটি কক্ষ নির্বাচন করতে হবে যাতে আপনার বাসার নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।
এজন্য আপনি সিঁড়ির কাছের কক্ষ বেছে নিতে পারেন। এবার আপনি যদি নিজের বাসায় থাকেন তাহলে নিচতলা কিংবা দুই তলায় হোম অফিস করতে পারেন। আর আপনার অফিস কক্ষে ক্লায়েন্টদের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে যাতে তারা কোন অস্বস্তি বোধ না করে।
২. কক্ষটি সুন্দর করে সাজান
একটি অফিস কক্ষে সাধারণত চেয়ার, টেবিল, আলমারি সেলফ, সোফা ইত্যাদি থাকে। তবে আপনি আপনার সুবিধা অনুযায়ী আরও কিছু জিনিস রাখতে পারেন। তাই এসব আসবাবপত্র খুব সুন্দর করে সাজাবেন যাতে দেখতে দারুন লাগে।
এর জন্য কোন কোন বিষয়ে কোনো কমতি রাখবেন না। আর আপনার কক্ষের মাপ অনুযায়ী আপনি অর্ডার দিয়ে জিনিস বানিয়েও নিতে পারেন। মনে রাখবেন কক্ষ বড় হলেই যে সুন্দর হবে তা নয় কক্ষকে সুন্দর করে সাজিয়ে নিতে হবে।
অফিসে যদি ক্লায়েন্ট আসার সম্ভাবণা থাকে তবে তাদের জন্য পর্যাপ্ত চেয়ার কিংবা সোফার ব্যবস্থা করবেন। আপনি অফিসকক্ষের দেয়ালে ভালো কোনো কিছু এঁকে দিতে পারেন।
৩. আপনার জন্য ভালো একটি চেয়ার কিনুন
আপনি যে চেয়ারে বসবেন সেটি অবশ্যই আকর্ষণীয় হতে হবে। ভালো মানের একটি চেয়ার রাখবেন আপনার জন্য। আপনি আপনার চেয়ারটি অবশ্যই সবার থেকে আলাদা রাখবেন।
৪. কক্ষে পছন্দসই রং করান
আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী পুরো রুমটি নতুন করে রং করিয়ে নিতে পারেন। এতে আপনার রুমের সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বেড়ে যাবে যা ক্লায়েন্টদের সহজেই আকৃষ্ট করবে। আর এতে আপনার ব্যক্তিত্ব প্রকাশ পাবে।
৫. আপনার ডেস্কটি মনের মতো করে সাজান
আপনি ডেস্কে কম্পিউটার, কলমদানি, কিবোর্ড ইত্যাদি রাখতে পারেন। কিন্তু এমনভাবে রাখবেন যাতে দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। আপনি আপনার ডেক্সটি এমনভাবে সাজাবেন যাতে ক্লায়েন্টদের সাথে কথা বলার সময় কোন বাধার সৃষ্টি না করে।
যেমন কম্পিউটার যদি রাখেন তাহলে এক সাইডে রাখতে পারেন এতে আপনার সম্মুখভাগ খালি থাকবে। আপনি ডেস্কটি কক্ষের এক কোনায় রাখতে পারেন কিংবা জানালার কাছে রাখতে পারেন।
জানালার কাছে রাখলে পর্যাপ্ত আলো বাতাস আসবে। আপনার ডেস্কটি আরও আকর্ষণীয় করার জন্য কিছু শোপিস রাখতে পারেন।
৬. কক্ষ সাজানোর জন্য কিছু আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনুন
আপনার কক্ষকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য অতিরিক্ত কিছু আনুষঙ্গিক জিনিস কিনতে পারেন। আপনি যদি মনে করেন যে এসব জিনিস কিনে টাকা নষ্ট করার কোনো মানে হয় না তাহলে তা ভুল ভাবছেন।
কারণ এসব জিনিস আপনার রুমকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। আপনি দেয়ালে টানানোর জন্য কিছু স্থিরচিত্র রাখতে পারেন।
৭. উলম্বভাবে কিংবা আনুভূমিকভাবে সাজাতে পারেন
আপনার হোম অফিস কক্ষ টি বর্গাকার নাও হতে পারে। এজন্য আপনার আপনাকে আসবাবপত্র উলম্বভাবে কিংবা আনুভূমিকভাবে যেভাবে দেখতে ভালো লাগে সে ভাবে সাজাবেন।
যেমন আপনার অফিসের কাগজপত্র, কলম রাখার জন্য দেয়ালে উলম্ব ভাবে সেলফ লাগিয়ে নিতে পারেন।
৮. প্রযুক্তির সাহায্য নিন
আপনি আপনার অফিসে কম্পিউটার, প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন, স্ক্যানার ইত্যাদি রাখুন। এতে আপনাকে ছোট কোন কাজের জন্য বাইরে যেতে হবে না। সব ঘরে বসেই করতে পারবেন।
আর এসব জিনিসপত্র এমন ভাবে রাখুন যাতে আপনি খুব সহজেই এগুলো অন করতে পারেন কিংবা প্রয়োজন অনুযায়ী অফ করে রাখতে পারেন। এসব জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার কক্ষে কক্ষে ক্যাবলের ছড়াছড়ি হয়ে যেতে পারে।
এজন্য আপনি প্লাস্টিকের ক্যাপ ব্যবহার করতে পারেন কিংবা কেবল বক্স ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো অন্যদের থেকে ক্যাবল লুকাতে সাহায্য করবে এবং আপনার বাড়ির অফিস কক্ষ টি আরো আকর্ষণীয় হবে।
৯. হোম অফিস কক্ষটি আলোকিত করুন
আপনার কক্ষটিতে যাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ঘরে প্রয়োজনমতো লাইট লাগিয়ে নিবেন। আলো যদি কম থাকে তাহলে দেখতে সমস্যা কিংবা মাথা ব্যথা হতে পারে। আপনাকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে যাতে যে কম্পিউটারের ডিসপ্লে তে যাতে বাইরে থেকে আলো না আসে।
যদি কম্পিউটারের ডিসপ্লে তে বাইরে থেকে আলো আসে তবে আপনারই কাজের সমস্যা হবে। আবার খুঁটিনাটি কিছু কাজের জন্য আপনি টেবিল ল্যাম্পও রাখতে পারেন।
১০. নিজেকে অনুপ্রাণিত করুন
আপনি আপনার হোম অফিস কক্ষের দেয়ালে কিংবা ডেস্কে আপনার প্রিয় স্থিরচিত্র, বিখ্যাত ব্যক্তির বাণী ইত্যাদি রাখতে পারেন যা আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।
যদি কখনো আপনি কাজ থেকে সরে যান তবে এগুলো আপনাকে আবার কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। আপনি আপনার সন্তানের ছবি রাখতে পারেন এটি আপনাকে সব সময় মনে করিয়ে দিবে যে আপনি তাদের জন্য কাজ করছেন।
এখানে হোম অফিসকে কিভাবে আকর্ষণীয় করে তুলবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি। অনেক সময় একই রকম অফিসে কাজ করতে করতে এক ঘেয়েমি লাগতে পারে।
আপনি ইচ্ছে করলে কিছুদিন পরপর আপনার হোম অফিসের আসবাবপত্র গুলোর স্থান পরিবর্তন করে দিতে পারেন। কিছু জিনিস এদিক-সেদিক করতে পারেন কিংবা নতুন করে রং করাতেও পারেন। এতে আপনার বিরক্তিভাব আসবেনা।
আশা করি উপরিউক্ত টিপস গুলো আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।
সারকথা
এখানে হোম অফিসকে কিভাবে আকর্ষণীয় করে তুলবেন তা নিয়ে আলোচনা করেছি। অনেক সময় একই রকম অফিসে কাজ করতে করতে এক ঘেয়েমি লাগতে পারে। আপনি ইচ্ছে করলে কিছুদিন পরপর আপনার হোম অফিসের আসবাবপত্র গুলোর স্থান পরিবর্তন করে দিতে পারেন। কিছু জিনিস এদিক-সেদিক করতে পারেন কিংবা নতুন করে রং করাতেও পারেন। এতে আপনার বিরক্তিভাব আসবেনা। আশা করি উপরিউক্ত টিপস গুলো আপনাদের অনেক কাজে লাগবে।
বাসায় অফিস রুম সাজানো নিয়ে কিছু বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তরঃ
বাসার অফিস রুমের জন্য কী ধরনের আসবাব দরকার?
দীর্ঘসময় কাজ করতে আরামদায়ক চেয়ার, প্রশস্ত ডেস্ক, বুকশেলফ বা স্টোরেজ ক্যাবিনেট প্রয়োজন। এর পাশাপাশি কম্পিউটার, প্রিন্টার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের জন্য যথেষ্ট জায়গা নিশ্চিত করুন। অপ্রয়োজনীয় আসবাব পরিহার করুন, যাতে কাজের জায়গা পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি থাকে।
অফিস রুম সাজানোর সময় কিভাবে সাউন্ডপ্রুফিং করা যায়?
আজকাল অনেকেই দেয়ালে সাউন্ডপ্রুফিং ফোম লাগানয়, যেমন—ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট বানায় এমন লোকজন। আবার কার্পেট বা পর্দা ব্যবহার করা, ভারী দরজা লাগানো এবং দরজার নিচে রাবার স্ট্রিপ লাগানো রুমকে সাউন্ডপ্রুফ করার ভালো উপায়। এসবকছিু যোগাড় করতে কষ্ট হলে নয়েজ ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করেও বাহ্যিক শব্দ থেকে বাঁচা যায়।
অফিস রুমের ইন্টারনেট সংযোগ কীভাবে উন্নত করা যায়?
রেপুটেড কোম্পানি উচ্চগতির ব্রডব্যান্ড কানেকশন নিন। এরপর রাউটারের অবস্থান ঠিকমতো সেট করুন এবং ওয়াইফাই এক্সটেন্ডার ব্যবহার করুন। ইথারনেট ক্যাবল সংযোগ দ্রুত ও স্থিতিশীল ইন্টারনেট সরবরাহ করে, যা ভিডিও মিটিং বা বড় ফাইল ট্রান্সফারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।