সারা দিনের ব্যস্ততা শেষে আমাদের ফিরে যাওয়ার জায়গা হচ্ছে আমাদের ঘর। ঘরের প্রতিটা কোণে ছড়িয়ে থাকে কত স্মৃতি, মায়া আর আবেগ! একই ঠিকানায়, একই নীড়ে ফেরার এক সহজাত তাগিদ আমাদের থাকেই। তবে সেই চিরপরিচিত গৃহাঙ্গনকে নতুনভাবে সাজানোর, নতুন রূপে দেখার তাগিদটাও মানুষের সহজাত স্বভাবেরই অংশ। আর নতুন বছরের শুরু সেই একান্ত আপন ঘরটিকে নতুনভাবে সাজানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
বছর শেষের এই সময়টায় আসুন ভেবে দেখি ঘরের কোন দেয়ালটা একটু উজ্জ্বল হলুদ রঙে রাঙাতে চাইছিলেন, হয়তো নতুন বছরই ঘরে উজ্জ্বলতার ছোঁয়া আনার সুন্দরতম ক্ষণ। ভেবে দেখতে পারেন বহুদিন ধরে ঘরের কোন পাশটার খুব বেশি যত্ন নেওয়া হচ্ছে না অথবা নতুন কেনা বইগুলোকে এবার কোথায় আশ্রয় দেওয়া যায়। হয়তো সেই অযত্নে রাখা গৃহকোণে ছোট্ট একটা বুকশেলফ রেখে, এক টুকরো শতরঞ্জি বিছিয়ে নান্দনিকতা যোগ করার মাহেন্দ্রক্ষণ হবে নতুন বছর।
এমন সব পরিকল্পনার কথা ভাবতে ভাবতেই নতুন বছরে ঘরে নতুনত্বের ছোঁয়া আনার কয়েকটি উপায় নিয়ে আজ লিখলাম।
দেয়ালে ছোট-বড় আর্টওয়ার্ক বা কোট ফ্রেম করে লাগানো যেতে পারে
দেয়ালে নতুনত্বের ছোঁয়া
একটি ঘরের আবহ বা অ্যাম্বিয়েন্স (ambience) তৈরির ক্ষেত্রে রঙের ভূমিকা অনেক বেশি। একটা ঘরে ঢুকেই সবার আগেই ঘরের রংটা চোখে পড়ে। তাই দেয়ালের রং পরিবর্তনের মাধ্যমে ঘরে সহজেই নতুনত্ব নিয়ে আসা যায়।
রং নির্ধারণে ঘরের আকারের দিকে লক্ষ রাখা জরুরি। ছোট স্পেসে হালকা রং স্নিগ্ধ অনুভূতির আবেশ ছড়ায়। সাধারণত হালকা নীল, সবুজ, বেগুনি এবং সাদা এই রংগুলো আমাদের চোখে শান্তি দেয়, মনকে শান্ত করে। নীল রঙের ক্ষেত্রে পাউডার ব্লু, পেইল ব্লু, নীলাভ সবুজ চাইলে টিল শেডের রংগুলো ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ক্রিম বেইজ বা হালকা গ্রে রং ব্যবহার করা যায়, যা আপনার ছোট ঘরকেও বড় দেখাতে সাহায্য করবে।
আর ঘর বড় হলে একটি দেয়ালকে একটু ভিন্ন রং করে বাকি দেয়ালগুলো নিউট্রাল বা হালকা রং করলে মানানসই দেখায়। গাঢ় রং রুমে একটা বোহেমিয়েন আবহ আনে; তবে সে ক্ষেত্রে ঘরের বাকি সামগ্রীগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া জরুরি। দেয়ালের রং নির্ধারণের ক্ষেত্রে আসবাবপত্র এবং ঘরটি কী কাজে ব্যবহার করা হয়, সেটি অনেক বড় ভূমিকা পালন করে।
প্রিয় মুহূর্ত বা প্রিয়মুখের ছবি, প্রিয় কোনো উক্তি বা কবিতার পঙক্তি, আয়না, মাটির ফ্রেম, পটচিত্র বা যেকোনো মানানসই নান্দনিক জিনিস দিয়ে ঘরের দেয়াল সাজানো যায় সহজেই। চিকন মেটাল কিংবা কাঠের ফ্রেম এখন বহুল প্রচলিত। ছবি বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও একই কালার প্যালেট মেইনটেইন করলে সেটি ঘরকে আরও নান্দনিক করে তোলে। প্রিয় মানুষের ছবি ঘরকে করে আপন, ভালো লাগা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।
আসবাবের সাথে মানানসই রং ব্যবহার করতে হবে
আসবাবে নান্দনিকতা
বহুদিন ধরে ঘরে থাকা আসবাবে একঘেয়েমি চলে আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে আসবাবপত্র নতুনভাবে রং করা, হ্যান্ডেল বদলানো বা খানিকটা অংশ বদলে ফেললে পুরোনো আসবাবেই নতুন লুক সম্ভব। শোবার ঘর প্রথম সাজানোর সময় অনেক সময়ই দেখা যায় বেডসাইড টেবিল কেনা হয় না। খাটের পাশে এটা একটি বেডসাইড টেবিল থাকা অনেক জরুরি। সে ক্ষেত্রে নতুন বছরে খাট এবং শোবার ঘরের অন্যান্য আসবাবের সাথে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু আসবাব যোগ করা যেতে পারে। সে রকমই একটি আসবাব হতে পারে Dunham-107। একই সাথে চেয়ার আর টু স্টেপ ল্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা যায় এই চেয়ারটিকে।
এ ছাড়া প্রতিবছরই আমাদের ঘরে বাড়তি জিনিস রাখার জায়গার প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে নতুন আসবাবও যুক্ত করা যায় ঘরে। তবে এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে পুরো ঘরের সাথে যেন আসবাবটি মানানসই হয় এবং অতিরিক্ত মনে না হয়। যেমন স্মার্টফিট আসবাবপত্র খুব সহজেই ঘরের যেকোনো জায়গাতে মানিয়ে যেতে পারে। যারা বড় ধরনের নতুন আসবাব যেমন খাবার টেবিলের কথা ভাবছেন তাঁরা দেখতে পারেন স্মার্ট স্মার্টফিট ডাইনিং টেবিল Seasame-101 and Yogurt-101; এটি যেমন ঘরের জায়গা সাশ্রয় করে তেমনি প্রয়োজনও মেটায়।
স্মার্টফিট Dunham-107 প্রয়োজন মেটায় এবং জায়গা বাঁচায়
পর্দাতে পরিবর্তন
ঘরে আলো আর বাতাসের প্রবাহ নিশ্চিত করতে পর্দার গুরুত্ব অনেক বেশি। ঘরে পরিবর্তন আনতে পর্দার জুুড়ি নেই। পর্দার রং, টেক্সচার౼সবকিছুই ঘরের চেহারা পাল্টে ফেলতে পারে। দেয়ালের রঙের সাথে মানানসই পর্দা ব্যবহারে ঘরের সৌন্দর্য অনেকখানি বেড়ে যায়। ছোটবেলা থেকে সিনেমায় দেখে আসা বিশাল জানালাতে সাদা পর্দাকে রোমান্টিসাইজ করার একটা প্রবণতা আমাদের মাঝে থাকলেও ধুলাবালুর এই শহরে সাদা পর্দা ব্যবহার করা কিছুটা বিড়ম্বনাও বটে।
পর্দার রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেয়ালের সাথে কনট্রাস্ট করা যেতে পারে। দেয়াল গাঢ় রংয়ের হলে পর্দা হালকা রংয়ের বেছে নিতে পারেন। আবার হালকা রংয়ের দেয়ালের সাথে গাঢ়, উজ্জ্বল রঙা পর্দা মানানসই হবে। পর্দা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঋতু দেখে নেওয়াটা সুবিধাজনক। শীতকালে যেমন ভারী পর্দা বেশি উপযোগী, তেমনি গরমকালে হালকা পর্দা বাতাস চলাচলের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী।
ঘরের সাজসজ্জায় নতুন মাত্রা
ঘরে সাজসজ্জার নানান অনুষঙ্গ ব্যবহার করা যেতে পারে। শোপিস রাখার জন্য ছোট স্ট্যান্ড ঘরের নান্দনিকতা অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। শোকেসে সব জমিয়ে রাখার দিনগুলোতে এখন পরিবর্তন এসেছে। শোপিস কিংবা বই রাখার জন্য ফ্লোটিং কেবিনেট বেশ উপযোগী।
বসার ঘরে রঙিন সোফা ঘরের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ আর ঘরকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। ঘরের রঙের সাথে কন্ট্রাস্টিং সোফার ব্যবহার ঘরকে নান্দনিক লুক দেয়। যারা নতুন বছরে ঘরের সোফা বদলে ফেলার কথা ভাবছেন তাঁদের জন্য হাতিলের Atlanta-270 , Cardiff-253, Sofa-surray-107 ভালো অপশন হতে পারে।
Sofa-surray-107 ঘরকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে
সবুজের ছোঁয়া
প্রকৃতির সাথে আমাদের সম্পর্ক শারীরিক, মানসিক এবং আত্মিক। দালানকোঠায় বসে কোথায় যেন প্রকৃতিকে কাছে না পাওয়ায় একটা শূন্যতা তৈরি করে। সে ক্ষেত্রে ঘরের মাঝেই প্রকৃতির অনুপ্রবেশ আমাদের মানসিক প্রশান্তি দেয়।
অন্দরে সবুজের ছোঁয়া ঘরকে নতুন এক মাত্রা দেয়। আর গাছের কারণে ব্যালকনিতে পাখির আগমন দেখা যায়, অনেক অদ্ভুত সব পাখি এখনো যে ইট-কাঠের শহরে টিকে আছে, সে বিষয়টা আপনাকে যেমন অবাক করবে তেমনি মনকে আনন্দে ভরিয়ে তুলবে। ইনডোর প্ল্যান্টস ঘরের পরিবেশকে আরও বেশি মনোরম করে তোলে। ঘরের একটা কোণে গাছ, চেয়ারের মাধ্যমে একটা নিজের কর্নার তৈরি করে ফেলা যায় খুব সহজেই। এ ক্ষেত্রে হাতিলের Twinkle-101, Pedro-109 খুব সহজেই ঘরের যেকোনো জায়গায় মানিয়ে যেতে পারে।
মেঝেতে শতরঞ্জি
মেঝেতে আরাম করে বসে ধোঁয়া ওঠা ভাপা পিঠা খাওয়ার সময় এখনই। সে ক্ষেত্রে ঘর সাজানোর নতুন এক অনুষঙ্গ হচ্ছে শতরঞ্জি।
ঘরের একটা কোণে শতরঞ্জি পেতে তাতে কয়েক ধরনের কুশন দিয়ে খুব সহজেই একটি আরামদায়ক বসার জায়গা তৈরি করা সম্ভব। কার্পেটের তুলনায় শতরঞ্জির দাম কিছুটা কম, সেই সাথে দেশীয় পণ্য। বর্তমানে নানান সাইজের আর নানান ধরনের শতরঞ্জি বাজারে পাওয়া যায়। শুধু মেঝেতে নয় চেয়ারে কিংবা টেবিলেও হালকা ধরনের শতরঞ্জির ব্যবহার দেখা যায়। ঘরে শতরঞ্জি ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। ধুলাবালু পরিষ্কার করা এবং ঠিকঠাক রোদে না দিলে এই শতরঞ্জিই নানা ঠান্ডাজনিত অসুখের কারণ হতে পারে।
ঘর আমাদের এক নির্ভরতার জায়গা, আপন জায়গা। সেই জায়গাটিকে আরও নান্দনিক মনোরম করে তোলা সম্ভব অল্প কিছু পরিবর্তনেই। নতুন বছর শুভ এবং সুন্দর হোক সবার জন্য।