Hatil- Wooden furniture Care Hatil- Wooden furniture Care

কাঠের আসবাবপত্রের যত্নঃ আপনার কাঠের ফার্নিচার নতুনের মতো রাখার জন্য টিপস

ফার্নিচারের নানা রকমভেদের মধ্যেও জনপ্রিয়তায় বরাবরই শীর্ষ স্থানে থেকেছে কাঠের তৈরি ফার্নিচার। ভালো মানের কাঠ দিয়ে তৈরি ফার্নিচার গুণ এবং মানে উন্নত হওয়ায় কোনোরকম ক্ষতি ছাড়াই টিকে থাকতে পারে বছরের পর বছর। তবে সঠিক যত্নের অভাব এবং অবহেলার কারণে সবচেয়ে ভালো ফার্নিচারও নষ্ট হয়ে যেতে পারে অল্প সময়ে। তাই কাঠের ফার্নিচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে যত্নের বিষয়টিও গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। এ বিষয়ে সাতটি পরামর্শ তুলে ধরা হলো। 

কাঠের ফার্নিচার পরিষ্কার করার উপায়

১/ রোদের উত্তাপ থেকে বাঁচতে

সূর্যের আলোর উত্তাপ সারাবছরই কমবেশি থাকে। তবে ঋতু ভেদে এই উত্তাপের কিছুটা তারতম্য ঘটতে পারে৷ উত্তাপ যেমনই হোক, রোদের মধ্যে কাঠের ফার্নিচার রাখবেন না। এতে কাঠের রঙ নষ্ট এবং হালকা হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া কড়া রোদের তাপে কাঠে ফাটলও দেখা  পারে। সূর্যের ক্ষতিকারক অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে ফার্নিচারের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া এড়াতে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে এমন স্থানে ফার্নিচার রাখা থেকে বিরত থাকুন। 

ঘরের মধ্যে খুব রোদ এলে ভারি পর্দা ব্যবহার করুন। পর্দার মাধ্যমে শুধু সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মিই নয়, ঘরে সূর্যের উত্তাপও ঢুকতে বাধা পাবে। পর্দার বিকল্প হিসেবে উইন্ডো ফিল্মও লাগাতে পারেন। এই উইন্ডো ফিল্ম সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব কমাতে সাহায্য করে। ফলে এরাও ফার্নিচারকে সূর্যের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। 

২/ তাপীয় উপাদান কিংবা তরল থেকে সাবধান 

কাঠের ফার্নিচারে কখনও পানি জাতীয় কিছু রাখা যাবে না। পানির গ্লাস কিংবা তরল কোনো কিছু রাখতে সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পানির গ্লাস কিংবা পাত্র ছাড়াও কোনো ভেজা কাপড় কাঠের ফার্নিচারের উপর রাখলে কাঠে এক প্রকার সাদা দাগ বসে যায়, যা পরবর্তীতে পরিষ্কার করা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। 

অনেক সময় কাঠের ফার্নিচারে লেগে থাকা ময়লা পরিস্কার করতে গিয়ে তাতে আঁচড়ের দাগ পড়ে যায়। এই দাগ তুলতে সামান্য বেকিং সোডার সঙ্গে পানি মিশিয়ে নিয়ে তাতে একটি নরম কাপড় ভিজিয়ে দাগের জায়গাটি মুছে দিতে পারেন। 

 

Hatil- dining table Seasame-101 and Yogurt-101

 

কোনো ফার্নিচারের উপরই কখনও সরাসরি গরম জিনিস রাখবেন না। ডাইনিং টেবিল এর উপর কোনো টেবিল ক্লথ কিংবা কাপড় না থাকলে কমপক্ষে একটি সাদা কাগজ বা পত্রিকা বিছিয়ে তার উপর গরম জিনিস রাখুন। আপনার ঘরের কাঠের ফার্নিচারের উপর গরম কিছু রাখার কারণেও ফার্নিচারের উপর দাগ পড়ে রং নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই এইক্ষেত্রে নরম কাপড়ে কর্পূর কিংবা স্পিরিট নিয়ে নির্দিষ্ট স্থানটিতে ভালো করে ঘষে দাগ তুলে ফেলুন। কাঠের ফার্নিচারের উজ্জলতা ফিরিয়ে আনতে হোমমেড পলিশ ব্যবহার করতে পারেন। মাসে একবার কাঠ মুছলেই উজ্জল দেখাবে।  

৩/ পরিস্কারে ভেজা কাপড় নয়

কাঠের ফার্নিচার সব সময় শুকনো কাপড় দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। দিনের একটা সময় নিয়ম করে প্রতিদিন ফার্নিচারের গায়ে পড়া ধূলা শুকনো নরম সুতির কাপড় দিয়ে মুছে নিতে হবে। এতে করে কাঠের ফার্নিচারের গায়ে ধূলা জমে যাবে না। বেশি সময় ধরে জমে থাকা ধূলার কারণে কাঠের উপর জীবাণু বা ব্যাকটেরিয়া জন্মে ফার্নিচারের ক্ষতি করতে পারে। এমন কি কাঠের পলিশও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। 

 

কাঠের ফার্নিচার পরিস্কারে ভেজা কাপড় নয়

 

৪/ পোকামাকড় থেকে বাঁচতে

যে কোন কাঠের ফার্নিচারের অন্যতম প্রধান শত্রু ঘুণ পোকা। কাঠের আলমারি বা সোফাতে কিংবা যে কোন ফার্নিচারের এই পোকা আক্রমণ করতে পারে। পোকা ধরেছে এমনটা ঘটতে দেখলে দেরী না করে দ্রুততার সাথে পোকা মারার স্প্রে ব্যবহার করুন। ফার্নিচারের মধ্যে ন্যাপথলিন, কর্পূর রেখে দিন। এছাড়া মাসে একবার এক কাপ নারিকেল তেলের সঙ্গে কর্পূর মিশিয়ে ফার্নিচারের কোনায় দিয়ে রাখুন। এতে পোকা সমস্যার ভালো ফল পাবেন। 

যদি এতেও সমস্যার সমাধান না হয় তবে, পুরোনো খবরের কাগজ পেতে ভালো করে ডাস্টিং করে নিন। অন্যথায় ক্ষতিগ্রস্ত অংশটুকু কেটে নতুন কাঠ লাগিয়ে নিতে পারেন।  

৫/ বর্ষায় বাড়তি যত্ন

বর্ষাকালে সব কিছুরই বাড়তি যত্ন নিতে হয়। কাঠের ফার্নিচারও এর ব্যতিক্রম নয়। এ সময়ে কাঠের ফার্নিচারের যত্ন না নিলে তা নষ্ট হয়ে যায়। দেয়াল থেকে কাঠের আর্দ্রতা টানার প্রবণতা রয়েছে। তাই বর্ষাকালে দেয়াল থেকে কম করে হলেও ছয় ইঞ্চি দূরে রাখুন কাঠের ফার্নিচার। 

বর্ষায় ঘরের ফার্নিচারে প্রায়ই ফাংগাস পড়তে দেখা যায়। এতে বার্নিশ নষ্ট হয়ে যায়। এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে বর্ষার শুরুতেই রেকটিফাইড স্প্রিট দিয়ে ফার্নিচার মুছে নিন।  

 

বর্ষায় কাঠের ফার্নিচারে বাড়তি যত্ন

 

বর্ষাকালে কাঠের ফার্নিচার নিরাপদে রাখার একটা ভালো উপায় হচ্ছে অলিভ অয়েল এবং তিসির তেল দিয়ে নিয়মিত ফার্নিচার মোছা। এতে করে কাঠের ফার্নিচার শুকনো থাকবে এবং স্যাঁতসেঁতে ভাবও থাকে না। 

৬/ ছুটিতে ফার্নিচার ঢেকে রাখার অভ্যস্ততা

আপনি হয়ত কোথাও বেড়াতে যাবেন ছুটিতে, বাসা খালি পড়ে থাকবে তখন। সে সময়টায় নিয়মিত পরিস্কারের অভাবে বাসার ফার্নিচারে ধূলা জমে যেতে পারে৷ 

এই অসুবিধা এড়াতে আপনার বাসা থেকে দূরে থাকাকালীন সময়ের জন্য আপনার বাসার ফার্নিচারগুলোকে বড় কোনো কভার দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা উচিত। এটি কেবল এই ধুলা-ময়লা থেকে রক্ষা করবে না, এটি আপনার বাসায় ফার্নিচারের উপর দীর্ঘ মেয়াদি বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি হওয়া থেকেও রক্ষা করবে। 

৭/ স্থানান্তরেও হতে হবে সাবধান

বাসা বদলানোর ক্ষেত্রে ফার্নিচার এক বাসা থেকে অন্য বাসায় স্থানান্তর করতে হয়। আবার একই বাসাতেই কিছু দিন পরপর ফার্নিচারের জায়গা অদল বদল করে থাকেন অনেকেই। এক্ষেত্রে ফার্নিচার স্থানান্তরে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।

 

ফার্নিচার স্থানান্তরেও হতে হবে সাবধান

 

আধুনিক ফার্নিচার গুলোতে অনেক সময় বিভিন্ন ভাবে বাঁকানো এবং ভিন্ন আকারের অংশ লক্ষ্য করা যায়। এই ধরনের ফার্নিচার সরানোর সময় সেগুলোর কথা মাথায় রাখতে হবে।

কাঠের ফার্নিচার নাড়াচাড়া করার ক্ষেত্রে পাপোস ব্যবহার করতে পারেন। এতে ফার্নিচারের নিচের অংশে দাগ পড়া বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। 

স্থানান্তরের সময় ফার্নিচারের জয়েন্টগুলো লক্ষ্য করুন এবং সংকীর্ণ জয়েন্টগুলোতে যাতে বেশি চাপ না পড়ে সে সম্পর্কে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করুন, যাতে সেগুলো ভেঙে না যায়।

কাঠের ফার্নিচার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানোর সময় শক্ত জায়গাটা ধরে সরান। না হলে ফার্নিচারের জয়েন্টগুলো আলগা হয়ে যেতে পারে। যেমন চেয়ার সরানোর সময় বসার অংশটা ধরে সরাবেন, আবার টেবিলের ওপরের অংশ ধরে তোলার পরিবর্তে পায়া ধরে সরাবেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।