আমাদের অস্তিত্ব আমাদের নিজের কাছে ভীষণ প্রিয়। আর আমার আমাকে আমারিই সম্মুখে দেখানোর এবং আমাকে সাজিয়ে তোলার একমাত্র গুরুদায়িত্ব এই স্বচ্ছ কাঁচের আয়নার অথবা তার এই আধুনিক যুগের দেওয়া নাম তথা – “ড্রেসিং টেবিলের।”
“ড্রেসিং টেবিল” যার অনন্য তম বৈশিষ্ট্য হলো আমাদেরকে সাজিয়ে তোলা। একটু সুখ্যাতি করে একে সাজঘর নামে ডাকা যেতেই পারে। ড্রেসিং টেবিল নিজেকে আত্মবিশ্বাসী করতে সাহায্য করে। কেননা ড্রেসিং টেবিলে আপনার নিজের মায়াবী, অভিমানী কিংবা প্রতিবাদী মুখটি দেখে ভেতরে ভেতরে সেলফ অবসেশন কাজ করা শুরু করে। তাই একে আমরা “আত্মবিশ্বাসের আয়না ” ও বলতে পারি।যার নিত্য বেলার কাজ আমাদের সাজিয়ে তোলার , যে প্রতিনিয়ত আমাদের সাজ সামগ্রী নিজের মাঝে বহন করে থাকে ; তাকে আমরা একটু আধটু সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখতেই পারি। গিভ এন্ড টেক বলে তো একটা সংজ্ঞা জীবন থেকেই যায়।
ড্রেসিং টেবিল আমাদের জীবন কিংবা বেড রুমের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ড্রেসিং টেবিলে চিপকে থাকা আয়নায় আমরা নিজেকে দেখতে পাই , আর নিজেকে প্রস্তুত অবস্থায় না দেখে তো আর জীবনের একটি দিন শুরু করা যায় না। সেক্ষেত্রে ড্রেসিং টেবিল না থাকায় আগামী দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে একটু অসুবিধা হতে পারে। এছাড়া আমরা আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সাজসজ্জার সরঞ্জাম ড্রেসিং টেবিলেই রেখে থাকি , মূলত যে কাজের জন্যই এ ফার্নিচারটির অস্তিত্ব। তাছাড়াও ড্রেসিং টেবিল আমাদের শোবার ঘরের শোভা বাড়িয়ে তোলে।
সাজসজ্জা, সৌন্দর্য্য বর্ধন কে না পছন্দ করে। আর পরিচ্ছন্ন-পরিপাটি এবং গোছানো বাড়ি দেখতে কার না ভালো লাগে। আমরা আমাদের বাড়িতে এসেই সবচেয়ে দীর্ঘ শান্তির নিঃশ্বাস টুকু ছাড়ি। একটি বাড়িতে তো আর এমনি এমনিই বসবাস করা যায় না , প্রয়োজন নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু আসবাবপত্র । তন্মধ্যে “ড্রেসিং টেবিল” আজকের আলোচনাটি চুরি করে নিয়েছে।
গিভ এন্ড টেকের সূত্র অনুযায়ী এখন “ড্রেসিং টেবিল” কে সাজানোর পর্যায়। আমরা আমাদের ড্রেসিং টেবিল কে নানাভাবে সাজাতে পারি। তাই আমরা দিচ্ছি ড্রেসিং টেবিলকে সাজানোর ৫ টি টিপস্ । যা নিম্নে দেয়া হলো-
১. প্রথমত আমরা আমাদের পছন্দসই ডিজাইনের এবং আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে পারে এমন ধরনের একটি ড্রেসিং টেবিল আমাদের বেড রুমের জন্য ক্রয় করতে পারি। কেনার পর সবার আগে এটিকে গোছানোর জন্য যে বিষয়টি মাথায় আসে তা হলো – ঘরের কোন পাশ টায় রাখলে ঘরের সৌন্দর্য্য বর্ধন পাবে এবং আমাদের আয়নায় নিজেকে দেখতে সুবিধা হবে । অর্থাৎ ঘরের যে দিক থেকে আলো আসে সে দিকে পেছন দিলে বাহির থেকে আগত সূর্যের আলো টি আমাদের চেহারার উপর পরবে এবং আমাদের ড্রেসিং টেবিলের সামনে তৈরি হতে সুবিধা হবে।
অনেকসময় আমাদের কিছু কিছু বাড়িড় কোনো কোনো ঘরের ক্ষেত্রে জানালা থাকে না , আর তাই প্রাকৃতিক আলো ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। তখন আমরা একটি ভালো লাইটিং সিস্টেম দ্বারা ড্রেসিং টেবিলের সামনে তৈরি হতে পারি। আর এতে করে ড্রেসিং টেবিল ও বেড রুম উভয়ের সৌন্দর্য্যই বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও ড্রেসিং টেবিলটির আয়না বাইরের ধুলোবালি দিয়ে ঘোলা ও অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়, তখন একটি গ্লাস ক্লিনার দিয়ে আমরা সুন্দর করে আয়না পরিষ্কার করতে পারি। এতে করে ড্রেসিং টেবিলের আয়না টি দেখাবে স্বচ্ছ ও পরিষ্কার।
২.আমরা আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় প্রসাধনী সামগ্রী , জুয়েলারি ড্রেসিং টেবিলের পার্টে পার্টে গুছিয়ে রাখতে পারি। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার গুলোতে প্রয়োজন অনুসারে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত সামগ্রী গুলো ক্রমানুসারে সাজাতে পারি। যেমন – যে সামগ্রী টি আমাদের আগে ব্যবহার করতে হয় এবং অধিক প্রয়োজনীয় সে সামগ্রী টি আমরা সবার ওপরের ড্রয়ারে রাখতে পারি। তাতে সময়ও বেঁচে যাবে এবং ড্রেসিং টেবিলটি গোছানো ও পরিপাটি দেখাবে।
৩. আমাদের মনে বাসনা কিংবা শখের কমতি নেই। আমরা অনেকেই কসমেটিকস বা জুয়েলারির ক্ষেত্রে কিছু ব্র্যান্ডেড কোম্পানির কসমেটিকস , জুয়েলারির কিনতে পছন্দ করে থাকি। তাই আমরা ড্রেসিং টেবিলের একটা অংশ যেটা ফাঁকা থাকে এবং দেখা যায় এমন অংশে সেগুলো গুছিয়ে রাখতে পারি। এতে করে ড্রেসিং টেবিলের সৌন্দর্য্য বেড়ে যায় । সামগ্রী গুলো হতে পারে – ব্র্যান্ডেড পারফিউম, মেকআপ কিটস্ এন্ড ব্রাশেস , ব্র্যান্ডেড ময়েশ্চারাইজার ক্রিম, পার্ল জুয়েলারি , ব্র্যান্ডেড হাত ঘড়ি ইত্যাদি।
৪. ব্যবহার্য দ্রব্যাদি ধরন অনুসারে সাজানো যেতে পারে। যেমন – একটি ড্রয়ারে পারফিউম , অন্যটি তে চুলের যত্নে ব্যবহৃত সামগ্রী – তেল,শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, সিরাম এবং জেল ইত্যাদি। এছাড়াও নান্দনিকতায় সজ্জিত একেকটি বক্সে আলাদা আলাদা জিনিস রাখা যেতে পারে। আবার বক্সের গায়ে এঁকে চিহ্নিত করে রাখা যেতে পারে। যেমন – চোখ সাজানোর বক্সটি তে চোখ এঁকে রাখা যেতে পারে এতে করে একটু ভিন্ন রুচি তৈরি হয়। আবার গহনার সেকশনও পৃথক পৃথক করে রাখা যেতে পারে। যথা- রৌপ্য ও স্বর্ণ অলংকার গুলো টিস্যু পেপারে মুড়িয়ে সুন্দর একটি গহনা বাক্সে সাজিয়ে ড্রেসিং টেবিলে রাখা যেতে পারে।
৫. শৌখিন ও শেষ উপায়টি হচ্ছে আমরা আমাদের ড্রেসিং টেবিলটি বিভিন্ন শোপিস দ্বারা সাজিয়ে রাখতে পারি। এছাড়াও একটি ফ্লাওয়ার ভাসে কখনও তাজা অথবা কৃত্রিম ফুল দিয়ে সাজানো যেতে পারে। আপনি একটি ফোটোফ্রেমে করে আপনার অথবা আপনার প্রিয়জনের সাথে একটি সুন্দর ছবি ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখতে পারেন। যদি ড্রেসিং টেবিলটির ওপরে একটু গোল্ডেন লাইট দিয়ে আলোকিত করা যায় , তাহলে আপনার ঘরের শোভার আলোয় ছড়িয়ে যাবে আপনার মনের সন্তুষ্টি পর্যন্ত।
এভাবেই আপনি সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার পছন্দের ড্রেসিং টেবিলটি । যা কিনা প্রতিদিন একটি সুন্দর আপনাকে আপনার নিজের কাছে উপহার দেয়। নতুন সাজে সেজে উঠুক আপনার সাজঘর , সেজে উঠুন একটি সুন্দর আপনি।