আজ আমার বেশ মন খারাপ। কালকের চেয়েও বেশি। ইদানীং কেন যেন হুটহাট এমন হয়। কেন হয় আমি জানি না। আম্মুকেও বলেছি এই মন খারাপের কথা। আম্মু বলেছে দূরে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যাবে, কিন্তু কিছুদিন পরে। ঘরে থাকার এই কঠিন দিনগুলো কবে কাটবে? সে পর্যন্ত কি আমার এমন মন খারাপের দিনগুলো থাকবে? নাকি এর আগেই কেটে যাবে?’
এইটুক লিখে তিতিন ডায়েরি বন্ধ করল। আর লিখতে ইচ্ছা করছে না তার। এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। একদিন তিতিনকে ডেকে মা বলল, ‘কিরে তোর কি এখনো মন খারাপ লাগে? যাবি কোথাও ঘুরতে?’ তিতিন হাসি মুখে বলল, ‘না মা, প্রয়োজন নেই। এখন আর আমার মন খারাপের সুযোগ নেই।’
তিতিনের কথা শুনে বেশ অবাক হলো তার মা। নিশ্চয়ই আপনিও হচ্ছেন। কি এমন হলো যে হঠাৎ তিতিনের এমন পরিবর্তন। এমন হুটহাট মন খারাপ নিশ্চয়ই আপনারও হয়। এখন ভাবছেন তিতিনের উপায়টা জানা থাকলে বেশ হতো! চলুন তাহলে জেনেই নেয়া যাক তিতিনের মন ভালো হওয়ার সেই উপায়।
তিতিন তার ঘরের সজ্জায় এনেছে বিরাট পরিবর্তন। এমন পরিবর্তন যা সম্পূর্ণভাবে বদলে দিয়েছে তার ঘরের রূপরেখা। আর এটিই তার মন ভালো করে দেয়ার রহস্য। ভাবছেন মজা করছি? তাহলে শুনুন, গবেষণায় দেখা গেছে জীবন জুড়ে আমাদের সুখী হওয়ার কারণের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ জুড়ে থাকে আমাদের ঘর। শুধু তাই নয়, নিজের ও নিজের ঘরের মধ্যে ছোট ছোট সব পরিবর্তন বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য ও অভ্যাসের উপর। বুঝতেই পারছেন মনের ওপর গৃহসজ্জার প্রভাব কত বেশি! এবার আসুন জেনে নেই তিতিন কী কী পরিবর্তন এনেছে তার ঘরে ।
আগে তিতিন বেশ অগোছালো প্রকৃতির ছিল। কিন্তু গৃহসজ্জার মাধ্যমে জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হলে পরিপাটি থাকার অভ্যাস থাকা চাই অবশ্যই। মনের অজান্তেই চাপ ও অশান্তি সৃষ্টির একটি বড় কারণ অগোছালো ঘর। একবার ভেবে দেখুন আপনার গোছানো ঘরের কারণে সকালে তাড়াহুড়োর সময় ঘড়ি, চশমা কিংবা মানিব্যাগের মতো প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে যাচ্ছেন হাতের কাছে। বেঁচে যাচ্ছে সময়। সেই সময় আবার কাজে লাগাতে পারছেন নিজের পছন্দের কোন কাজে। ভাবতেই ভালো লাগছে তাইনা? তাই জীবনের বাড়তি চাপ কমাতে তিতিনের মতো আপনারও গড়ে তুলতে হবে গুছিয়ে চলার অভ্যাস।
গুছানো ঘর মনে আনবে প্রশান্তি
ঘরকে আরও বেশি নিজের করে নেয়ার আরেকটি উপায় হল ঘর সজ্জার উপাদানে রাখুন এমন সব জিনিস যা আপনার মুখে হাসি ফোটায় মুহূর্তেই। যেমন তিতিন ছবি আঁকতে ভালোবাসে। বেশ ভালো আঁকেও সে। তাই তার ঘরকে সে সাজিয়েছে লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ও পাবলো পিকাসোর মতো তার প্রিয় সব চিত্রকরদের আঁকা ছবি দিয়ে। ঠিক তেমনি আপনিও আপনার ঘর সাজাতে ব্যবহার করুন এমন কিছু যা আপনাকে আনন্দ দেয়। তা হতে পারে আপনার তোলা ছবি কিংবা আপনার পছন্দের কোন ব্যান্ডের পোস্টার। ঘর থেকে আনন্দ লাভ করার সবচেয়ে সহজ ও সুন্দর উপায় বোধ হয় এটিই।
ঘর সাজুক প্রিয় জিনিসে
যেহেতু দিনের বেশিরভাগ সময়ই আমাদের কাটে নিজের ঘরে সেক্ষেত্রে ঘরের ফার্নিচারগুলো আমাদের মনের অবস্থার উপর প্রভাব ফেলতে বেশ বড় ভূমিকা পালন করে। যেমন ঘুম ভালো না হওয়া মানেই সারাদিন মেজাজ খিটখিটে থাকা। তাই আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই ঘরে রাখতে হবে এমন সব ফার্নিচার যা হবে আপনার জন্য হবে আরামদায়ক। এক্ষেত্রে তিতিন তার ঘরের জন্য বেছে নিয়েছে হাতিলের বিছানা ও ম্যাট্রেস। আবার কাপড়ের মধ্যে লিনেন যেহেতু বেশ নরম, আরামদায়ক ও সব ঋতুতে ব্যবহারের উপযোগী, তাই বিছানার চাদরের কাপড়ের জন্য সে বেছে নিয়েছে লিনেনকে। সেইসঙ্গে ঘরে এনেছে কিছু স্মার্টফিট ফার্নিচার। ঘরভর্তি এলোমেলো আসবাব না রেখে স্মার্টফিটের মতো ফার্নিচার ব্যবহারের ফলে ঘরে আসে ছিমছাম ও নান্দনিক রূপ। সেই সাথে জায়গা বেঁচে যাওয়ার কারণে পর্যাপ্ত হাঁটার জায়গাও পাওয়া যায়। যা আপনার মনকে নিমিষেই স্থির করতে সাহায্য করবে ।
ঘরে আরামদায়ক আসবাব থাকা চাই অবশ্যই
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ঘরে মাঝারি ধরনের একটি গাছের কারণে ঘরের বাতাসে বিশুদ্ধতার পরিমাণ বেড়ে যায় ২৫% এর চেয়েও বেশি। এই তথ্য জানার পর তিতিন আর দেরি না করে চার পাঁচটা ছোট ও মাঝারি ধরনের গাছ নিয়ে আসল তার ঘরে। প্রকৃতির সান্নিধ্য আমাদের জন্য সবসময়ই আনন্দময়। আর যদি নিজের ঘরেথেকেও প্রকৃতির সান্নিধ্য পাওয়া যায় তাহলে তো আর কথাই নেই! তাহলে আর দেরি কেন? আজই নিজের ঘরকে করে তুলুন স্নিগ্ধ সবুজ ভুবন।
সবুজে আসবে স্নিগ্ধতা
‘কালার ফিলোসফি’ যে গৃহসজ্জার একটি অন্যতম উপকরণ তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রঙ আমাদের মানসিক অবস্থার উপর অন্যান্য যেকোন উপকরণের চেয়ে বেশি প্রভাব রাখে। তাই এর গুরুত্বটাও বেশি। একেক রঙ মানুষের একেক আবেগের বহিঃপ্রকাশ। তাই ঘরের জন্য রঙ বাছাইয়ের জন্য নিজেকে জানা খুবই জরুরী। সঠিক রঙগুলো আপনাকে দিবে প্রশান্তি, আবার ভুল কালার স্কিম আপনার অহেতুক হতাশা ও মানসিক চাপের কারণও হতে পারে। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য তিতিনের মতো আপনিও পছন্দের রঙগুলো ব্যবহার করুন ঘর রাঙাতে। সেটা যদি হয় কালো, নীল কিংবা ধূসর তাহলে প্রাধান্য দিন সেগুলোকেই। তবে এমনটা দেখা গিয়েছে, ঘরে উজ্জ্বল রঙ যেমন হলুদ কিংবা সবুজের ব্যবহার আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারে মনে আসবে প্রফুল্লতা
বিশেষ কোন ঘ্রাণ আমাদের এর সাথে জুড়ে থাকা মিষ্টি মধুর স্মৃতিগুলোকে তাজা করে তুলে। তাই প্রিয় সেই মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে ঘরে নিয়ে আসুন নিজের পছন্দের কোন সুগন্ধীযুক্ত মোম বা তেল। যা ঘরে সুবাস ছড়িয়ে ঘরের পরিবেশে তৈরি করবে মিষ্টি আবেশ। নিজেকে ভালো রাখার উপায়গুলোর মধ্যে এটি তিতিনের সবচেয়ে প্রিয়।
এতোকিছুর পরও যখন তিতিনের মন খারাপ হয় তখন সে কি করে? এমন সময়ের জন্য তিতিন তার ঘরেই একটি দোলনার ব্যবস্থা করেছে। যেখানে বসে কিছু সময় কাটালেই নাকি তার মনটা হালকা হয়। অর্থাৎ ঘরে এমন কিছু আনুন যেখানে আপনি খুঁজে পাবেন নিজেকে, যা আপনার মনকে করবে শান্ত, দিবে মানসিক প্রশান্তি। সেটা হতে পারে বুক কর্নার কিংবা গ্যালারি ওয়াল অথবা ঘরের মাঝেই নিজের ছোট্ট স্টুডিও।
ঘরের একটি কোণ হোক শুধুই নিজের
তিতিনের নতুন রূপে সাজানো ঘর এখন তার নিজে হাতে সাজানো এক নিজস্ব জগৎ। এখন তার মনে হয় আরও আগে যদি মন ভালো রাখার এই সহজ উপায়ের কথা জানা যেত, তাহলে কতোই না ভালো হতো!