শহরের ব্যস্ত জীবনে মানসিক শান্তি বজায় রাখতে নিজেকে সময় দেওয়াটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে
মানুষের ঘর হওয়ার কথা তার সবচেয়ে শান্তির জায়গা। তবে এই কংক্রিটের জঙ্গলে শান্তি পাওয়াটা বড় মুশকিল। নিজের ঘরে থেকেও অনেক ব্যস্ততা, দায়িত্ব আর কাজের ভারে, নিজেকে সময় দেওয়ার কথা প্রায়ই ভুলে বসে থাকি আমরা। ঘরের কোনো কোণে যদি ছোট্ট একটা জায়গা করা যায়, যা একেবারেই আপনার সম্পূর্ণ নিজস্ব , তবে নিজেকে সময় দেওয়ার ব্যাপারটা বেশ সহজ হয়ে যায়। হতে পারে সেটি বই পড়ার জায়গা, হতে পারে ছবি আঁকার নির্দিষ্ট একটু স্থান, আবার হতে পারে একা বসে এক কাপ চা খাওয়ার স্নিগ্ধ ভুবন।
ঘরের কোণে নিজের ভুবন কেন প্রয়োজন?
যদিও মানুষ সামাজিক জীব, বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে যে নিজের সাথে সময় কাটানোটা আমাদের মানসিক শান্তি বৃদ্ধির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নিজেকে জানার জন্য, নিজের সৃজনশীলতা বাড়ানোর জন্য নিজেকে সময় দেওয়াটা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এই নিজেকে সময় দেওয়ার জন্যই দরকার ঘরের কোণে নিজস্ব একটা ভুবন, যেখানে বাধাবন্ধনহীন স্বাচ্ছন্দ্যে করতে পারবেন আপনার প্রিয় কাজগুলো।
১. আরামদায়ক বসার জায়গা
শহরের অ্যাপার্টমেন্টগুলোয় নিজের জন্য একটা অংশ সাজাতে গেলে খুব বেশি জায়গা পাওয়া বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে না। সে ক্ষেত্রে অল্প জায়গায় একটা চেয়ার বসিয়ে একটু আরাম করার, নিজের সাথে সময় কাটানোর স্থান তৈরি করতে পারেন। নানা ধরনের ডিজাইনের অনেক চেয়ার বাজারে পাওয়া গেলেও ছোটখাটো আর্ম চেয়ার বা সোফাই বেশি উপযোগী হবে এই ক্ষেত্রে। হাতিলের প্রসপেরো-১১০ অথবা লোপেজ-১১৯ হতে পারে এমন জায়গায় একদম উপযুক্ত আসবাব। চেয়ারের ধরন ছাড়াও, এর আকারের ব্যাপারটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ঘরের আকার অনুযায়ী চেয়ারের আকারটা নির্ধারণ করে নিতে হবে, যাতে তা বাকি ফার্নিচারের সাথে বেমানান না লাগে। ঘরের রঙের থিমের সাথে মিলিয়ে অথবা নিজের সবচেয়ে পছন্দের রঙের চেয়ার যোগ করলে তা নতুন একটা মাত্রা যোগ করবে আপনার ডেকোরের সাথে।
অ্যাকসেন্ট চেয়ার প্রসপেরো-১১০
২. উপযুক্ত লাইটিং
আলোকসজ্জার বিশেষত্ব সহজেই বদলে দিতে পারে আবহ। নিজের সাথে সময় কাটাবেন যে জায়গায়, সেখানে আসলে আপনি কীভাবে সময় কাটাবেন, সেটি বুঝে আলোর ব্যাপারটি নির্ধারণ করুন।
যারা বই পড়তে চান তারা উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা রাখুন। পেনডেন্ট লাইট হতে পারে চমৎকার অনুষঙ্গ। আবার টেবিল ল্যাম্প বা রিডিং ল্যাম্পও রাখা যেতে পারে। যারা যোগব্যায়াম করার কথা ভাবছেন বা হয়তো শুধু ইজিচেয়ারে শুয়ে একটু আরাম করার কথা ভাবছেন, তারা উষ্ণ আলোর ব্যবস্থা করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে জায়গার আয়তন বুঝে রাখতে পারেন ল্যাম্পশেড বা টেবিল ল্যাম্প। অনেকে আজকাল ফেয়ারি লাইটস বা মরিচবাতি লাগিয়ে জানালা-দরজার পার্শ্ববর্তী জায়গা, বারান্দা বা দেয়ালের একাংশে বেশ মায়াবী আবহ আনেন, সেটিও হতে পারে আপনার মানসিক প্রশান্তির উৎস। এ ছাড়া নানা রকম সুগন্ধি মোমও আপনাকে দিতে পারে প্রশান্তির ছোঁয়া।
৩. সাইড টেবিল
শুধু বসার জায়গা আর লাইটিংই তো সব নয়, অবশ্যই শখের জিনিসপত্র রাখার জন্য আলাদা একটা জায়গার প্রয়োজন আছে। প্রিয় বই, রংতুলি, গান শোনার ছোট্ট একটা যন্ত্র অথবা চায়ের কাপ-পিরিচ, কেটলি౼এসব রাখতে প্রয়োজন মানানসই একটা সাইড টেবিল। নিজস্ব অন্য সব্য প্রয়োজনীয় জিনিসও রেখে দেওয়া যাবে এই বাড়তি স্টোরেজে। তবে টেবিলে যাতে জিনিসপত্র রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা থাকে, তা নিশ্চিত করতে হবে আগে থেকেই। হাতিলের ফ্রলিক-১০৯ বা এসেন্স- ১২০ এ ক্ষেত্রে বেশ মানানসই হবে। এই সাইড টেবিলগুলো খুব বেশি জায়গা যেমন নেবে না, তেমনি উপযুক্ত স্টোরেজের সুবিধাও দেবে।
৪. দেয়াল সজ্জা
ঘরের যে অংশে আপনি প্রশান্তির খোঁজে সময় কাটাবেন, সেখানে শিল্পের ছোঁয়া তো অত্যাবশ্যকীয়। এ ছাড়া ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতেও পেইন্টিং, ছবি এসবের জুড়ি নেই।
চেয়ারের পাশের ওয়ালে একটি ক্যানভাস বা ওয়াল আর্ট ঘরের কোণে আনতে পারে শৈল্পিক ছোঁয়া। পছন্দের আর্টিস্টের আঁকা ছবির ফ্রেমে বাঁধানো প্রিন্ট, নিজের বা প্রিয়জনের ফ্রেমবন্দী সুন্দর মুহূর্ত, কিংবা পছন্দের টিভি শো বা ব্যান্ডের পোস্টার౼যেকোনো ধরনের আর্টই পড়তে পারে এই শিল্পের আওতায়। ছবি আঁকার শখ থাকলে বাঁধাই করে নিতে পারেন নিজের আঁকা কোনো প্রিয় ছবিই। দেয়ালটা পুরোপুরি খালি না রেখে যদি রঙের সামান্য ছোঁয়া আনা যায়, তবে খারাপ হয় না। একঘেয়ে জীবনটা একটুখানি সুন্দর করে ফেলাই যেহেতু এই ‘নিজস্ব ভুবন’-এর উদ্দেশ্য , সেহেতু একঘেয়ে রঙের দেয়ালটি রাঙিয়ে নেওয়ার আইডিয়াটি কিন্তু দারুণ উপযোগী! আবার এই ভিন্ন রংই নিজের সাথে সময় কাটানোর এই জায়গাটিকে ঘরের বাকি অংশ থেকে আলাদা করতে সহায়ক হবে।
৫. শেলফ
ঘরের জন্য সঠিক শেলফ বাছাই করা জায়গা বাড়ানোর পাশাপাশি স্টোরেজ সমস্যাও সমাধান করতে পারে। আপনার নিজস্ব ভুবন তৈরিতে একটা ওয়াল শেলফ বা কর্নার শেলফই বদলে দিতে পারে পুরো ঘরের আবহ। ওয়াল শেলফ যেমন একধরনের দেয়াল সজ্জা, তেমনি আবার স্টোরেজ ব্যবস্থাও। ছোট গাছ, বই কিংবা শোপিস౼যেকোনো কিছু দিয়ে সাজিয়ে ফেলতে পারেন আপনার ওয়াল শেলফটি। ছোট জায়গার মধ্যেই নিজের রুচিবোধ প্রদর্শনের সবচেয়ে ভালো উপায় ওয়াল শেলফ।
ক্লডিও-১২৬ দিয়ে সহজেই সাজাতে পারেন কোনার খালি জায়গাগুলো
এসব প্রাথমিক জিনিসগুলো ঠিক করার পর পায়ের নিচে রাগ বা কার্পেট, আশপাশে ফুলের টব ইত্যাদি টুকিটাকি জিনিস নিজের ইচ্ছামতো যোগ করে নিতে পারেন। তাই দেরি না করে এক্ষুনি লেগে যান নিজেকে সময় দেওয়ার জন্য ছোট্ট একটা কোণ সাজাতে।