সুন্দর গোছানো শোবার ঘরে সময় কাটাটেও ভাল লাগে, আবার গেস্ট ও এরকম বেডরুম দেখে আপনার রুচির প্রশংসা করবে। তবে ছোট বেডরুম ডেকোরেশন করা অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জিং মনে হতে পারে। তাই আজকে আমরা বেডরুম সাজানোর ছবি-সহ বলবো কিভাবে সঠিক ডিজাইন টিপস এবং কৌশলের মাধ্যমে সহজেই আপনার ছোট বেডরুমটি স্বপ্নের মত করে তুলতে পারেন।
কেন ছোট বেডরুমকে সাজাবেন?
ছোট বেডরুম সাজানোর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি নিজের রুচির প্রকাশ করতে বেডরুম সাজানোর বিকল্প নেই। প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক বেডরুম সাজিয়ে কি কি উপকার পেতে পারেন—
- সঠিক সাজসজ্জা ছোট বেডরুমকে আরও আরামদায়ক ও উষ্ণ অনুভূতি দেয়।
- ছোট জায়গাকে সঠিকভাবে সাজালে ঘরের সব কর্ণার ব্যবহার করা যায়।
- পরিপাটি ও সুন্দরভাবে সাজানো রুম মন মানসিক চাপ কমায়।
- ছোট বেডরুমকেও স্টাইলিশ করে তোলা যায় যা আপনার ব্যক্তিত্বকে প্রতিফলিত করে।
- সাজানোর মাধ্যমে রুমের একটি বিশেষ অংশকে আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব।
- ছোট রুমে আলো ও রঙের ব্যবহারে রুমকে বড় এবং উজ্জ্বল দেখানো যায়।
- সুসজ্জিত রুম দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মকে আরও স্বচ্ছন্দ করে তোলে।
ছোট বেডরুমের ফার্নিচার আইডিয়া
ছোট বেডরুম সাজানোর জন্য সবার প্রথমে রুমের স্পেস প্ল্যানিং এবং লাইটিং এর বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি। এরপর পরিকল্পিতভাবে বিছানা, সিটিং এরেঞ্জমেন্ট, স্টোরেজ, টেবিল এসব সেট করতে পারলে যেকোনো সাইজের বেডরুমকেই সমসময় পরিপাটি রাখা যায়। চলুন কিভাবে এসব সিলেক্ট করবেন তা বিস্তারিত জেনে নিই—
ছোট বেড ও ম্যাট্রেস কিনুন
আজকাল বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের মাল্টিপারপাস বেড কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণ সময়ে সোফা হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অল্প জায়গার মধ্যে এগুলো গুছিয়ে রাখা খুবই সহজ। আবার শুধু বেড নিলেই হবেনা, বেডের সাথে ম্যাট্রেসের কোয়ালিটিও প্রিমিয়াম হতে হবে। ম্যাট্রেস দীর্ঘসময় ব্যবহারে পিঠে এবং ঘাড়ে ব্যথা হয় এবং অনেক সময় স্পাইনাল কর্ড ইস্যু দেখা যায়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের জন্য বেডের সাথে তোশক-জাজিম ব্যবহার না করে ভাল কোয়ালিটির নরম ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন।
অল্প সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট রাখুন
বেডরুমকে শুধু শোবার জায়গা হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে এই রুমটিকে কমফোর্টেবল সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট দিয়েও সাজানো যায়। এতে কেউ আপনার বেডরুমে এলে অস্বস্তিকর পরিস্তিতি হবেনা। ঘর যদি খুবই ছোট হয় তবে দুই একটি চেয়ার সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারেন। আবার, বেশি আরামের জন্য বিন ব্যাগও রাখতে পারেন। রুমের মেঝেতে ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করুন, এতে ঘরের সৌন্দর্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।
অতিরিক্ত স্টোরেজ তৈরি করুন
যেহেতু আপনার ঘর ছোট তাই, যে আসবাবই কিনুন না কেন স্টোরেজ স্পেস আছে কিনা দেখে নিন। ধরুন, বসার ঘরে একটি ডিভান রাখবেন, যেটার ফলে বসার কাজে যেমন ব্যবহৃত হবে তেমনি মেহমান এলে শোবার কাজেও ব্যবহৃত হতে পারবে। আবার ফোল্ডিং বেড ব্যবহার করলে খাট গুছিয়ে সব সাজিয়ে রাখা যায়। আলমারি কিছুটা বড় হতে পারে, তাই চাইলে ড্রেসিং টেবিল কাম কেবিনেট কিংবা ওয়ারড্রোব নিতে পারেন। দেখবেন, জায়গা নেয়নি বেশি, অথচ দেখতে কি দারুণ লাগছে। এভাবে প্ল্যানিং করে তবেই ঘরের জন্য আসবাব কিনুন।
ফোল্ডিং টেবিল সেটাপ করুন
রুমে অন্যান্য ফার্নিচারের পাশাপাশি একটি পড়ার টেবিল বা ওয়ার্ক স্টেশন থাকা অনেকেরই রিকোয়ারমেন্টে থাকে। বিছানার মতই এটাও যদি এক পাশে সেট করা যায় তাহলে সেটা রুমের নান্দনিকতা বজায় রাখবে। এক্সেত্রে ছোট রুমে ল্যাপটপ ইউজারদের জন্যও ফোল্ডেবল টেবিল অনেক উপকারে আসবে। কিন্তু যদি ডেস্কটপ ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে ফুল ফাংশনাল টেবিল ঘরে রাখাই ভাল।
ছোট বেডরুম সাজাতে অন্যান্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন
দিনের সবচেয়ে শান্তির সময়টা আমরা যেহেতু বেডরুমেই কাটাই, তাই এই ঘরের অন্যান্য বিষয় যেমন দেয়ালের রং, ভেন্টিলেশন, শোপিস, অন্যান্য ফার্নিচার এবং সিলিং-এর মত বেশ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করাটাও জরুরি। এতে মিনিমালিস্ট এনভাইরনমেন্টে থেকেও এলিগ্যান্ট বেডরুম তৈরি করে ফেলা যায়। চলুন জেনে নিই বেডরুমের কোন কোন অংশ কাস্টমাইজ করতে হবে—
১. মিনিমালিস্ট এক্সেরিজঃ
ছোট বেডরুমে মিনিমালিজমই হতে পারে আপনার আপনার ঘরকে হাইলাইট করার মূল এলিমেন্ট। যেমনঃ খাটের পাশের দেয়ালে আয়না লাগানো যেতে পারে। আবার আয়নার ব্যবহার করে ছোট রুমকে বড় করা একটি ক্লাসিক পুরোনো ট্রিক। এছাড়া যতটা সম্ভব ফ্লোর খালি রাখবেন। বেডসাইডে টেবিল রাখার জায়গা না হলে বিছানার পাশে সিলিং থেকে সুন্দর একটি হ্যাঙ্গিং শেলফ ঝুলিয়ে নিতে পারেন।
রুমের কালার
একের অধিক রং আমাদের অনেকেরই পছন্দ, কিন্তু তাই বলে সব রং ঘরের ভেতর ছড়িয়ে দেওয়া কখনই ঠিক হবে না। ছোট রুম সাজানোর বেলায় অবশ্যই কোন রঙে বেশি ব্রাইটনেস আসবে ঘরে সে দিকটায় নজর দিতে হবে আগে। সাদার সাথে মিলিয়ে কোন কালার টেক্সচার ঘরের বাইরে থেকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।
ঘর সাজাতে জানালা
আলো বাতাসের চলাচল ছাড়াও রুম ডেকোরেশনের কাজে জানালাকে ব্যবহার করা যায়। আপনি চাইলে জানালার কাছে একটি কফি টেবিল রাখতে পারেন, আবার আপনার বিছানাটি ঘরের মাঝখানে রাখার পরিবর্তে জানালার কাছে রাখতে পারেন। বিছানা মাঝে না রেখে জানালার কাছে রাখলে সকাল সকাল ফ্রেশ আলো পেয়ে যাবেন। ঘরে অনেক জিনিস থাকলে বোর্ড দিয়ে তাক তৈরি করে তারপর রাখুন।
জানালায় পর্দার ব্যবহার
আপনার ঘরের দেওয়ালের রং এবং আসবাবের ধরন ও রঙের সঙ্গে মানানসই পর্দা লাগাতে হবে। ছোট ঘরকে বড় দেখানোর জন্য উজ্জ্বল ও সুন্দর রঙের পর্দা লাগাতে ভুলবেন না। ফ্লোরাল পর্দা নিতে পারে, আবার এক রঙের পর্দাও নিতে পারেন। পর্দাকে সুন্দর টাচ দিতে পর্দার নিচে বিডস বা লেস ডিটেলে যোগ করতে পারেন। এটা দেখতেও বেশি সুন্দর লাগে।
ঘরের সিলিং
আপনি চাইলে সিলিং এর মেকওভার করতে পারেন। সিলিং এর মেকওভারের জন্য সিলিংয়ের চারিদিকে বর্ডার যোগ করতে পারেন। এছাড়া এম্বিয়েন্ট লাইটিংও করতে পারেন যা সবসময় সিলিংকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। অনেক অফিসে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, ফলস সিলিং ব্যবহার করা হচ্ছে, আপনিও চাইলে এইরকম কিছুও ব্যবহার করতে পারেন।
এসবকিছুর পাশাপাশি ওয়ালের সৌন্দর্যের উপরেও আপনার ঘরের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বেডরুমের দেওয়াল সাজানোর সময় গুরুত্ব দিন। আপনি চাইলে পারিবারিক বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি বাঁধিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারেন। ফটোওয়াল দেখতেও সুন্দর লাগে। আমাদের ড্রয়িং রুম ডিজাইন গাইড দেখে নিলে কিভাবে দেয়াল সাজাবেন সে সম্পর্কে আইডিয়া পেয়ে যাবেন।
দেয়ালের ব্যবহার
ওয়ালের সৌন্দর্যের উপরেও আপনার ঘরের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বেডরুমের দেওয়াল সাজানোর সময় গুরুত্ব দিন। আপনি চাইলে পারিবারিক বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি বাঁধিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারেন। ফটোওয়াল দেখতেও সুন্দর লাগে। ঘরের যে দেয়ালে বেশি জায়গা রয়েছে অথবা যে দেয়ালটা আপনি পুরোটা ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার যদি কোন নকশা পছন্দ হয় তাহলে সেটা আঁকুন অথবা, পছন্দের কোন গানের পঙক্তি লিখুন, অথবা পছন্দের কোন কবির কবিতা!
বেডরুমের ইনডোর ডেকোরেশন করার জনপ্রিয় ফার্নিচারসমূহ
ছোট এপার্টমেন্ট হোক অথবা বড়, মাস্টার বেডরুমটি সত্যই বাড়ির প্রধান শয়নকক্ষ। সুতরাং এটির সাজসজ্জার ক্ষেত্রে বিশেষ নজর রাখা উচিত। শোবার ঘরটি সাজানোর সময় মনে রাখবেন যে বিছানাটি ঘরের মূল কেন্দ্র হতে হবে। আর এই কাজে হাতিলের সেরা মানের কিছু ফার্নিচার ব্যবহার করে নিমিষেই বেডরুমের লুক পরিবর্তন করতে পারেন।
- প্রথমেই বিছানাটি এমন একটি কোণে স্থাপন করুন যেখানে প্রচুর প্রাকৃতিক আলো বিছানায় পৌঁছেছে। মাস্টার বেডরুমের জন্য কিং সাইজের বেডই পছন্দ করা উচিত। এই কাজে হাতিলের Mirage-175 অথবা Cory-171 বেশ কম জায়গা নেবে। যদি অন্য আসবাবের জন্য জায়গা থাকবে কিনা-এ বিষয়ে চিন্তিত হোন, তবে Galaxy-118 এর মত বেড বিবেচনা করা উচিত।
- বেড সাইড টেবিল এমন একটি জিনিস যা আপনার কিং সাইজের বিছানার পাশে না হলেই নয়। Bergenia-202 এর রঙ এর কথাই ধরুন। দুই রঙের যে মডার্ন ডিজাইনের কথা মনে মনে ভাবছেন, সেটার সাথে সহজেই মিলবে। অন্যদিকে Bouquet-132 ঘরে হালকা রঙের প্যালেটে ভারসাম্য আনবে।
- আপনার শোবার ঘরে কিছু স্টোরেজ থাকা অবশ্যই জীবনকে সহজতর করে তুলবে। এবং একটি ছিমছিমে স্টোরেজ ইউনিট, যা ঘরের বিন্যাসের সাথে মিলছে এরকম একটি ওয়ার্ড্রোব, চেস্ট অফ ড্রয়ারস বা ড্রেসিং টেবিল, যেটিই আপনার পছন্দ হোক না কেন, ঘরের বাকি আসবাবের সাথে না মিললে বড়ই উদ্ভট দেখাবে।
- আলমারি বা ওয়ারড্রোব বেছে নিলে ফ্ল্যাট আউটলুকের কারনে ঘরের অন্যান্য আসবাবের সাথে সহজেই মিলে যাবে। Carnelian-101 এর মত বক্স শেপের আলমারি প্যালেটের সাথে সহজেই মিলবে। অন্যদিকে শেলফ দেয়ালর ফাঁকা জায়গাগুলো দারুন ভাবে ব্যবহার করবে।
- ঘরে বিভিন্ন রঙ এর ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করা ঘরকে মনের মত করে তোলার আরেকটি উপায় রঙ। এগুলোকে কালার একসেন্ট বলা হয়। ফার্নিচারের সাথে মিল রেখে কালার একসেন্ট যোগ করলে পুরো ঘরটিই পাজলের মত ম্যাচ করবে। যেমনঃ আপনি ভাল বেডসাইড ল্যাম্প বা টেবিল ল্যাম্প দিয়ে একসেন্ট কালার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
ছোট বেডরুম সাজানোতে রাখুন সৃষ্টিশীলতার ছাপ
নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি ব্যবহার করে আপনার বেডরুম ছোট হলেও সেটা এমন ভাবে ডেকোরেশন করা সম্ভব যে , এটি তখন আর ছোট হিসেবে মনেই হবে না। চেষ্টা করবেন প্রপার ভেন্টিলেশন সিস্টেম এবং নাইট লাইটিং সিস্টেম তৈরি করতে, এবং রুমের কালারের সাথে মিলিয়ে কনট্রাস্ট কালারের ফার্নিচার ব্যবহার করতে, এতে করে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ঘরটি হয়ে উঠবে আরামদায়ক এবং চমৎকার।
কিছু বহুল আলোচিত প্রশ্নোত্তরঃ
ছোট বেডরুমে ইনডোর প্ল্যান্ট রেখে কিভাবে ডেকোরেশন করা যায়?
ইনডোর প্লান্টের জন্য ছোট পটেড প্ল্যান্ট বা হ্যাঙ্গিং প্ল্যান্ট ব্যবহার করুন। জানালার কাছাকাছি বা শেলফে প্ল্যান্ট রাখলে জায়গার অপচয় হবে না। এতে করে প্লান্টের জন্য আলো ও বাতাসের প্রবাহ সুনিশ্চিত হয়ে যাবে।
হাতিল থেকে ছোট বেডরুমের ফার্নিচার কেনার সুবিধা কি কি?
হাতিল সবচেয়ে লাক্সারিয়াস ডিজাইনের বেডরুম ফার্নিচার তৈরি করে। ১ বছরের ওয়ারেন্টির সাথে ৩ দিনের রিপ্লেসমেন্টে গ্যারান্টি পেয়ে যাবেন প্রতিটি ফার্নিচারে। এছাড়া ট্রাডিশনাল ও মডার্ন বিভিন্ন সাইজের খাট, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ারড্রোব ও বেডসাইড টেবিল পাবেন যা আপনার ঘরের সাইজের সাথে সম্পূর্ণ মিলে যাবে।
ছোট বেডরুমে কোন ধরনের আসবাব বেশি কার্যকর হয়?
মাল্টিপারপাজ ফার্নিচারগুলো ছোট বেডরুমের জন্য বেশি উপযোগী হয়। যেমনঃ সোফা-কাম-বেড, ফোল্ডেবল টেবিল বা মডুলার শেলফ। এগুলো কাজ শেষে সরিয়ে রাখাও সহজ, আবার একই ফার্নিচার দিয়ে দুই ফার্নিচারের কাজ করা যায়। এছাড়া লম্বা ফার্নিচার নিলে কোনো জিনিস রাখার সুবিধা কমপ্রোমাইজ না করেই রুমের মধ্যে জায়গা বেঁচে যাবে।