বারান্দা সাজানোর ৫টি সহজ উপায়

নতুন বাসা নেওয়ার সময় আমরা অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি খুঁজি একটি খোলামেলা বারান্দা। অনেকই হয়তো চায় বারান্দার সামনে জারুলগাছের ছায়া, অনেকে আবার ভাবে বারান্দা থেকে যদি কোনো লেক দেখা যেত, কী দারুণই না হতো! যদিও সব সময় এমন স্বপ্নের মতো সুন্দর বারান্দাওয়ালা বাসা পাওয়া সহজ হয় না; তবুও ইট-কাঠ-পাথরের শহরে ছোট্ট একচিলতে বারান্দা মানেই যেন অনেকখানি স্বস্তি।

শহুরে বেশির ভাগ মানুষদের বাসা নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ছোট্ট চাহিদাটা থাকেই। কিন্তু শেষমেশ ওই বারান্দায় দুটো দড়ি টাঙিয়ে কাপড় শুকাতে দেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই করা হয় না। শুধু কাপড় নাড়তে ব্যবহার না করে আপনার বারান্দাটি সাজিয়ে তুলতে পারেন নিজের মতো করে। চলুন জেনে নিই বারান্দা সাজানোর সহজ কিছু উপায়। 

সবুজ বারান্দা

শরীর ও মন সুস্থ রাখতে সবুজের কাছাকাছি থাকা জরুরি। কিন্তু শহরে যাদের বসবাস তারা খুব একটা সবুজের দেখা পায় না। তাই শহুরেদের সবুজকে কাছে পাওয়ার একমাত্র উপায় বারান্দায় হরেক রকম গাছ। বারান্দায় রাখার উপযোগী গাছ দিয়ে সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার বারান্দা। গাছ রাখতে ব্যবহার করতে পারেন সুন্দর মাটির টব। ভিন্নতা আনতে ব্যবহার করতে পারেন পিতলের বাহারি নকশার টব। আধুনিক বারান্দায় শোভা পায় সিরামিকের টব। পাতাবাহার, গুল্মজাতীয় ফুলগাছের টব বারান্দার কার্নিশে রাখতে পারেন। ছোট একটি তাক পেতে তাতে রাখতে পারেন ছোট ক্যাকটাস, বনসাই ইত্যাদির মতো ছোট গাছগুলো। ঝুলন্ত গাছগুলো ঝুলিয়ে দিতে পারেন বারান্দার সিলিংয়ে। রেলিং বেয়ে নামিয়ে দিতে পারেন একটি লতানো গাছ। কিংবা একপাশে বড় পাত্রে পানি দিয়ে রাখতে পারেন জলজ উদ্ভিদ। হরেক রকম গাছে পরিপূর্ণ বারান্দা যেমন সুন্দর দেখায় তেমনি মনকে করে সজীব।

বারান্দা-ক্যাফে

সকালের মিষ্টি রোদে বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে রাখতে পারেন ক্যাফেটেরিয়া সেট।

সকালের মিষ্টি রোদে বারান্দায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিনটা শুরু হলে কিন্তু মন্দ হয় না। ছুটির দিনের বিকেলে নিজের মতো কাটিয়ে দেওয়ার জন্য বারান্দাটা স্থান হিসেবে মন্দ হয় না। তাই বারান্দাটিকে সাজিয়ে তুলুন নিজের মতো। বিকেলে বই পড়তে পড়তে কফির কাপে চুমুক দিতে চাইলে ছোট্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া সেট পেতে দিতে পারেন বারান্দায়। তবে বই পড়তে পড়তে সন্ধ্যা নেমে গেলেও যেন বিরক্তি নিয়ে উঠে পড়তে না হয় তাই মাথার ওপরে একটি সুন্দর ঝুলন্ত বাতি লাগিয়ে দিতে পারেন। চাইলে পাশে একটি শেলফ পেতে রাখতে পারেন ছোট ছোট কিছু শোপিস। ক্যাফেটেরিয়া টেবিলের ওপর রাখতে পারেন তাজা ফুলসহ একটি ফুলদানি।

বারান্দায় স্টুডিও

আপনার বাসার বারান্দাটি নিরিবিলি হলে সেটিকে সাজিয়ে নিতে পারেন নিজের স্টুডিও হিসেবে। যারা অনলাইন মিটিংয়ের সময় সুন্দর একটা ব্যাকগ্রাউন্ডের অভাব বোধ করেন তারা নিজের বারান্দাটিকে কাজে লাগিয়ে ফেলতে পারেন। যারা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও তৈরির কাজ করেন কিন্তু বাসায় স্টুডিওর জন্য আলাদা রুম নেই তারা বারান্দাটিকে সাজিয়ে ফেলতে পারেন স্টুডিওর মতো। কাজের ধরন ও নিজের পছন্দমতো থিমে সাজিয়ে নিতে পারেন বারান্দা-স্টুডিও। এ ছাড়া ঘরের ভেতর সেজেগুজে ছবি তোলার স্থান হিসেবেও সাজিয়ে নিতে পারেন বারান্দা। দেয়ালটা নিজের মতো করে রং করে নিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে দিতে পারেন একটি বড় ড্রিম ক্যাচার। আধুনিকতার ছোঁয়া রাখতে চাইলে সুন্দর ফ্রেমের একটি আয়না রাখতে পারেন। আবার বারান্দার ধরন বুঝে সাজাতে পারেন ফ্রেম করা শিল্পকর্ম দিয়ে। মেঝেতে পেতে দিতে পারেন কৃত্রিম তন্তুর একটি কার্পেট। প্রাকৃতিক আলোর পাশাপাশি উজ্জ্বল বাতি, স্ট্যান্ড লাইট ইত্যাদি রাখতে পারেন।

আরামদায়ক বারান্দা

বারান্দা সাজাতে পারেন চমৎকার একটি দোলনা দিয়ে।

সাজানোর পাশাপাশি বারান্দাটিকে করে তুলতে পারেন আপনার আরামের স্থান। দুপুরবেলা খেয়ে একটা বই পড়তে পড়তে যদি শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করে তাহলে বারান্দায় টাঙিয়ে ফেলতে পারেন একটি চমৎকার হ্যামক। বারান্দাটা একটু বড় হলে দোল খেতে রাখতে পারেন একটি দোলনা। কিন্তু বারান্দা ছোট হলে দোল খেতে পারবেন না এমন কোনো কথা নেই। ছোট বারান্দায় রাখতে পারেন একটি রকিং চেয়ার। এসব জিনিস শুধু আপনাকে আরামই দেবে না। সাথে সাদামাটা বারান্দাটাকে করে তুলবে আকর্ষণীয়। তবে, আমাদের এই ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র দেশে বারান্দায় কুশনিং আসবাব রাখতে একটু সাবধান থাকাই ভালো। কখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় আপনার সাধের বারান্দা!

বারান্দায় ঐতিহ্যের ছোঁয়া

ঘরের সাজসজ্জার সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনার বারান্দাটাকে সাজিয়ে তুলতে পারেন বাঙালি ঐতিহ্যের আবহে। বারান্দায় বসার জন্য পেতে দিতে পারেন নিচু টুল। টেবিলে হিসেবে রাখতে পারেন উঁচু জলচৌকি। মেঝেতে কার্পেটের অভাব পূরণ করতে পারে শীতলপাটি। বারান্দার সিলিংয়ে নকশি শিকা ঝুলিয়ে রাখতে পারেন নকশা করা মাটির হাঁড়ি কিংবা ঝুলন্ত গাছের টব। শীতলপাটির ওপর নকশিকাঁথা বিছিয়েও তৈরি করতে পারেন বসার স্থান। আরামদায়ক করে তুলতে বেশ কয়েকটি কুশন রাখতে পারেন সাথে। আলোকসজ্জায় ব্যবহার করতে পারেন মৃদু আলোর লণ্ঠন অথবা পুরোনো হ্যাজাক বাতি।

বারান্দার সাজসজ্জায় প্রাধান্য দিন নিজের রুচি ও আরামকে। বারান্দা সাজানোর এই উপায়গুলো আপনার কেমন লাগল, তা জানাতে পারেন কমেন্টে। 

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।