মানুষ নাকি তাদের জীবনের এক-তৃতীয়াংশই কাজ করে কাটায়। পরিসংখ্যান বলে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ গড়ে টানা ২৫-৩০ বছর সপ্তাহে প্রায় ৪০ ঘণ্টা অফিসে ব্যয় করেন। অফিসে কাটানো সময়টা তাই আমাদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে বাধ্য। অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আরাম নিশ্চিত করাটা যে কারণে এখন অফিস কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে মহাগুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অসন্তুষ্ট এবং অতৃপ্ত কর্মচারীদের থেকে যে তৃপ্ত কর্মচারীরা আরো মনপ্রাণ দিয়ে অফিসে কাজ করেন, সেটা প্রমাণ করেছে নানা গবেষণা। কর্মচারীরা নিজেদের মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রেখে কাজ করতে পারলে তাই কর্তৃপক্ষেরই লাভ।
এই ধারণার থেকেই কাজের স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে জড়িত প্রতিটি জিনিসই এখন আগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব লাভ করেছে। যেমনঃ অফিস চেয়ার। অফিসের বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের প্রয়োজন মেটাতে কেমন ধরনের চেয়ার ব্যবহার করতে পারেন, সেটা জেনে নিতে পারেন এই ব্লগ থেকে :
ব্যক্তিগত অফিসে স্বাচ্ছন্দ্য দেবে এক্সিকিউটিভ চেয়ার
বসার জন্য খুবই নরম ফোম কিংবা কুশন, দুপাশে বিস্তৃত হাতল, পেছনে মাথা পর্যন্ত উঁচু হেলান দেওয়ার ব্যবস্থা। এগুলোই যেকোনো সাধারণ এক্সিকিউটিভ চেয়ারের বৈশিষ্ট্য। অনেক প্রিমিয়াম এক্সিকিউটিভ চেয়ারে আবার পা রাখার ফোল্ডিং ব্যবস্থাও থাকে। এই ধরনের চেয়ারগুলো সাধারণত ব্যক্তিগত কেবিনে ব্যবহার করা হয়। অফিসে ব্যক্তিগত কেবিনে কিংবা নিজের ডেস্কেই মানুষ বেশির ভাগ সময় কাটায়। তাই এক্সিকিউটিভ চেয়ারের ডিজাইনে মানুষের আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ্যই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পায়।
তবে অনেক সময়ই দেখা যায়, আগের যুগের এক্সিকিউটিভ চেয়ারগুলোয় আরাম নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে। বর্তমানের নতুন এক্সিকিউটিভ চেয়ারগুলো ‘আর্গোনমিক’ মডেলে বানানো হয়ে থাকে। আর্গোনমিক ডিজাইনের চেয়ারগুলোয় কাজ করার সময় মেরুদণ্ডে যেন কোনো আলাদা চাপ না পড়ে, সেটা নিশ্চিত করা হয়। তাই আর্গোনমিক চেয়ারগুলোয় অনেকক্ষণ টানা বসে থাকলেও শরীরের ওপর তেমন কোনো বাজে প্রভাব পড়ে না।
এক্সিকিউটিভ চেয়ারগুলো অন্য যেকোনো অফিস চেয়ারের তুলনায় সবচেয়ে প্রিমিয়াম এবং এলিগ্যান্ট হয়ে থাকে। তাই এগুলোর দামও অন্য চেয়ারের তুলনায় কিছুটা বেশি হয়। আর্গোনমিক ডিজাইনে বানানো এক্সিকিউটিভ চেয়ারের দাম আরেকটু বেশি হয়। তবে স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে আর্গোনমিক এক্সিকিউটিভ চেয়ারগুলোই পার্সোনাল কেবিনের জন্য কেনা ভালো।
হাতিলের বিভিন্ন ধরনের আর্গোনমিক ডিজাইনে বানানো এক্সিকিউটিভ চেয়ার আছে। মাইকেল-১৪৩ কিংবা টাইটানিক-১৪১ খুবই প্রিমিয়াম দুটি চেয়ার। আরামের তো অভাব হবেই না, এগুলো লম্বা সময় বসে থাকার জন্যও খুবই ভালো।
ওয়ার্কস্টেশনে মিড লেভেল আর্গোনমিক চেয়ার
ওয়ার্কস্টেশনে সাধারণত খুবই প্রিমিয়াম এক্সিকিউটিভ চেয়ার ব্যবহারের সুযোগ নেই। এগুলো অনেক জায়গা নেয়। যেটা অনেক মানুষের একসাথে কাজ করার মতো ওয়ার্কস্টেশনে থাকে না। তাই ওয়ার্কস্টেশনে মিড লেভেল আর্গোনমিক চেয়ার ব্যবহার করা যেতে পারে। এই চেয়ারগুলোও আর্গোনমিক ডিজাইনে বানানো হয়ে থাকে। তবে এগুলো এক্সিকিউটিভ চেয়ারের তুলনায় আরেকটু ছোট হয়। তাই বেশি জায়গা নেয় না।
মরাভিয়া-১২৫ কিংবা উমবের্তো-১২১ এই ধরনের চেয়ারগুলোর মাঝে দুটি দারুণ বাজেটবান্ধব অপশন। এগুলো যেকোনো ছোট কিংবা মাঝারি আকারের ওয়ার্কস্টেশনেই মানিয়ে যাবে।
তবে কর্মচারীদের যদি ৬-৮ ঘণ্টার বেশি সময় কাজ করতে হলে আরেকটু দামি চেয়ার ব্যবহার করাই ভালো। স্ট্র্যাচি-৩৩১ কিংবা ব্রুকার-৩২৫ এ ক্ষেত্রে আপনার পছন্দ হতে পারে। এই চেয়ারগুলোতে উঁচু হেলান দেওয়ার জায়গা থাকে। ফলে এগুলো কর্মচারীদের ওপর শারীরিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
কনফারেন্স রুমের চেয়ার
মিটিংয়ে মানুষ সাধারণত ১-৩ ঘণ্টার বেশি সময় কাটায় না। তাই খুবই দামি আর্গোনমিক ডিজাইনের চেয়ার এখানে ব্যবহার করার প্রয়োজন নেই। বরং মিড লেভেল আর্গোনমিক চেয়ার কিংবা খুবই সাধারণ সুইভেল চেয়ারেই এখানে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে হাতিলের কোজি-১০১ এবং গান্টার-৩০৪ খুবই ভালো দুটি অপশন। এই চেয়ারগুলোতে প্যাডেড কুশন ব্যবহার করা হয়েছে। হাতলও আছে। তাই এই চেয়ারগুলো মিটিংয়ে কর্মচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যও নিশ্চিত করতে পারবে।
অফিসের সজ্জায় কিছুটা চমক আনতে চাইলে বার্গেস-৩২৭ চেয়ারটি আপনার পছন্দ হতে পারে। সবুজ রঙের এই চেয়ারটি আপনার কনফারেন্স রুমে যোগ করবে ভিন্ন ধরনের ক্রিয়েটিভ মেজাজ।
রিসিপশনে ভিজিটর চেয়ার
অফিস সোফা রিসিপশনে যোগ করবে অন্য রকম লুক
অফিসে ঢুকেই সবার আগে চোখে পড়ে অফিসের রিসিপশন কিংবা অভ্যর্থনা কক্ষটি। তাই অভ্যাগতদের মুগ্ধ করতে একটি সুসজ্জিত অভ্যর্থনাকক্ষ খুবই প্রয়োজনীয়। একই সাথে সুন্দর, আবার অফিসের অপেক্ষারত ভিজিটরদের যথেষ্ট আরামও নিশ্চিত করতে পারবে, এমন চেয়ারই অভ্যর্থনাকক্ষে ব্যবহার করা দরকার।
রিসিপশন সাজানোয় যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ভিজিটর চেয়ার, সোফা কিংবা কাউচ। দু-তিন ধরনের আসবাবপত্র একই সাথে ব্যবহার করা হলে সেটা রুমে অন্য রকম শৈলী তৈরি করবে। এ ছাড়াও সোফা এবং চেয়ার দুটো বিকল্পই থাকলে মানুষ তাদের পছন্দের বসার জায়গায় অপেক্ষা করতে পারবে।
ক্যাডেন্স-১৫১ সাধারণ ভিজিটিং চেয়ারের চেয়ে বেশ আলাদা
আলভারেজ-১০৯ কিংবা ম্যাক্সওয়েল-১০২ হাতিলের খুবই সাধারণ দুটি ভিজিটিং চেয়ার। তবে এগুলো যেকোনো ছোট কিংবা মাঝারি অভ্যর্থনাকক্ষ সাজাতেই কাজে দেবে। রিসিপশনে একই ডিজাইনের চেয়ার দেখতে দেখতে হাঁপিয়ে উঠলে আর্গন-১৫৪ কিংবা ক্যাডেন্স-১৫১ চেয়ার দুটি আপনার পছন্দ হতে পারে। সাধারণ ভিজিটিং চেয়ারগুলোর চেয়ে এগুলো বেশ আলাদা।
অফিসের জায়গা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী কোথায় কেমন চেয়ার দরকার হতে পারে, সেটা নিয়ে তো অনেক কথা হলো। আপনার কোম্পানি কিংবা হোম অফিসের জন্য কেমন চেয়ার পছন্দ, সেটা এখনই কমেন্টে জানিয়ে দিন আমাদের।