স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট মূলত এক রুমের একটি বাসা, যেখানে এক রুমের ভেতরই শোবার জায়গা, পড়ার জায়গা, রান্নার জায়গা ও বাথরুম থাকে। স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে যেহেতু একটি রুমকেই সব কাজে ব্যবহার করা হয়, তাই এগুলো তৈরিও করা হয় যথোপযুক্ত উপায়ে। রান্নাঘর হিসেবে যে অংশকে ব্যবহার করা হয় সেখানে কেবিনেট লাগানো থাকে, রান্নাবান্নার ফলে ঘর যেন নোংরা না হয়, সে জন্য চিমনি থাকে। সেই ঘরের সাথেই আবার অ্যাটাচড বাথরুম থাকে।
পৃথিবীর বড় শহরগুলোতে এ ধরনের বাসা সচরাচর দেখা যায়। পড়াশোনা বা চাকরির খাতিরে যারা বাড়ি থেকে দূরে থাকেন তারা স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। একা থাকার জন্যও অনেকে এমন বাসা পছন্দ করেন। আমাদের দেশে তৈরি স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট আগে খুব একটা দেখা না গেলেও ইদানীং এর সংখ্যা বাড়ছে। অনেকে আবার নিজের সুবিধামতো একটি রুমকে বানিয়েও নিচ্ছে স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। এ রকম বাসায় সুবিধার পাশাপাশিও প্রয়োজন সঠিক সাজসজ্জা। এই সাজসজ্জা শুধু শোভাই বাড়াবে না স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টকে করে তুলবে আরামদায়ক। চলুন, জেনে নিই স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর কয়েকটি দারুণ উপায়।
ঘরের পার্টিশন
স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে যেহেতু একটা ঘরের ভেতরেই সবকিছু, তাই একে পরিচ্ছন্ন রাখার প্রথম শর্ত হলো কোন অংশে কী কাজ করবেন, তা ঠিক করে ফেলা। ইংরেজিতে একে বলে ‘কম্পার্টমেন্টালাইজেশন’। ঘরের কোথায় কোন কাজ করবেন, সেভাবে অংশগুলো ভাগ করে নিলে দুটো সুবিধা। এক, ঘর এলোমেলো হয় কম। অর্থাৎ শোবার জায়গায় খাবার ছড়িয়ে থাকার বা রান্নাঘরে জরুরি কাগজ পড়ে থাকার আশঙ্কা কমে যায়। দুই, মনঃসংযোগে সুবিধা হয়। অর্থাৎ পড়ার জায়গাটি যদি আপনি নিয়মিত শুধু পড়ার জন্যই ব্যবহার করেন, তাহলে টেবিলে বসার সাথে সাথে আপনার মস্তিষ্ক পড়ার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। ঘুমের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্যি। সারা দিন বিছানায় শুয়ে-বসে নানা কাজ করার চেয়ে যদি শুধু ঘুমানোর আগে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস করেন, তবে দেখবেন শোয়ার সাথে সাথে মস্তিষ্ক ঘুমের সিগন্যাল পেয়ে যাবে, অবচেতনভাবে সব বিক্ষিপ্ততা ভুলে সে ঘুমের প্রস্তুতি নেবে।
রান্নার জায়গা আর শোবার জায়গাকে ভাগ করে দিলে ঘর দেখাবে সুন্দর ও প্রতিটা স্থান আলাদা গুরুত্ব পাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে সিলিং থেকে মেঝে পর্যন্ত লম্বা পর্দা। কিংবা রাখা যেতে পারে চমৎকার একটি ফোল্ডিং রুম ডিভাইডার। এগুলো ব্যবহার করা সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী। তা ছাড়া সরু একটি ডিসপ্লে শেলফ বা বুকশেলফ রাখতে পারেন ডিভাইডার হিসেবে। এতে জায়গার সঠিক ব্যবহারও হবে আবার পার্টিশনের কাজও মিটবে।
হালকা রঙে ছিমছাম
স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টকে সাজাতে হলে রঙের দিকটা একটু বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। ছোট বাসায় সব সময় হালকা ও উজ্জ্বল রংগুলো ব্যবহার করতে হয়। এতে বাসা খোলামেলা দেখায়। বাসার দেয়াল রং করার সুবিধা থাকলে নিজের পছন্দমতো রং করে নিতে পারেন দেয়ালটা। অথবা ব্যবহার করতে পারেন স্টিকার বা ওয়ালপেপার। যারা সাদা বা ধূসর রঙের দেয়াল ভালোবাসেন, তাদের জন্য স্নোফল হোয়াইট, ক্রিম বেইজ, নিউ হোপ গ্রে শেডগুলো বেশ মানানসই। আবার যার প্রিয় রং নীল, তিনি বেছে নিতে পারেন পাউডার ব্লু বা পেল ব্লু শেড। একটু উষ্ণ উজ্জ্বল রঙের দেয়াল চাইলে আবার আপনার জন্য মানানসই হবে বাটার ইয়েলো, ব্লাশ পিংক, মারবোরি পিচের মতো শেডগুলো। ঘরের আসবাবগুলোও কিনুন সামঞ্জস্য রেখে। তা ছাড়া, জানালার পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন ইত্যাদি কাছাকাছি রঙের ব্যবহার করে তৈরি করতে পারেন সুন্দর একটি কালার প্যালেট।
মাল্টিফাংশনাল ও স্মার্টফিট আসবাব
স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে জায়গা সাশ্রয় করবে একটি ফোল্ডিং পড়ার টেবিল
ছোট বাসায় বেশির ভাগ ঝামেলাটা হয় আসবাব নিয়েই। যেহেতু, একটা ঘরের ভেতরেই সবকিছু থাকে তাই দেখা যায় একটা খাট রাখার পর আলাদা কোনো বসার জায়গা নেই। কেউ বাসায় এলে বসতে দেওয়া যাচ্ছে না। আবার একটা পড়ার টেবিল এত জায়গা দখল করে নিচ্ছে যে একটা বুকশেলফ রাখার জায়গা হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি এড়াতে সহজ উপায় হলো স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে মাল্টিফাংশনাল ও স্মার্টফিট আসবাব ব্যবহার করা। খাট দিয়ে ঘরের অধিকাংশ জায়গা না ঢেকে ফেলতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন সোফা কাম বেড। যেটিকে চাইলেই সুবিধামতো খাট এবং সোফা বানিয়ে ফেলা যাবে। ঘরের জায়গা সাশ্রয় করতে ব্যবহার করতে পারেন ফোল্ডিং পড়ার টেবিল। কেউ এলে বসতে দেওয়ার জন্য রাখতে পারেন ফোল্ডিং চেয়ার।
ফ্লোটিং শেলফ
স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট সাজানোর একটি সহজ উপায় হলো দেয়ালে ফ্লোটিং শেলফ লাগানো। ছোট বাসায় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে আর ঘর সাজানোর উপায় থাকে না। তবে ফ্লোটিং শেলফ এমন একটা জিনিস, যা প্রয়োজনও মেটাবে আবার ঘরও সাজাবে। খাটের কিংবা সোফার পেছনের দেয়ালটা ব্যবহার করা যেতে পারে ফ্লোটিং শেলফ লাগাতে। ফ্লোটিং শেলফে প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি রাখা যেতে পারে ছোট ছোট শোপিস। ছোট ফুলদানি কিংবা ফটোফ্রেম দিয়েও সাজানো যায় শেলফ৷ অথবা শুধু নিজের সংগ্রহের বইগুলোই রাখতে পারেন ফ্লোটিং শেলফে।
আয়না
ছোট বাসার সাজসজ্জায় আয়নার ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়। আপনার স্টুডিও অ্যাপার্ট্মেন্ট সাজাতে ব্যবহার করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের আয়না। খালি দেয়াল থাকলে সেখানে লাগাতে পারেন বড় একটি আয়না। অথবা ফ্রেম করা একটি আয়না রাখতে পারেন এক পাশে। আয়না ব্যবহারে ঘরকে বড় দেখায়। আয়নায় আলোর প্রতিফলনে ঘরকে তুলনামূলক বেশি আলোকিত দেখায়। ঘরের আবহের সাথে মিলিয়ে একটি আয়না যেমন আপনার প্রয়োজন মেটাবে, তেমনই বাড়বে ঘরের সৌন্দর্যও।
কার্পেট
মেঝেতে সুন্দর কার্পেট ব্যবহার করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন প্রতিটি স্থান
কার্পেট সাজসজ্জার একটি অনুষঙ্গ হলেও স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্টে কার্পেট ব্যবহার করা যেতে পারে প্রতিটি স্থানকে আলাদাভাবে ফুটিয়ে তুলতে। ঘরে পার্টিশন না থাকলে কার্পেট ব্যবহার করে স্থানগুলোকে আলাদা করা যেতে পারে। আপনার পড়ার টেবিল বা ওয়ার্ক স্টেশনের অংশে বিছিয়ে দিতে পারেন একটি বড় কার্পেট। শোবার জায়গার চারপাশে মেঝেতে বিছিয়ে দিতে পারেন উষ্ণ কোনো রঙের একটি কার্পেট। অনেকে আবার শ্বেতশুভ্র আরামদায়ক কার্পেটও শোবার অংশের জন্য বেছে নেন। তা ছাড়া পুরো বাসার কালার প্যালেটের সাথে মেঝের রংটা মানানসই না হলে সামঞ্জস্য রেখে পুরো মেঝেটা মুড়ে দিতে পারেন কার্পেটে।
ছোট বাসা বা স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট সাজাতে গিয়ে অনেকে হিমশিম খেয়ে যান। এই উপায়গুলো ব্যবহার করে সহজেই সাজাতে পারেন আপনার স্টুডিও অ্যাপার্টমেন্ট। এই উপায়গুলো আপনার বাসা সাজাতে কতটা কার্যকরী, তা জানাতে পারেন কমেন্টে।