নীড় ছোট ক্ষতি নেই!

“নীড় ছোট ক্ষতি নেই,

আকাশ তো বড়…”

গানটা কানে বাজতেই সময়টা হয়ে যায় সাদা-কালো। মনের বোকা বাক্সে উত্তম-সুচিত্রার দেখা মেলে নবদম্পতিরূপে। কিন্তু খানিক বাদে বর্তমানে ফিরে আসতেই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ভাবতে হয়, নীড় ছোট হলে সত্যিই কি ক্ষতি নেই? এ সময়ের নবদম্পতিরা সত্যিই কি উত্তম-সুচিত্রার মতো অজানার আহ্বানে চঞ্চল পাখাগুলো মেলে দিতে পারে? উত্তরটা জটিল নয়। নীড় ছোট বলে বিশাল আকাশকে ছাদ ভেবে আকাশকুসুম কল্পনা করার সময়ও এটা নয়। তাহলে ছোট নীড়কেই আকাশের মতো বিশালতায় কী করে সাজিয়ে নেওয়া সম্ভব? কী করে ছোট নীড়টিতেই গড়ে তোলা যায় নবদম্পতির ভালো বাসা? এই প্রশ্নগুলোরই সহজ কিছু উত্তর খুঁজে নেব আজকের লেখায়। 

সামঞ্জস্য থাকা চাই  

নতুন দম্পতি মানে দুজন মানুষের নতুন সংসার, নতুন একটি ঘরে পরিপাটি করে সবকিছু সাজিয়ে নেওয়ার পালা। কিন্তু পুরোটা শুরু থেকেই শুরু করতে হয় বলে, এ শহরের অধিকাংশ সদ্য বিবাহিতদেরই থাকে কিছু সীমাবদ্ধতা, ছোট্ট ঘরটিকেই বানিয়ে নিতে হয় ভালো বাসা। তবে তার জন্য পরিকল্পনা থাকা চাই। ঘর ছোট বলেই, পুরো ঘরে নিয়ে আসতে হবে একটি নির্দিষ্ট সিমিট্রি বা সামঞ্জস্য। ঘরের এক একটা ফার্নিচারের ডিজাইন ও স্টাইল যদি একেক রকম হয়, তাহলে ছোট ঘরটি দেখতে লাগবে বড্ড বেমানান। তাই নবদম্পতিরা যখন নতুন ছোট্ট নীড়টিতে নিত্যনতুন ফার্নিচার যোগ করছেন, তখন একটি রুমের জন্য একই রকম লুক অ্যান্ড ফিলের ফার্নিচার নির্বাচন করুন। যেমন, বেডরুমের জন্য ড্রেসিং টেবিল বা আলমারি বেছে নিলে, ফার্নিচারগুলো খাটের সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না খেয়াল রাখুন। লিভিং রুমের জন্য সোফা নির্বাচন করলে, সেন্ট্রাল টেবিলটিও যেন মানানসই ডিজাইনের হয়। মর্ডার্ন বা ট্র্যাডিশনাল, পছন্দ যে রকমই হোক না কেন, ফার্নিচারের ধরন, ডিজাইন বা রঙে সামঞ্জস্য থাকা চাই। তবেই নবদম্পতিদের ছোট্ট ঘরটা বেশ খোলামেলা ও পরিপাটি দেখাবে।  ছোট্ট নীড়ের মাঝেই তখন তারা চঞ্চল পাখা মেলে হারিয়ে যেতে পারবেন অন্য ভুবনে। 

পুরো ঘরে নিয়ে আসতে হবে একটি নির্দিষ্ট সিমিট্রি 

জায়গা বাঁচানো যাবে সহজেই  

নবদম্পতিদের বাড়ি মানেই ছোট ফ্ল্যাট। আর ছোট ফ্ল্যাট মানেই যেন জায়গার বড্ড সংকট। তবে ভুলে গেলে চলবে না,  নান্দনিকতা বোধ থাকলে জায়গার অভাব কাটিয়ে ওঠা খুব একটা কঠিন নয়। এর জন্য কেবল প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা। কীভাবে?

ঘরের মেঝে যতটা সম্ভব খালি রাখুন। ছোট ঘরে সবকিছু আঁটসাঁট করে রাখলে, ঘর আরও গুমোট লাগবে। তাই স্পেস ব্যবস্থাপনা করতে হবে সতর্কভাবে। খুঁজে নিতে হবে জায়গা বাঁচানোর সহজ কিছু উপায়। যেমন ধরুন, বেডসাইডে টেবিল রাখার জায়গা হচ্ছে না? বিছানার পাশে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে নিতে পারেন প্রিয় হ্যাঙ্গিং শেলফটি। এটা যেমন বেডসাইড টেবিলের কাজ করবে তেমনি মেঝের স্পেস বাঁচাতেও সহায়তা করবে। ঘরকে খোলামেলা দেখাতে বিছানাকে পাঠিয়ে দিতে পারেন ঘরের একবারে কোনার দিকে। জায়গা বাঁচানোর আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে ঘরের ভার্টিক্যাল স্পেসকে ব্যবহার করা অর্থাৎ, মেঝে খালি রেখে দেয়াল ব্যবহার করা। তবে এর জন্য দরকার সঠিক ফার্নিচারটি নির্বাচন করা। যেমন : লিভিং রুমের জন্য এমন টিভি ক্যাবিনেট বেছে নিন যেটাতে হ্যাঙ্গিং ইউনিট রয়েছে। ডাইনিং রুমের জন্যও বেছে নিতে পারেন হাতিলের স্মার্টফিট ডাইনিং টেবিল যেখানে টেবিলের সাথেই সংযুক্ত আছে ওয়াল কেবিনেট। এ রকম ছোট ছোট পরিকল্পনাই নবদম্পতিদের ছোট ঘরটির স্পেসসংকট কাটাতে অনেকখানি সাহায্য করবে। 

বিছানার পাশে ঝুলিয়ে নিতে পারেন হ্যাঙ্গিং শেলফ

দেয়ালজুড়ে হালকা রং 

দেয়াল যত হালকা রঙের হবে, ঘর হবে ততটাই আলোকোজ্জ্বল। সে ক্ষেত্রে সাদা, অফ হোয়াইট, বেবি পিংকএই রংগুলো বেছে নিতে পারেন। এতে নবদম্পতির ছোট ঘরের মাঝেই বড় ঘরের ইলিউশন তৈরি হবে। সাথে কোনো একটা দেয়ালে বিপরীত আরেকটি রং ব্যবহার করতে পারেন। ঘর হয়ে উঠবে আরো নান্দনিক। পর্দার ক্ষেত্রেও নীল, সবুজ কিংবা পছন্দের যেকোনো রঙের হালকা শেডটি বেছে নিন।  পুরো ফ্লোর কার্পেট দিয়ে না ঢেকে হালকা রঙের ছোট ছোট রাগস বা থ্রো ব্যবহার করুন। ঘরের প্রতিটি অনুষঙ্গের রং নির্বাচনে, ছোট ছোট এই সতর্কতাগুলোই নবদম্পতিদের ছোট্ট নীড়কে বড় দেখানোর কার্যকর উপায়।  

জায়গা বাঁচাতে মাল্টিপারপাস আসবাব 

নবদম্পতিদের ঘরটি যেহেতু ছোট, তাই এমন আসবাব রাখুন, যা জায়গা বাঁচাবে এবং একটি ফার্নিচারই কয়েকটি ফার্নিচারের কাজ করবে। কিন্তু ফার্নিচার কী করে জায়গা বাঁচাবে? 
এই প্রশ্নের সমাধান দিতেই হাতিলে রয়েছে Atlanta-270-এর মতো মিনিমাল ডিজাইনের ফার্নিচার। যেখানে দুটি সোফার মাঝেই রয়েছে মোট চারটি সোফা।  এই মডিউলার সোফাটির প্রয়োজনে টেনে বের করে ব্যবহার করে খুব সহজেই আবার লুকিয়ে ফেলা যায়। কিংবা ধরুন, ছোট্ট ঘরটিতে, অতিরিক্ত কোনো বেড বা গেস্টরুম নেই। তাহলে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থাটি কীভাবে হবে? সহজ সমাধান হিসেবে বেছে নেওয়া যায় হাতিলের Fusion 302-এর মতো স্মার্টফিট বা মাল্টিফাংশনাল আসবাব। বেডরুম থেকে শুরু করে ডাইনিং, ঘরের প্রতিটি রুমের জন্যই কিন্তু পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম স্মার্টফিট ফার্নিচার। এর ব্যবহারে,  ঘরের অনেকটা স্পেস বেচে যায়। ফলে নবদম্পতিরাও তাদের ছোট ঘরের খোলামেলা পরিবেশে একান্ত সময় উপভোগ করতে পারেন। আর নির্দ্বিধায় ভাবতে পারেন, নীড় ছোট তাতে সত্যিই ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়! 

স্মার্টফিট ফার্নিচার ঘরের স্পেস বাঁচায় 

আঙ্গিকতা ও অনুষঙ্গ 

আয়না ঘরের মাঝে একধরনের ভ্রম সৃষ্টি করে। এতে ঘরের গভীরতা বাড়ে, ছোট ঘরকে বড় দেখায়। তাই নবদম্পতিদের ঘরজুড়ে আয়না রাখুন। এ ছাড়া বেডরুমে রোমান্টিক আবহ তৈরি করতে, রাখতে পারেন সুগন্ধি ক্যান্ডল ও ফুলসহ রুচিশীল যেকোনো অনুষঙ্গ। বেডসাইড টেবিলে যোগ করতে পারেন ছোট ল্যাম্প। ঘরের মাঝে মিউজিক সিস্টেম থাকলেও কিন্তু খুব একটা মন্দ হয় না। বরং নতুন সংসারে তা অন্য রকম একটি আবহ ধরে রাখে। চাইলে নিজেদের পোর্ট্রেট, কিছু পেইন্টিং দিয়েও দেয়াল সাজাতে পারেন। এতে ঘরের মাঝে দুজনেরই নিজস্বতার ছাপ থাকবে। লিভিং রুমকে বড় দেখাতে ফ্লোর টু সিলিং বিস্তৃত শেলফ ব্যবহার করুন। এর ফলে মেঝেতে জায়গা কম লাগে। নবদম্পতিদের লিভিং রুমের জন্য হাতিলেও কিন্তু পেয়ে যাবেন মকপ্রদ সব ওয়াল শেলফ। বই কিংবা বিয়েতে পাওয়া প্রিয় উপহারগুলো যত্নের সাথে সাজিয়ে রাখতে বেছে নিতে পারেন যেকোনোটি। 

প্রতিটি ঘর হোক অন্য রকম 

নবদম্পতিদের জন্য, অন্দরসজ্জার পরিকল্পনাটা হওয়া চাই ঘর অনুযায়ী আলাদা আলাদা। বেডরুমের সাজ এবং ড্রয়িংরুমের সাজ এক রকম হলে একঘেয়ে পরিবেশ সৃষ্টি হবে। দেখতেও লাগবে বেমানান। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ঘরের নিজস্ব একটা আমেজ আছে। বেডরুম মানেই ব্যক্তিগত ঘর, রিল্যাক্স করার জায়গা। তাই সেখানকার পরিবেশ যেন রিল্যাক্সিং হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। অন্যদিকে লিভিং রুমটা যেহেতু অতিথিদের জন্যও প্রযোজ্য, তাই সেখানকার পরিবেশটা আড্ডামুখর, আরামদায়ক এবং আভিজাত্যময় হওয়া চাই।  

আলোয় ভুবন ভরা 

নবদম্পতিদের নতুন নীড়টি ছোট হলেও আলোর যেন কমতি না থাকে। এ জন্যই ছোট্ট হলেও পর্যাপ্ত জানালা ও ব্যালকনি আছে এমন ঘর বেছে নিন। জানালায় গ্লাসডোর লাগান। ফার্নিচারগুলো এমনভাবে রাখুন, যেন তা জানালা দিয়ে আলো আসার পথটিকে আড়াল করতে না পারে। তাতে নবদম্পতিদের আপন ভুবন আপনাআপনিই সূর্যের আলোয় আলোকিত থাকবে। সাথে যোগ করুন একটুখানি কৃত্রিম আলোর ওয়ার্ম টোন। ছোট্ট ঘরটি এমনিতেই বেশ বড় দেখাবে।

ঢাকা শহরের ভবনগুলো যতটা আকাশ ছুঁয়েছে, ঘরগুলো হয়ে উঠেছে ততটাই ছোট ছোট। সদ্য শুরু করা একটি সংসারকে তাই নবদম্পতিরা চাইলেও পারে না বড় বাসায় সাজাতে। তাই তারা নীড় খুঁজে নেয় ছোট বাসায়। কিন্তু একটু চাইলে, ছোট্ট বাসাকেও যে ভালো বাসা বানানো যায়, তা নিয়ে নিশ্চয়ই আর সন্দেহ নেই। আজকের লেখাটি পড়ে আপনিও কি নতুন সংসারটিকে আরেকবার সাজিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন? আমাদের জানান মন্তব্যের ঘরে। 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।