একটি ডাইনিং টেবিল শুধু আপনার বাসার একটি ফার্নিচারই না, এটিকে ঘিরেই আপনার ডাইনিং রুমের মূল ডেকরেশান হয়। এখানে আপনি আপনার পরিবার নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন, নিজেদের ভেতরে আলাপ করেন যা আপনার পরিবারের সাথে অনেক স্মৃতিবিজড়িত মূহূর্ত তৈরী করে। পাশাপাশি আপনার ডাইনিং রুমের ডেকরেশান আপনার ব্যক্তিত্বকেও ফুটিয়ে তোলে।
কিন্তু আপনার ডাইনিং রুমের জন্য পারফেক্ট ডাইনিং টেবিল কীভাবে খুঁজে বের করবেন? এখানে অনেক বিষয় আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন এর আকার, আকৃতি, ম্যাটারিয়াল, স্টাইল, কার্যকারিতা ইত্যাদি।
বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিল তাদের ৩৪ বছরের অভিজ্ঞতায় অসংখ্য কাস্টমারদেরকে তাদের পছন্দের ডাইনিং টেবিল সরবরাহ করেছে। এই অভিজ্ঞতার আলোকে পারফেক্ট ডাইনিং টেবিল কেনার জন্য ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ শেয়ার করা হলোঃ-
১ম ধাপঃ আপনার ডাইনিং রুমের মাপ নিন
টেবিলটি দেখতে কেমন হবে তা বিচার করার আগে আপনার ডাইনিং রুমের সাইজ ও রুমের অবস্থা বিবেচনা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথমেই রুমের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতার মাপ নিন। এই মাপের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আপনি কত বড় ডাইনিং টেবিল কিনতে পারবেন সেটি বিচার করুন। আর পাশাপাশি রুমের দরজার মাপ নিতে ভুলবেন না। কারন দিনশেষে আপনাকে ডাইনিং টেবলটি রুমের ভেতরে ঢুকাতে হবে। এছাড়াও মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য যঠেষ্ট পরিমান জায়গাও রাখতে হবে।
খেয়াল রাখবেন টেবিল থেকে চেয়ার বের করার পর তার পেছনে যেন নূন্যতম দুই ফিটের মত জায়গা ফাকা থাকে। খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই ডাইনিং টেবিলে অন্যান্য কাজ যেমন ক্রাফটিং করে থাকেন। অথবা আপনার হয়তো টেবিলের চাদর রাখার জন্য টেবিলের সাথে একটা স্টোরেজও লাগতে পারে। তাই টেবিল কেনার আগে তার উদ্দেশ্য আরও গভীরে গিয়ে চিন্তা করুন। এরপর আপনার বাড়ির রং, অন্যান্য ফার্নিচারের রং ও ডিজাইন, ইত্যাদি বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে।
২য় ধাপঃ টেবিলের মাপ নির্নয় করুন
সাধারণত আপনার টেবিলটির আশেপাশে নূন্যতম ৩ ফিটের মতো জায়গা রাখলেই চেয়ার টেনে বের করতে অথবা টেবিলের আশেপাশে দিয়ে চলাফেরায় আর অসুবিধা হয়না। পাশাপাশি আপনার দেখা উচিৎ টেবিল রাখার পরে ডাইনিং রুমের অন্যান্য ফার্নিচার রাখার মতো প্রয়োজনীয় জায়গা যেন খালি থাকে।
ডাইনিং রুমের জন্য আদর্শ টেবিলের মাপ পেতে রুমের মাপ নেয়াটা খুবই জরুরী। আপনি ১ম ধাপ অনুসরন করলে বর্তমানে আপনার কাছে একটি মাপ থাকার কথা। সেই মাপের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থেকে ৬ ফিট করে বাদ দিন। এরপর যেই জায়গাটা খালি থাকে সেইটা আপনি টেবিলের জন্য ব্যবহার করতে পারবেন।
ধরুন আপনার যদি রুমের সাইজ ১২’ x ৯’ হয় তাহলে আপনার টেবিলের মাপ সর্বোচ্চ ৭২” x ৪০” হওয়া উচিৎ। তবে চাইলে অবশ্যই এর চেয়ে ছোট সাইজের টেবিলও ব্যবহার করা যাবে।
হাতিলের কালেকশনে বেশ কিছু এক্সটেন্ডেবল টেবিলও রয়েছে যেগুলো প্রয়োজনে চার সিট থেকে ছয় সিট এমনকি আট সিটের টেবিলেও পরিণত করা যায়। আপনি এখান থেকে সেই কালেকশনগুলো দেখতে পারেন।
৩য় ধাপঃ টেবিলের শেপ নির্বাচন করুন
আপনার রুচির ও প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে টেবিলের শেপ কেমন হবে তা বিবেচনা করা উচিত। যেমন হাতিলের আয়তাকার টেবিলগুলো ছোটখাটো রুমের জন্য খুব ভালো কারণ এর শেপ কোনাকুনি হওয়ায় তা দেয়ালের কোনায় কোনায় খাপ খায়। এছাড়াও আয়তাকার টেবিলে বসতে গেলে অন্যান্য শেপের টেবিলের তুলনায় কম জায়গা লাগে। গোলাকৃতির টেবিলগুলো আবার একটি আন্তরিক ও আমন্ত্রিত পরিবেশ তৈরি করে। এর অন্যতম কারন হলো এধরনের টেবিলে সবাই মুখোমুখি বসতে পারে এবং স্বাচ্ছ্যন্দে কথা বলতে পারে। বর্গাকার টেবিলগুলো আবার একটু সিম্পল এবং মিনিমাল ডিজাইনের হয়ে থাকে। প্রয়োজনের তাগিদে আপনি চাইলে এরকম দুটো টেবিল জোড়া লাগিয়ে সহজেই একটি আয়তাকার টেবিলে পরিণত করতে পারবেন। এরকম সাধারণ শেপের বাইরেও হাতিল এর কালেকশনে বেশ কিছু ডিম্বাকৃতি ও ইউনিক শেপের ডাইনিং টেবিল রয়েছে। ডিম্বাকৃতিক টেবিলে যেমন গোল টেবিলের তুলনায় বেশি লোক বসা যায় আবার তেমনি মাঝখানে পায়া বসানো বেশ কিছু টেবিল আছে যেগুলোতে পা রাখার জন্য অনেক জায়গা পাওয়া যায়। আবার পেঁচানো শেপের কিছু ইউনিক টেবিল আছে যেগুলো আপনার ডাইনিং রুমে চমকপ্রদ লুক দিতে সক্ষম।
এছাড়াও হাতিল প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে কাস্টম ডাইনিং টেবিল সরবরাহ করতে পারে যেগুলো আপনি নিজের পছন্দমত ডিজাইনে ও শেপে বানিয়ে নিতে পারবেন।
৪র্থ ধাপঃ ম্যাটেরিয়াল নির্বাচন করুন
আপনার টেবিলের ম্যাটারিয়াল শুধুমাত্র এর বাহ্যিক সৌন্দর্য্যকেই প্রভাবিত করে না এমনকি এটি কত দিন টিকবে, কার্যকারিতা কেমন হতে পারে সেগুলোকেও প্রভাবিত করে। কাঠ, কাচ, ধাতু, পাথর, ল্যামিনেট ইত্যাদির মতো অনেক ম্যাটেরিয়াল রয়েছে যেগুলো আপনি আপনার ডাইনিং টেবিল তৈরিতে ব্যবহার করতে পারেন। সবগুলো ম্যাটেরিয়ালেরই আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যাতে দোষগুণ সবই বিদ্যমান।
ডাইনিং টেবিল বানানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত ম্যাটেরিয়াল হল কাঠ। ঠিক মতো যত্ন নিলে এগুলো অনেকদিন পর্যন্ত টিকে যায় এবং কাঠের ফার্নিচার দেখতেও সুন্দর লাগে।
আবার আপনার ডাইনিং রুমের লুক মিনিমাল রাখতে গ্লাস দিয়ে তৈরি ডাইনিং টেবিলগুলোও খুবই কাজের। যদিও এতে খুব সহজেই হাতের ছাপ পড়ে তবে ঠিকমতো পরিষ্কার রাখলে এতে আলো পরলে বেশ চকচকে দেখায়। অ্যাক্রিলিকের ক্ষেত্রেও ব্যাপারগুলো ঠিক এমনই শুধু অ্যাক্রিলিকের বেশি একটা যত্ন নিতে হয়না।
মার্বেল পাথরের টেবিলগুলো সাধারণত আপনার আভিজাত্যের প্রতিফলন ঘটায়। তবে মার্বেল পাথরে অসংখ্য ছোট ছোট ছিদ্র থাকে, যেগুলো নির্দিষ্ট সময় পরপর বন্ধ (সিল) করে দিয়ে এর যত্ন নিতে হয়।
মেটাল ডাইনিং টেবিলগুলো বিভিন্ন ফিনিশের হয়ে থাকে। আর আমরা সবাই জানি মেটালের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো এর স্থায়িত্ব। তাই এটি বাইরের স্পেসে ব্যবহার করার জন্য বেশ উপযোগী। কারণ রোদ বৃষ্টি ঝড় ইত্যাদি মেটালের ম্যাটেরিয়ালের উপর তেমন বেশি প্রভাব ফেলে না।
৫ম ধাপঃ নিজের চোখে দেখে নিন
অনলাইনে আপনি যতই গবেষণা করেন না কেন ফার্নিচারের শোরুমে গিয়ে সামনাসামনি দেখে কেনাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ছবি বা লিখিত বর্ণনা কখনোই একটি ফার্নিচারের বৈশিষ্ট্যকে পুরোপুরি ভাবে তুলে ধরতে পারে না। সামনাসামনি দেখার সময় যে দিকগুলো বিবেচনা করা উচিতঃ
- আরাম: চেয়ারে বসে দেখুন আপনার উচ্চতার সাথে চেয়ারের উচ্চতা মিলছে কিনা। অথবা বসে আরাম লাগছে কিনা তা খেয়াল করুন।
- নির্মাণশৈলী: ফার্নিচারের মান যত ভাল হবে তার ফিনিশিং তত ভালো হবে। ফার্নিচারের সারফেস এবং জয়েন্ট গুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখুন সেখানে জোড়া লাগানোর চিহ্ন আছে কিনা অথবা সামান্য চাপ দিয়ে দেখুন জয়েন্ট গুলো নড়বড়ে কিনা।
- মাপ: দরকার পড়লে সাথে করে মাপার ফিতাও নিয়ে যান। ঠিকমতো মেপে দেখুন আপনার ঘরের সাইজের সাথে ফার্নিচারের সাইজ মিলছে কিনা।
- স্টাইল: কার্যকারিতার পাশাপাশি আপনার ডাইনিং রুমে টেবিলটি দেখতে কেমন লাগবে সেটিও চিন্তা করে দেখা জরুরী।
ডাইনিং টেবিলের মাপ কিভাবে নিবেন
শুধুমাত্র টেবিলের আকৃতি রং ডিজাইন এগুলো বিবেচনার পাশাপাশি সঠিকভাবে এর মাপ নেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নোক্ত উপায়ে আপনি সঠিকভাবে একটি ডাইনিং টেবিলের মাপ নিতে পারবেনঃ
- টেবিলের উচ্চতার মাপ নিতে ফ্লোর থেকে ফিতাটি টেবিলের সারফেস পর্যন্ত ধরুন। এই উচ্চতার উপর বিবেচনা করে আপনি সঠিক মাপের চেয়ার কিনতে পারবেন।
- টেবিলের দৈর্ঘ্য মাপতে এর লম্বা সাইডের এক পাশ থেকে আরেক পাশে নিখুঁতভাবে মাপ নিন। এই মাপ দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার রুমে টেবিলটি ঠিকমতো বসবে কিনা।
- টেবিলটির প্রস্থ মাপতে এর আড়াআড়ি দিকের এক সাইড থেকে আরেক সাইড পর্যন্ত ফিতা দিয়ে মাপ নিন।
- টেবিলের পায়া গুলোর মধ্যকার গ্যাপ গুলোরও মাপ নিন কারণ এটি নির্ধারণ করবে রুমে আপনার টেবিলটি বসানোর পরে ফ্লোরে সেটি কতটুকু জায়গা নিবে। এছাড়াও টেবিলে বসার পর পা রাখার ক্ষেত্রেও এই মাপ জানা জরুরী।
- আপনার টেবিলের সার্ফেসের তক্তার পুরুত্বর দিকেও খেয়াল রাখুন। ম্যাটেরিয়াল এর উপরে ভিত্তি করে এই পুরুত্ব কম বা বেশি হয়ে থাকে।
সারমর্ম
মন মত একটি ডাইনিং টেবিল কিনতে পারলে কার না ভালো লাগে কিন্তু তবুও এরকম একটা ব্যাপারও মাঝেমধ্যে আপনাকে অনেক চিন্তার মধ্যে ফেলে দিতে পারে। আশা করা যায় এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি বুঝতে পারছেন কি কি ধাপ অনুসরণ করলে আপনি আপনার বাড়ির জন্য একটি পারফেক্ট ডাইনিং টেবিল কিনতে পারবেন। আপনার আইডিয়ার জন্য এখানে আরও কিছু ডাইনিং টেবিলের কালেকশন শেয়ার করা হলো।
হাতিল দীর্ঘ সময় যাবত বাংলাদেশের মানুষদের কাছে রুচিপূর্ণ এবং উন্নতমানের ফার্নিচার সরবরাহ করে আসছে। হাতিলের কালেকশনে সাশ্রয়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের ও বিভিন্ন ডিজাইনের ফার্নিচারের অসংখ্য কালেকশন রয়েছে। আরও জানতে তাদের যেকোনো শো-রুম অথবা ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে দেখতে পারেন।
ধন্যবাদ! 😊