ঘরের কোণে ছোট্ট অফিস ঘরের কোণে ছোট্ট অফিস

ঘরের কোণে ছোট্ট অফিস

গত বছর করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিন আগেই বিয়ে করেছে সাজিদ আর সুহানা। বহু বছর প্রেমের পর বিয়ে, দুজন তাই বেশ প্রাণ ঢেলে নিজেদের মনের মতো একটা ছিমছাম সংসার সাজানোর চেষ্টা করেছে।

অঞ্জনের গানের মতোই মিথ্যে কথার শহরে তাদের লাল-নীল সংসার নিয়ে সাজিদ-সুহানা বেশ সুখেই ছিল, কিন্তু সমস্যা শুরু হয় লকডাউনে অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে। বাসায় থেকেই মাসের পর মাস কাজ করতে হবে, সংসার গোছানোর সময় এমন কোনো সম্ভাবনা যে তারা ভেবেই দেখেনি! তাই তাদের ছোট্ট বাসার কোথাও-ই ভার্চ্যুয়াল অফিস করার মতো জায়গা রাখা হয়নি।

প্যানডেমিকের নিউ নরমালে সাজিদ-সুহানার মতো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে অনেককেই। ওয়ার্ক ফ্রম হোম ব্যাপারটি শুনতে শুরুতে বেশ আরামদায়ক মনে হয়। বাসা থেকে বের হতে হচ্ছে না, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে কাটাতে হচ্ছে না, ঘরের পোশাকের আরামে আর প্রিয়জনের কাছে থেকেই বেশ অফিসের কাজ করা যাচ্ছে!

বাস্তবে কিন্তু বাসায় থেকে অফিস করা এতটা সহজ নয়। অফিস করতে যেই পরিবেশ প্রয়োজন, সেই পরিবেশ বাংলাদেশের বেশির ভাগ পরিবারেই পাওয়া যায় না।

বিশেষ করে সাজিদ-সুহানার মতো যেসব পরিবারে একের অধিক চাকরিজীবী মানুষ আছে, তাদের জন্য লকডাউনে বাসায় থেকে অফিস করার ব্যাপারটি দেখা দিয়েছে নব্য এক সংকট হিসেবে। একই বাসায় দুজনের আলাদা অফিস করার জায়গাই পাওয়া যাচ্ছে না।

বাসায় ছোট সন্তান কিংবা উঠতি বয়সের ছেলেমেয়ে থাকলে তো কথাই নেই। তাদের ভার্চ্যুয়াল পড়ালেখা এবং অনান্য নানা ধরনের প্রয়োজন সামলে উঠে আবার অফিসের কাজে মন দেওয়ার মতো কঠিন কিছু যেন পুরো পৃথিবীতেই আর নেই।

প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় বাসায় অফিস করার পর বিশ্বজুড়ে অনেকেরই দাবি, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের কারণে পারিবারিক এবং পেশাদার জীবনের মাঝের ভারসাম্যটাই হারিয়ে ফেলছেন তারা। একদিকে যেমন কাজের চাপে পারিবারিক জীবনে ঠিক করে মনোযোগ দিতে পারছেন না, অন্যদিকে কাজ করার পরিবেশ নেই বলে অফিসের পারফরম্যান্স ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Setup Home Office

লকডাউনে পারিবারিক ও পেশাদার জীবন যাতে মিলেমিশে একাকার না হয়ে যায়, সেই উদ্দেশ্য থেকেই এখন ঘরের কোণে একটি ছোট্ট গোছানো অফিস সাজানোর ধারণাটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

তবে বাসায় পর্যাপ্ত জায়গা নেই বলে অনেকেই এই ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। চলুন দেখে নেওয়া যাক কীভাবে নিজের পেশাদারি প্রয়োজন এবং বাসার আকার-আকৃতির সাথে মিলিয়ে সহজে ঘরেই বানিয়ে নিতে পারেন ছোট একটি অফিস স্পেস:

জায়গার ক্ষেত্রে হতে হবে সৃষ্টিশীল

ঘরের যেসব জায়গায় নিয়মিত মানুষ যাতায়াত করে, সেখান থেকে কাজের জায়গা দূরে রাখাই ভালো। তাই বেডরুম কিংবা ডাইনিংরুমে কাজের আয়োজন করা উচিত নয়। যদি রিডিংরুম থাকে, তাহলে সেটাকে ব্যবহার করতে পারেন অফিস হিসেবে। না হলে বসার ঘর কিংবা খালি গেস্টরুমেও সাজানো যেতে পারে অফিস স্পেস।

বাসা ছোট হলে এবং কোনো খালি রুম না থাকলেও সমস্যা নেই। একটু সৃষ্টিশীল হলেই যেকোনো জায়গাকেই অফিসে পরিণত করা যেতে পারে। অনেক বাসাতেই ছোট হলওয়ে থাকে, যেগুলো সাধারণত কোনো কাজে আসে না।

সেই হলওয়েকেই গুছিয়ে নিতে পারেন অফিস হিসেবে। যদি ঘরের কোনোখানেই অফিস স্পেস বানানোর জায়গা না থাকে, তাহলে বারান্দাটাকেও সুন্দরভাবে সাজিয়ে সেটাকেও অফিসের সময়ে ব্যবহার করতে পারেন। ল্যাপটপ রাখার জন্য একটা ছোট ফোল্ডিং টেবিল এবং দুটো আরামদায়ক কুশন౼ব্যস তাহলেই তো হয়ে গেল।

এগুলোর কোনোটাই করা সম্ভব না হলে শোবার ঘর কিংবা ডাইনিং স্পেসকেও অফিস স্পেসে রূপান্তরিত করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যাতে পারিবারিক কাজ অফিসের কাজে বাধা না তৈরি করে। অফিসের সময়ে অফিসের কাজই করুন, অফিস শেষে শুধু পরিবারের দিকেই মন দিন।

পেশাদারি প্রয়োজনের কথা মাথায় রাখুন

পেশা অনুযায়ী মানুষের প্রয়োজন পাল্টায়। আপনার অফিস স্পেসটিকে আপনার পেশাদারি প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেই সাজাতে হবে। আপনার পেশা যদি এমন হয় যে শুধু একটা ল্যাপটপ ছাড়া অন্য তেমন কিছুরই প্রয়োজন নেই, তবে আপনার হোম অফিস স্পেসে শুধু একটি ছোট টেবিল-ই থাকতে পারে।

হাতিলের স্মার্ট ফিট রিডিং টেবিলগুলো এই ক্ষেত্রে দারুণভাবে কাজে আসতে পারে। এই টেবিলগুলোর পাশে ছোট্ট একটি স্টোরেজ ইউনিটও থাকে, যাতে হাতের কাছে রাখার মতো প্রয়োজনীয় কাগজ বা ফাইলগুলোও সহজে গুছিয়ে রাখতে পারবেন।

তবে পেশাদারি প্রয়োজনে প্রিন্টার, স্ক্যানার কিংবা অন্য যেকোনো ভারী যন্ত্র দরকার হলে সেই জিনিসগুলো রাখার জন্য যথেষ্ট প্রশস্ত এবং বড় টেবিলই আপনাকে বেছে নিতে হবে।

কাজের ক্ষেত্রে প্রচুর কাগজপত্র এবং ফাইল প্রয়োজন হলে অফিস স্পেসে একটি ফাইল কেবিনেটও রাখতে পারেন। স্টোরেজ ইউনিটের ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন মাল্টিপারপাস শেলফ, যাতে বাসার অন্যান্য আসবাবপত্রের সাথে আপনার হোম অফিসের সজ্জাও মানিয়ে যায়।

মূলত, আপনার কাজের ক্ষেত্রে কী কী প্রয়োজন হবে, সেই জিনিসগুলোর একটি তালিকা করে এরপর হোম অফিস স্পেস সাজানোর কথা চিন্তা করুন।

Setup Home Office Desk

স্বাচ্ছন্দ্যবোধ থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ

সারা দিন যে জায়গায় বসে কাজ করবেন, সেটা মনের মতো না হলে কাজ করতে গিয়েই সহজেই ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই শুধু পেশাদারি প্রয়োজন নয়, নজর দিতে হবে নিজের স্বাচ্ছন্দ্যের দিকেও। অল্প জায়গা হলেও সেখানেও যাতে আরামে কাজ করা যায়, সেই চেষ্টা করতে হবে।

হোম অফিসের জন্য তাই যথেষ্ট আরামপ্রদ চেয়ার বেছে নেওয়া প্রয়োজন। যেহেতু একটা লম্বা সময় বসে থেকে কাজ করতে হবে, তাই আরামের পাশাপাশি এমন চেয়ারই বেছে নিতে হবে যেটা শরীরের ক্ষতি করবে না।

এই ক্ষেত্রে হাতিলের পিনোকিও ১৪২ কিংবা আরিয়া ১৩২ চেয়ারগুলো তাদের বাদামি এবং কালো রঙের জন্য মানিয়ে যেতে পারে বাসার অন্য আসবাবের সাথে।

Home Office Chair

হোম অফিস স্পেসে যতটুকু সম্ভব নিজের মানসিক প্রশান্তির দিকে খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। জানালার পাশে অফিস স্পেস রাখতে পারলে খুবই ভালো হয়। তাতে অনেকক্ষণ কাজ করতে গেলে একঘেয়ে লাগবে না। ডেস্কে একটি বা দুটি ইনডোর গাছও রাখতে পারেন।

ডেস্কের উল্টো দিকের দেয়ালে পছন্দের কোনো ছবি কিংবা পেইন্টিং লাগিয়ে রাখতে পারেন। এতে একদিকে অফিস স্পেসে সময় কাটাতে যেমন আপনার খারাপ লাগবে না, আরেক দিকে জুম মিটিংয়ের সময়ও একটি দারুণ ব্যাকগ্রাউন্ড পাবেন।

স্বল্পেই সুখ

বাসার কোণে অফিস স্পেসে জায়গা যেহেতু বেশ কম জায়গা থাকে, তাই একটা মিনিমাল অফিস স্পেস বেশ দারুণ একটি সমাধান হয়ে উঠতে পারে। যা না হলেই নয়, এমন জিনিস ছাড়া অফিস স্পেসে আর কিছুই রাখার দরকার নেই।

ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার, অফিসের ফাইল বা কাগজপত্র, নোটপ্যাড, কলম এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্টেশনারি ছাড়া আর অযথা কিছুই রাখার দরকার নেই। এতে যেমন অফিস স্পেস খালি থাকার কারণে বেশি ছোট লাগবে না, আবার সবকিছু সহজে গুছিয়ে রাখতেও সুবিধা হবে।

এভাবে নানা কিছু করেই অল্প জায়গাতেও দারুণভাবে অফিস স্পেস সাজানো সম্ভব। খুবই ভালো আরেকটি উপায় হচ্ছে মাল্টিপারপাস ফার্নিচার ব্যবহার করা।

যেমন: অফিস স্পেসে সোফা-কাম-বেড ব্যবহার করতে পারেন, যেটা অফিসের সময়ে সোফা হিসেবে ব্যবহার করা যাবে এবং প্রয়োজনের সময় বিছানা হিসেবে। অফিস স্পেস সাজানোর সময় অবশ্যই পরিবারের অন্যদের প্রয়োজনের ব্যাপারটিও মাথায় রাখতে হবে।

সাজিদ আর সুহানার কাছে ফেরত যাওয়া যাক। শেষ পর্যন্ত নিজেদের সমস্যার সমাধান করতে সাজিদ আর সুহানা হাতিল থেকে কিংসটাউন ১৯৪ নামের এমন একটি ডাইনিং টেবিল কিনেছিল, যেটায় দুজন একই সাথে মুখোমুখি বসে কাজ করতে পারবে, আবার দরকারের সময় যেটাকে ডাইনিং টেবিল হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

টেবিলের নিচেই আবার কেবিনেট আছে বলে স্টোরেজ ইউনিট নিয়েও চিন্তা করতে হয় না। এটাই প্রমাণ করে, একটু সৃষ্টিশীল হয়ে উঠতে পারলেই অফিস স্পেসকেন্দ্রিক সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

ঘরের অফিস স্পেস নিয়ে তো এই ব্লগে অনেক কথা হলো। আপনি কীভাবে সাজাচ্ছেন আপনার বাসার কোণের ছোট্ট অফিসটি, তা কমেন্টে জানিয়ে দিন আমাদের।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।