গৃহসজ্জায় উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার এখনকার নতুন ট্রেন্ড। বোহেমিয়ান ভাবধারায় ঘর সাজাতে হলে উজ্জ্বল, অপ্রত্যাশিত রং একেবারেই অনিবার্য। কিন্তু শুধু হলুদ বা কমলার মতো উজ্জ্বল রংই ঘরে থাকলে তা দেখতে বেশ ভারসাম্যহীন ও অমানানসই লাগবে। চকচকে উজ্জ্বল রঙের সাথে সমতা বজায় রাখার জন্য সঠিক জায়গাগুলোতে নিরপেক্ষ বা ‘নিউট্রাল’ রঙের দরকার। গতানুগতিক ঘরসজ্জা থেকে বের হয়ে আসার জন্য সচরাচর দেখা যায় না এমন উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার অনেক ভালো উপায়। তাই এই উজ্জ্বল রঙের ট্রেন্ডের সাথে তাল মেলাতে আপনার জন্য নিয়ে এসেছি আমরা বিশেষ কিছু টিপস।
প্রাথমিক রঙের পরিকল্পনা
সচরাচর দেখা যায় না এমন রং ব্যবহার করতে হলে প্রথমত রংগুলোর সম্পূর্ণ কার্যকারিতা কীভাবে বের করা যায়, তা বুঝতে হবে। লাল, সবুজ, নীল ইত্যাদি প্রাথমিক রংই একটা ঘরের সমগ্র চেহারা বদলে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই রংগুলোর কোনো শেড আপনার চোখে কত বেশি মনোরঞ্জক হবে, তা নিয়ে বেশ কিছু গবেষণাও আছে; যেমন গাঢ় নীল রঙের সোফায় উজ্জ্বল লেমন ইয়েলো কুশন কিন্তু দারুণ মানাবে। কিন্তু আবার সোফা ও কুশন দুটোই লেমন ইয়েলো হলে তা চোখে নান্দনিক দেখাবে না। তবে এই রং নিয়ে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই পেয়ে যেতে পারেন অভূতপূর্ব ফলাফল। ফার্নিচারের রং বেশি উজ্জ্বল হলে তা নিউট্রাল কার্পেট বা সাদা দেয়ালের সামনে রেখে ঘরের ভারসাম্য নির্ধারণ করে দেওয়া যায়। তাতে রঙের সহাবস্থান হবে নান্দনিক ও স্বস্তিদায়ক। গ্লাসগো-২১৩ এই উজ্জ্বল রং ঘরে আনার জন্য উপযুক্ত একটি সোফা। যেকোনো হালকা রঙের দেয়াল বাঁ মেঝের সাথে সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যাবে কমলা রঙের উজ্জ্বল সোফাটি।
উজ্জ্বল কমলা রঙের হাতিলের গ্লাসগো-২১৩ সোফা
অ্যাকসেন্ট রঙের ব্যবহার
পরিপূরক রঙের বিষয়ে ধারণা রাখা ঘরসজ্জার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। তাই উজ্জ্বল রং ব্যবহার করলে নিশ্চিত করতে হবে তার পরিপূরক রংও ঘরসজ্জায় অন্তর্ভুক্ত আছে। পরিপূরক রং বের করা যায় “কালার হুইল” থেকে। এই কালার হুইল জিনিসটায় নির্ধারিত রঙের বিপরীতে যেই রং থাকে, তাকেই বলা হয় পরিপূরক রং। দৃঢ় বর্ণের রংগুলো অনেক বেশি ব্যবহার করলে সেটা দেখতে অনেক বেশি প্রবল লাগবে। অ্যাকসেন্ট রং ব্যবহার করে ঘরকে আকর্ষণীয় রাখার সাথে সাথেই ট্রেন্ডি বানাতে পারেন। তা ছাড়া ৬০/৩০/১০ নিয়ম অনুসরণ করে একটু পদ্ধতিগতভাবে ঘর সাজানো সম্ভব। এই নিয়ম অনুযায়ী ঘরের ৬০ ভাগই থাকা দরকার নিরপেক্ষ রং, ৩০ ভাগ থাকবে সামান্য উজ্জ্বল রং আর ১০ ভাগ থাকবে অ্যাকসেন্ট রং, যা ঘরকে দেবে সেই নজরকাড়া চেহারা। ঘর সাজানোর এই মৌলিক নিয়মটা অনুসরণ করে থাকেন অনেক পেশাদার ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এবং আর্কিটেক্টরাও।
উজ্জ্বল রঙের ব্যবহারে হাতিলের সিমসবারি-২৮৫ সোফা
প্যাটার্ন নিয়ে খেলা
ভীষণ উজ্জ্বল, চকচকে ও হালকা রঙের মেলবন্ধন করতে প্যাটার্ন জিনিসটার জুড়ি নেই। ঘরের সাজে কোন রং ব্যবহার করা উচিত অথবা কোন দুটি রং একসাথে দেখতে বেশি ভালো লাগবে౼এ বিষয়ে সন্দেহ দূর করার জন্য শুরুতেই বাছাই করে নিতে পারেন পছন্দের যেকোনো প্যাটার্ন। বিভিন্ন রঙের সমন্বয় সুন্দরভাবে প্রদর্শন করা যায় রুচিশীল প্যাটার্ন ব্যবহারের মাধ্যমে। কার্পেট, রাগ, পিলো ইত্যাদি টেক্সটাইলে প্যাটার্নের আবির্ভাব ঘটানো খুবই সহজ। সোফা বা চেয়ারে প্যাটার্ন যুক্ত কাপড় ব্যবহার করে আসবাবটিকে বানিয়ে ফেলতে পারেন পুরো ঘরের কেন্দ্রবিন্দু। তবে প্যাটার্ন নির্ধারণের ক্ষেত্রেও অতিরিক্ত আড়ম্বরপূর্ণ ডিজাইনের তুলনায় একটু সরল ডিজাইনই বেশি মানায়।
হাতিলের পরপইজ-১৭৭ সোফায় দেখা যায় উজ্জ্বল রঙের সাথে প্যাটার্নের সমন্বয়
একই রং বারবার কেন?
যখন নতুনত্বে ভরা বোহেমিয়ান সাজের কথাই বলছি, তখন একই রং বারবার ব্যবহার করার কোনো কথা আসে কীভাবে? ঘরসজ্জায় বৈচিত্র্য আনা অবশ্যই প্রয়োজন কিন্তু সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখাটা প্রাথমিক চিন্তা হতে হবে। এই ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যই একই রঙের বারবার ব্যবহার করা দরকার। ফার্নিচারে বা দেয়ালে গাঢ় অ্যাকসেন্ট রং ব্যবহার করলে খেয়াল রাখতে হবে ঘরে ছোটখাটো শোপিস, ফুলদানি, ছাইদানি ইত্যাদিতেও যাতে সেই রঙের কিছুটা ছোঁয়া থাকে। এর মাধ্যমে পুরো ঘর একটা পূর্ণতা পাবে। বেখেয়ালিভাবে অ্যাকসেন্ট রং ব্যবহারের থেকে কিছুটা চিন্তাভাবনা করে রংগুলো ব্যবহার করলেই ঘরটা পাবে বেশ অভিজাত একটা চেহারা।
দেয়ালসজ্জাই হতে পারে ঘরের কেন্দ্রবিন্দু
ঘরের ফার্নিচারই যে সব সময় তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তা কিন্তু নয়। দেয়ালসজ্জা, বিশেষ ডিজাইনের কোনো কার্পেট বা রাগ, লাইটিং౼এসবও হতে পারে ঘরসজ্জার অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যদি দেখা যায় আসবাবে ইচ্ছামতো রং বা প্যাটার্ন পাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তবে দেয়ালের জন্য যথাযথ পেইন্টিং অথবা মেঝের জন্য রংবেরঙের কার্পেট౼এগুলো যোগ করা যায় সহজেই। লিভিং বা ডাইনিং রুমের ক্ষেত্রে কেন্দ্রবিন্দু হতে পারে বিলাসী কোনো ঝাড়বাতি, ঘড়ি, ল্যাম্প এমনকি পর্দাও। তাই গাঢ় রং যোগ করার কথা চিন্তা করলে দেয়াল, মেঝে বা ফার্নিচারে সীমাবদ্ধ থাকার কোনো কারণ নেই। অ্যাকসেন্ট রং যোগ করতে পারেন যেকোনো আসবাব অথবা লাইটিংয়ে।
অল্পই বেশি
ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেই কথাটা মাথায় রাখা দরকার তা হলো౼অল্পই বেশি। বেশি ফার্নিচার, বেশি রং, বেশি সাজসজ্জা কোনোটাই ঘরকে রুচিশীল রূপ দেয় না। সীমিত জিনিসের ব্যবহারেই সুন্দর এবং কার্যকরভাবে ঘর সাজানো শ্রেয়। রঙের ক্ষেত্রেও উজ্জ্বল তীব্র রংগুলো অল্প জায়গায় দেখতেই বেশি ভালো লাগবে, অনেকটা জায়গাজুড়ে তা ঠিক মানানসই নয়। অতিরিক্ত দৃঢ় রঙের ব্যবহারই ঘরের মূল ফোকাসকে নষ্ট করে দিতে পারে। ঘরে রঙের ছোঁয়া আনতে ১-২টি রঙিন ফার্নিচার বা অন্য উপাদানই যথেষ্ট। অনেক বেশি প্রাণবন্ত রঙের ব্যবহার ঘরকে ফিটফাট দেখানোর থেকে আড়ম্বরপূর্ণ দেখাবে বেশি।
নিয়ম ভাঙার উল্লাস
যতই বাঁধাধরা নিয়মকানুনে ঘরসজ্জা বোঝার চেষ্টা করা হোক না কেন, দিন শেষে চোখের সৌন্দর্যই মূল সৌন্দর্য। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে যেভাবে সাজালে মন ভালো হবে, সেভাবেই সাজানো উচিত। প্রশ্নটা যেহেতু রঙের ব্যবহারের, এ ক্ষেত্রে বাঁধাধরা নিয়মে এগোনো তো একেবারেই উচিত নয়। নিজের ঘরে, নিজের মতামতই পাক সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য।
যেই রঙেই ঘর সাজাতে চান না কেন আশা করি এই টিপসগুলো সাহায্য করবে আপনার ঘর সাজানোর যাত্রায়। ঘরগুলো প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক উজ্জ্বল রঙের ছোঁয়ায়।