নবদম্পতিদের বসার ঘরে যা কিছু জরুরি

শীতের হাওয়ার লাগল নাচন…’ 

কবিগুরু তাঁর গানের এই প্রথম চরণটুকু যেন লিখেছিলেন বাংলাদেশের নবদম্পতিদের কথা ভেবেই। কারণ এ তল্লাটে, ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মানেই শীত, আর শীত মানেই বিয়ের উৎসব! একটি দুটি করে যোগ হওয়া আরও কয়েক শো নতুন সংসার! আর এই নতুন সংসার সাজানোর কথা মাথায় এলেই যেন ভর করে রাজ্যের চিন্তা। বিশেষ করে, বসার ঘরের সাজসজ্জা কেমন হবে, সেটা নিয়ে একটু বেশিই মনোযোগী হতে হয় নবদম্পতিদের। কেননা বসার ঘরের অন্দরসাজই হয়ে ওঠে দুটি মানুষের সম্মিলিত রুচির প্রথম বহিঃপ্রকাশ। যে কেউ এলেও, সবার আগে বসার ঘরটিতেই চোখ বুলিয়ে নেন। তাই বসার ঘরটি নান্দনিক ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হলে নবদম্পতিদের জানতে হবে এর সাজসজ্জার আদ্যোপান্ত। সেই সাথে থাকতে হবে সবার চেয়ে আলাদা করে বাসা সাজিয়ে তোলার জ্ঞান। নিজের রুচি, চাহিদা আর সামর্থ্যের সম্মিলন ঘটিয়ে তবেই বেছে নিতে হবে বসার ঘরের জন্য নতুন আসবাব। তাই নবদম্পতিরা কীভাবে তাদের বসার ঘরটিকে নিজেদের রুচি, সাধ্য ও পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের সেরাটুকু দিয়ে সাজাবেন, এটা নিয়েই আমাদের আজকের আলাপন।

 

বসার ঘরের ব্যাপকতা 

নবদম্পতিদের বসার ঘরটির অন্দরসাজ কেমন হবে, তা অনেকাংশেই নির্ভর করে এর আয়তন, নবদম্পতির জীবনযাপনের ধরন এবং বাজেটের ওপর। যেহেতু বসার ঘর বাড়ির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তাই আধুনিকতার সাথে সাথে এর আরামপ্রদতার বিষয়টি নিয়ে নবদম্পতিদের ভাবতে হবে অনেকখানি গুরুত্ব দিয়ে। নতুন সংসার শুরুর প্রথমেই যদি একটি ফ্ল্যাট কেনেন বা ভাড়া নিয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে চেষ্টা করুন এমন একটি বাড়ি বেছে নিতে যেখানে বাড়ির বসার ঘরটির অবস্থান দক্ষিণ কিংবা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। এতে শীতের সময় পর্যাপ্ত রোদ যেমন পাবেন গ্রীষ্মের বিকেলে দখিনের খোলা হাওয়ায় ও দুজনের অলস বিকেলটা হইয়ে উঠবে আরো প্রাণবন্ত।

ফার্নিচার কেনার সময় ঘরের আকারের দিকে রাখতে হবে পরিপূর্ণ মনোযোগ। ঘরের আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ফার্নিচার কিনলে ঘরের ভেতর অনেক জায়গা বের হবে এবং খোলামেলা থাকবে। বড় ঘর হলে মডিউলার সোফা, সেন্টার টেবিল, কর্নার ল্যাম্প, ও কার্পেট দিয়ে ঘরকে সাজাতে পারেন। আর ঘর যদি ছোট হয় সে ক্ষেত্রে ফ্ল্যাটের আয়তন অনুযায়ী সাজানোর প্যাটার্ন এবং আসবাবপত্র নির্বাচন করা প্রয়োজন। আজকাল ঘরকে দেখানোর জন্য বসার ঘর ও খাবার ঘরের ব্যবস্থা একই সঙ্গে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে বসার ও খাবার ঘরের জায়গাকে আলাদা করার জন্য দুটি জায়গার মাঝখানে নানা রকমের পার্টিশন যেমন, ডিনার ওয়াগন কিংবা শোকেস দিতে পারেন। তবে নতুন সংসারের বসার ঘরটি যেমনই হোক, ব্যাপকতা অনুযায়ী পছন্দের যেকোনো আসবাব বেছে নিতে দুজন মিলে নির্দ্বিধায় ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিলের ওয়েবসাইট থেকে।   

বসার ঘর বড় হলে মডিউলার সোফা, সেন্টার টেবিল, ল্যাম্প ও কার্পেট রাখতে পারেন 

আসর জমুক আসবাবে

বসার ঘরের আসরটাকে রোমাঞ্চকর করে তুলতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সোফা, সেন্টার টেবিল ও টিভি কেবিনেট-এর মতো ফার্নিচার। তবে মনে রাখা প্রয়োজন এই আসবাবগুলো বেশ ব্যয়বহুল, ইচ্ছে করলেই বারবার বদলে ফেলার উপায় নেই। তাই, বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিন।  সোফা কেনার সময় অবশ্যই দেয়ালের রঙের কথা মাথায় রাখবেন। এতে করে ড্রয়িংরুমকে গোছানো লাগবে। অথবা সাদা কোনো সোফা সেট কিনে ফেলুন। সাদা যেকোনো রঙের দেয়ালের সাথে মানিয়ে যাবে। এমনকি সাদা দেয়ালের সাথেও। এ ক্ষেত্রে হাতিলের Anderson-279 বা Chico-267-এর মতো শ্বেতশুভ্র সোফাগুলো বেশ মানানসই হবে। এর সাথে যোগ করুন রং-বেরঙের কুশন। তাতে রুমের একঘেয়ে ভাব কাটবে। 

সাদা বা ধূসর রঙের সোফা যেকোনো রঙের দেয়ালের সাথে মানিয়ে যায়

ঘরে যদি খুব বেশি জায়গার স্বল্পতা থাকে, তাহলে টু সিটার বা সিঙ্গেল সিটার সোফাগুলো হবে আপনার বসার ঘরের জন্য সঠিক পছন্দ। এ ছাড়া ছোট ঘরকে ব্যবহার উপযোগী করতে হাতিলের স্মার্টফিট ফার্নিচার সেকশনেও রয়েছে বসার ঘরের জন্য দারুণ ফার্নিচারের অপশন। বেছে নিতে পারেন সেখান থেকেও। আর যদি শোবার ঘর থাকার পরেও বাড়তি একটি বিছানার প্রয়োজন বোধ করে থাকেন তাহলে নিঃসঙ্কোচে কিনে ফেলতে পারেন Fusion-302-এর মতো সোফা কাম বেড। তবে বসার ঘরের জন্য সোফা যে লাগবেইএমন কোনো কথা নেই। চাইলে একটা ডিভান কিনে সুন্দর কিছু কুশন দিয়ে বসার ঘরটিকে সাজাতে পারেন। সোফা হোক বা ডিভান, তার সাথে যোগ করুন সুন্দর একটি সেন্টার টেবিল। বসার ঘরের চেহারাটাই বদলে যাবে। 

তবে বসার ঘরে সোফা লাগবেই, তা কিন্তু না। বসার ঘরে একটা ডিভান কিনে কুশন দিয়ে সাজাতে পারেন। না হলে ছোট তোশক ভাঁজ করে ফ্লোরে রেখে তার ওপর সুন্দর একটা ব্লক বা হাতের কাজের চাদর বিছিয়ে রঙিন কুশন দিয়ে সাজালে ভালো লাগবে। অতিথি এলে এই তোশক বিছানা হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে।

 

দেয়ালজুড়ে রঙের খেলা 

রঙের সঠিক ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে পারে নবদপতিদের বসার ঘরের সোন্দর্য। উজ্জ্বল এবং হালকা রং ঘর বড় দেখাতে সাহায্য করে। তাই বসার ঘরটি ছোট হলে, ব্যবহার করুন সাদা, অফ হোয়াইট বা অন্য যেকোনো রঙের সব থেকে হালকা শেডটি। এতে হালকা রঙের প্রভাবে ঘরটি বড় দেখাবে। যদি ঘরে সূর্যের আলো কম ঢোকে তাহলে কোনোভাবেই দেয়ালে গাঢ় রং করাবেন না। ঘর আরও অন্ধকার দেখাবে। তবে ভিন্নতা আনতে, একটি দেয়ালে কমলা, লাল, হালকা নীল রং করে অন্য দেয়ালগুলোয় নিউট্রাল রং করাতে পারেন। এভাবে, কনট্রাস্ট রঙের ব্যবহারে ঘরের স্যাঁতসেঁতে এবং একঘেয়ে ভাবটিও দূর হবে। চাইলে, দুজনে মিলে দেয়ালজুড়ে এঁকে নিতে পারেন ইচ্ছেমতো ছবি বা আল্পনা। তাতে নিজেদের একান্ত কিছু ছাপ রয়ে যাবে দেয়ালের গায়ে।  

 

আলোয় বসবাস   

বসার ঘরের সাজসজ্জার পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে এর আলোকসজ্জার দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। আলোছায়ার খেলার মাঝে যদি নতুন সংসারটি শুরু করতে চান, তাহলে  সাদা, লাল, কমলা, গোলাপি বিভিন্ন ধরনের আলো ব্যবহার করুন। বিশেষ অংশকে ফুটিয়ে তুলতে যোগ করে নিন ছোট ছোট স্পটলাইট। এতে দুজনার আলোয় বসবাস হয়ে উঠবে আরো চমকপ্রদ।    

 

আনুষঙ্গিক 

নবদম্পতিদের বসার ঘরের অন্দরসজ্জা কেবল আসবাবপত্র, আলোকসজ্জা আর রঙের ব্যবহারের মাঝেই গুটিয়ে ফেলার উপায় নেই। সাথে সাথে পর্দা, সোফার কুশন, শতরঞ্জি, কিংবা ওয়াল পেইন্টিংয়ের মতো ছোট ছোট আনুষঙ্গিক যুক্ত হলে, তবেই ঘরে আসে পূর্ণতা। নবদম্পতিদের বসার ঘরটি ছোট হলে ভারী পর্দার বদলে বৈচিত্র্যময় হালকা ফেব্রিকের পর্দাগুলোই বেশি মানানসই হবে। সেই সাথে মেঝের জন্য বাজেট অনুযায়ী বেছে নিন উজ্জ্বল রঙের কার্পেট কিংবা শতরঞ্জি। এতে বসার ঘরটিতে আভিজাত্য ফুটে উঠবে। দেয়াল সাজাতে যে  বড় কোনো স্বনামধন্য কোনো শিল্পীর আঁকা ছবিই লাগবে, তা কিন্তু নয়। একটু বুদ্ধি খাটিয়ে  পছন্দমতো পেইন্টিং ঝুলিয়ে দিলেই ঘরটি হয়ে উঠবে আরো বেশি নান্দনিক।  

পছন্দমতো পেইন্টিং ঝুলিয়ে বসার ঘরটিকে নান্দনিক করে তুলুন 

নবদম্পতিদের বসার ঘরটি একটি ধরাবাঁধা নিয়মেই সাজাতে হবে, তা কিন্তু নয়। তবে ছোট ছোট এ ধরনের বিষয় মাথায় রাখলে নতুন সংসারের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বেশ সহজ হয়ে যায়। বিয়ের পর সংসারটি কী করে দুজনের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া যায়, এ নিয়ে ভাবনা থাকবেই। আর সেই ভাবনার সহজ কিছু সমাধানই তোলা রইল আজকের লেখায়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।