শীতের শুরুর প্রস্তুতি

দিন ছোট হয়ে আসছে। সন্ধ্যার দিকে হালকা কুশায়া পড়া শুরু করেছে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে নতুন করে দেখা যাচ্ছে অস্থায়ী পিঠাপুলির দোকান। সেখানে বাড়তে শুরু করেছে ভিড়। বাতাসে এখন আসন্ন শীতের ঘ্রাণ। 

এখনই সময় অন্দরে শীতের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখার। বাংলাদেশে শহরগুলোতে শীতের প্রকোপ তেমন নেই। তাই শীতের প্রস্তুতিও তেমন কঠিন কিছু নয়। শীতের জামাকাপড় ও লেপ-কম্বল বের করা, বাসার আসবাব, নিজের ত্বক ও শরীরের যত্নের প্রস্তুতি নেওয়া, বাসা আরেকটু উষ্ণ রাখার ব্যবস্থা করাএই তো।

চলুন, বাসায় শীতের প্রস্তুতি নেওয়ার পাঁচটি সহজ উপায় জেনে নেওয়া যাক : 

মেঝেতে কার্পেট অথবা শতরঞ্জি

মেঝেতে কার্পেট যোগ করবে বাড়তি ওম 

তীব্র শীতের সময় সাধারণত সবাই দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখে। এরপরও এই সময়ে ঘরের মেঝে হয়ে থাকে তীব্র শীতল। এই শীতল মেঝে থেকে মুক্তির উপায় হতে পারে কার্পেট অথবা শতরঞ্জি। শীতের দিনে কার্পেট কিংবা শতরঞ্জির ব্যবহার আপনার ঘরে যোগ করবে বাড়তি উষ্ণতা। 

যেকোনো ভালো মানের উলের কার্পেটের দাম সাধারণত একটু বেশি হয়। বাসার প্রতিটি ঘরে কার্পেট বসাতে না চাইলে ব্যবহার করতে পারেন শতরঞ্জি। বাংলাদেশের রংপুরের বিখ্যাত শতরঞ্জি অনেক ধরনের ফেব্রিকে পাওয়া যায়। এর দাম কার্পেটের তুলনায় কিছুটা কম। তবে চাইলে অনেক দামি শতরঞ্জিও ব্যবহার করা যেতে পারে। শতরঞ্জি শুধু মেঝেতে নয়, কম্বলের বিকল্প হিসেবে সোফায় কিংবা বিছানায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। 

কার্পেট এবং শতরঞ্জি শুধু উষ্ণতাই বাড়ায় না। বাসার সজ্জাতেও যোগ করে দারুণ শৈলী। তবে শীত ঠিকমতো পড়ার আগেই উঠিয়ে রাখা কার্পেটের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রক্রিয়াটি সেরে ফেলতে হবে। যদি উঠিয়ে রাখা কার্পেট স্যাঁতসেঁতে হয়ে পড়ে, তাহলে শীতের আগেই তা রোদে দিতে হবে। কার্পেট ময়লা থাকলে ড্রাই ক্লিনিংয়ে পাঠিয়ে শীতের আগেই প্রস্তুত থাকা ভালো।

 জানালায় ভারী পর্দা

ঠান্ডা কমাতে জানালায় ভারী পর্দা ব্যবহার করতে পারেন

শীতে জানালায় হালকা পর্দার বদলে বিশেষ ভারী পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। এতে সকালে জানালা খুলে রাখলেও তেমন ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢোকার সুযোগ পাবে না। এমনকি জানালা বন্ধ থাকলেও বাড়তি উষ্ণতা দেবে ভারী পর্দা। 

শীতের জন্য উপযুক্ত ভারী পর্দা অনেক দোকানেই পাওয়া যায়। প্রয়োজনে পছন্দের নকশার কাপড় কিনে দরজির কাছেও এমন পর্দা বানানো যেতে পারে। তবে এসব পর্দার যত্নের প্রক্রিয়াটিও আবার ভিন্ন। বেশ সাবধানে না রাখলে খুব দ্রুতই নষ্ট হয়ে যেতে পারে ভারী পর্দা। এগুলো সাধারণত হাতে ধোয়া যায় না। ড্রাই ক্লিনিং করতে হয়। তাই শীতের বেশ আগে আগে এই পর্দাগুলো নামিয়ে ব্যবহারের উপযুক্ত করে তুলতে হয়। 

আবার শীতের শেষে, এই পর্দাগুলো খুব সাবধানে সংরক্ষণ করতে হয়। এসব পর্দা এমন জায়গায় রাখা উচিত, যেখানে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি নয়। আর্দ্রতা বেশি, এমন কোথাও ভারী পর্দা সংরক্ষণ করলে সেগুলো দ্রুতই স্যাঁতসেঁতে হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। 

শীতের কাপড়ের জন্য আলাদা আলমারি

 শীতের কাপড়ের জন্য একটি আলাদা আলমারি রাখা যেতে পারে 

শীতের কাপড়কেন্দ্রিক নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার ব্যাপার থাকে। বাংলাদেশে যেহেতু বছরের বেশির ভাগ সময়ই উষ্ণ তাপমাত্রা থাকে, তাই শীতের কাপড় খুবই কম সময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। শীতে পরার জন্য জামাকাপড় ও গায়ে দেওয়ার জন্য লেপ-কম্বলগুলো তাই বছরের বেশির ভাগ সময়ই আলমারিতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। শীতের আগে কাপড় এবং গায়ে দেওয়ার কম্বলগুলো নামিয়ে তাই ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হয়। ধোয়া কিংবা ড্রাই ক্লিনিং এবং প্রয়োজনে কাপড় রোদে দেওয়া এই প্রক্রিয়ার অংশ।

শীতের কাপড়ের এই ব্যবস্থাপনা অনেকের জন্যই ঝক্কি হয়ে দাঁড়ায়। সম্ভব হলে বাসায় সবার শীতের কাপড় এবং শীতের অন্যান্য ব্যবহার্যের জন্য একটি আলাদা ওয়ার্ডরোব ব্যবহার করা এ ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হয়ে উঠতে পারে। এমন ওয়ার্ডরোব খুঁজে বের করা উচিত, যেগুলো জায়গা বেশি না নিলেও অনেক স্টোরেজ স্পেস দিতে সক্ষম। এই ক্ষেত্রে হাতিলের ইউরোপিডস-১৮১ ওয়ার্ডরোবটি আপনার পছন্দ হতে পারে। 

কাপড় রোদে শুকানোর জায়গা 

করোনা অতিমারির প্রকোপ অনেকটা কমে এলেও এখনো পুরোপুরি নিরাপদ নই আমরা। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের চলতে হবে আরো অনেক দিন। করোনার স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী, বাইরে থেকে এসেই জামাকাপড় ধুতে দিতে হয়। তবে শীতে এই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একেবারেই সম্ভব নয়। কারণ, শীতে প্রতিনিয়ত কাপড় ধোয়া সম্ভব নয়। 

বাইরে থেকে এসে জামাকাপড় রোদে দেওয়া শীতে দারুণ কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। জামায় কোনো ধরনের ভাইরাস থাকলেও, রোদের তাপে সেটা বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

তাই শীতের প্রস্তুতি হিসেবে বাসায় এমন একটি জায়গা খুঁজে বের করতে হবে, যেখানে প্রতিদিনই কাপড় রোদে শুকাতে দেওয়া যায়। বড় বারান্দা থাকলে তো হলোই। নয়তো পুব দিকের একটি জানালাও ব্যবহার করা যেতে পারে। 

ঘরের উষ্ণতা বাড়াবে মোমবাতি

শীতের দিনে মোমবাতি প্রস্তুত রাখুন

বাংলাদেশে সাধারণত ইলেকট্রিক হিটার ব্যবহার করার মতো শীত পড়ে না। তবু শীতে বাসা উষ্ণ রাখার প্রয়োজন পড়ে। বাসা উষ্ণ রাখতে মোমবাতি হয়ে উঠতে পারে দারুণ সমাধান। বাসার বিভিন্ন ঘরে মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখলে বাড়তি আলো তো তৈরি হবেই। আবার বাসার পরিবেশও হয়ে উঠবে উষ্ণ এবং আরামদায়ক। তাই শীতের প্রস্তুতি হিসেবে নানা ধরনের মোমবাতি বাসায় কিনে রাখা যায়। 

এখন নানা ধরনের সুগন্ধযুক্ত মোমবাতিও পাওয়া যায়। শীতের সময় এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। ঘরে উষ্ণতা তো থাকবেই, একই সাথে থাকবে মোমবাতির নরম আলো এবং দারুণ সুগন্ধ। 

বাসায় শীতের আগাম প্রস্তুতি আপনি কীভাবে নিচ্ছেন, তা এখনই কমেন্টে জানিয়ে দিন আমাদের।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।