সন্তানের বাবা-মা হিসেবে আপনি অবশ্যই চাইবেন আপনার সন্তান যেন তার বসবাসের ঘরটিকে পছন্দ করে। কারণ তার দিনের একটি বড় অংশ কাটবে এই রুমে যেখানে সে হাসবে, কাঁদবে, খেলবে। কিন্তু কিভাবে একটি সাধারন রুমকে আপনি আপনার সন্তানদের কাছে আকর্ষণীয় করে সাজাতে পারেন?
বর্তমানে বাচ্চাদের রুম সাজানোর অনেক ধরণের অপশন রয়েছে। আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন সেটা খুবই কনফিউজিং মনে হতে পারে। প্রথমে যেটা মাথায় রাখা উচিত যে আপনার সন্তানই এই রুমে থাকবে। তাই তার পছন্দ-অপছন্দ কে আগে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে।
তারা কি দেখে খুশি হয়? তাদের প্যাশন এবং ইন্টারেস্টের জায়গা কোনগুলো? এ ধরনের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো চিন্তা করলে আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন তার একটা আন্দাজ করতে পারবেন। দিনশেষে এই রুমেই তারা বড় হবে, বেড়ে উঠবে, এখানেই তাদের চিন্তার বিকাশ ঘটবে।
আপনার সন্তানকে আরও ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করুন
রুমে রং করা বা রুমের জন্য ফার্নিচার বাছাই করার আগে তাদের আগ্রহের জায়গাগুলো সম্পর্কে জানুন। তাদের পছন্দের টিভি-শো কোনটা? তাদের পছন্দের কোনো সুপারহিরো বা ক্যারেক্টার আছে কিনা এই ব্যাপারে তাদের জিজ্ঞাসা করুন। তাদেরকে আরও জিজ্ঞাসা করুন যে তারা কীভাবে তাদের স্বপ্নের ঘরকে কল্পনা করে।
হতে পারে তারা পরী এবং পশু পাখিদের কে নিয়ে একটি গভীর জঙ্গলের কথা কল্পনা করছে। অথবা মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহের চিন্তা তাদের মাথায় ভাসছে। এগুলো জানতে পারলে আপনি কি ধরনের থিম দিয়ে ঘর সাজানো শুরু করতে পারেন সে ব্যাপারে একটা আইডিয়া পাবেন।
ডেকোরেশনের জন্য যখন কেনাকাটা করতে যাবেন তখন তাদেরকে সাথে নিয়ে যান। তাদের মতামত ও পছন্দ-অপছন্দ কে প্রাধান্য দিন। হতে পারে তারা এমন কিছু দেখিয়ে দিচ্ছে যেটার কথা আপনি আগে চিন্তাও করেননি।
রুমের সেটআপটি মাল্টি ফাংশনাল রাখার চেষ্টা করুন
স্বভাবতই বাচ্চাদের বসবাস করতে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের তুলনায় বেশি জায়গার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই জনবহুল বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মানুষের বসবাসের জায়গা খুবই সীমিত। তাই মাল্টি ফাংশনাল ফার্নিচার ব্যবহার করে আপনি রুমের অনেক জায়গা বাঁচাতে পারেন।
- বাঙ্ক বেড গুলো জায়গা কম লাগার কারণে বেশ পরিচিত। এই বেডের নিচে অনেক সময় ড্রয়ারও থাকে যার কারণে রুমের অনেক জায়গা বাঁচানো যায়।
- একটি বড় বিন ব্যাগ এর মাধ্যমে আপনার বাচ্চার জন্য একটি রিডিং কর্নার সাজাতে পারেন। এখানে তারা তাদের বন্ধুবান্ধব আসলে একসাথে বসতেও পারবে।
- কিছু বেড সাইড শেলফ পাওয়া যায় যেগুলো একই সাথে আপনার বাচ্চার জন্য একটি ছোটখাটো টেবিল হিসেবেও কাজ করতে পারে।
- কিছু খাট আছে যেগুলো নিচের দিকে বেঞ্চের মতো বসার জায়গা থাকে। এটারই আবার ঢাকনা খুললে ভেতরে জিনিসপত্র রাখার মতো স্টোরেজ পাওয়া যায়।
এ ধরনের মাল্টিপারপাস ফার্নিচার কে অনেক ক্রিয়েটিভ উপায়ে ব্যবহার করা যায়। সময়ের সাথে সাথে নতুন করে সাজিয়ে এর আরও বিভিন্ন উপায় বের করা সম্ভব।
আপনার যদি একাধিক সন্তান থাকে এবং তারা একই রুমে থাকে সেক্ষেত্রে হাতিলের এই বাঙ্ক বেড টি আপনার খুবই কাজে আসতে পারে। এই বেডটি যেমন টেকসই তেমন এর অনেক ফাংশনালিটি রয়েছে। তাই একাধিক একাধিক সন্তানের ক্ষেত্রে এই বেডটি তাদের রুমের জন্য পারফেক্ট হতে পারে।
কল্পনার জগতকে বিকশিত করুন
শুধু সাজানোই নয়, রুমের ডেকোরেশন এমন হওয়া উচিত যেন তা কল্পনার জগতে নাড়া দেয়। যেমন কিছু ছোটখাটো টিপস ফলো করা যেতে পারেঃ
- পর্দার সাথে ফেইরী লাইটস লাগিয়ে দেখতে পারেন। রাতের অন্ধকারে এটির আলো তারা সজ্জিত আকাশের মতো দেখতে লাগে।
- দেয়ালে তাদের ফেভারিট ক্যারেক্টারগুলো একে রুমে সুন্দর লুক দেয়া সম্ভব।
- রুমের দেয়ালে রিমুভেবল স্টিকার লাগিয়ে আপনি ডেকোরেশন করতে পারেন। এগুলো সুবিধা হচ্ছে সহজে এটি তুলে আবার নতুন স্টিকার লাগানো যায়।
- রুমে একটি সুন্দর রিডিং কর্নার বানাতে পারেন যেটা বাচ্চাদেরকে বই পড়তে উৎসাহিত করবে।
কোন জিনিসটা নিয়ে তারা কিভাবে কল্পনা করবে সেটি আপনি কখনো নির্ধারণ করে দিতে পারবেন না তাই ডেকরেশুনের ক্ষেত্রে ছোট ছোট জিনিসকেও গুরুত্ব দিন।
সাজানো-গোছানো রাখুন
বাচ্চাদের স্বভাবই জিনিসপত্র এলোমেলো করে ফেলা। তাই রুমের ডেকোরেশন এমন রাখা উচিত যেটা তাদেরকে জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে উদ্বুদ্ধ করবে।
- বিভিন্ন ধরনের খেলনা রাখার জন্য বিভিন্ন রঙের বাহারি ব্যাগ রাখুন। সেগুলো তাকের উপর এমন ভাবে সাজিয়ে রাখুন যাতে তারা সহজেই সেগুলোর নাগাল পায়।
- ক্যালেন্ডারের পাশেই একটি চকবোর্ড ঝুলিয়ে রাখুন যেখানে তারা তাদের দৈনন্দিন কাজগুলো লিখে মেইন্টেইন করতে পারে।
- দেয়ালে জ্যাকেট বেল্ট ও ব্যাগ রাখার জন্য হুক লাগিয়ে দিন।
- রুমের কর্নার গুলোতে ভাঙা জিনিসপত্র অথবা ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি রেখে দিন।
যখন প্রত্যেকটি জিনিসের জন্য আলাদা আলাদা স্থান বরাদ্দ থাকবে তখন সবকিছু সাজিয়ে রাখা সহজ হবে।
স্বাধীনতাকে প্রাধান্য দিন
রুমটি এমন ভাবে সাজান যেনো আপনার বাচ্চা নিজের কাজ নিজে করে আত্মনির্ভরশীল হতে শিখতে পারে।
- রুমে ছোট্ট একটি আয়না লাগান যেন তারা নিজেরাই সঠিকভাবে নিজেদের পোশাক-আশাক পরতে পারে।
- জামাকাপড় রাখার স্থানটি যাতে সহজভাবে ব্যবহারযোগ্য হয় সেভাবে তৈরি করুন।
- শোবার সময়ের জন্য আলাদা একটি স্বয়ংক্রিয় ডিম লাইট ব্যবহার করুন।
- সময়ানুবর্তিতা শেখানোর জন্য দেয়ালে ঘড়ি স্থাপন করুন।
- দেয়ালে একটি ডিজিটাল ক্যালেন্ডার রাখুন যেখানে তারা তাদের দৈনন্দিন কাজ লিস্ট করে মেইনটেইন করতে পারে।
সঠিকভাবে সাজালে তারা তাদের রুম থেকেও জীবনের অনেক প্রয়োজনীয় দায়িত্ব শিখে নিতে পারে।
আরামদায়ক লাইট ব্যবহার করুন
রুমের আলো একজন মানুষের মনকে অনেক গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তাই রুমে আলো কেমন হবে সেটিতেও গুরুত্ব দেয়া উচিত।
- আলোর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায় এ ধরনের একটি লাইট রুমের প্রধান লাইট হিসেবে স্থাপন করুন যাতে প্রয়োজন অনুসারে লাইটের মাত্রা কমিয়ে বাড়িয়ে রুমে স্বাচ্ছন্দে থাকা যায়।
- রিডিং কর্নারের লাইটটি শক্তিশালী রাখুন যাতে তাদের পড়তে কোন অসুবিধা না হয়।
- দেয়ালে ফেইরী লাইটস লাগানোর কথা বিবেচনা করে দেখতে পারেন কারন এগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগে।
- টেবিল ল্যাম্পে এমন মাত্রার আলো ব্যবহার করুন যা মানুষের চোখের জন্য আরামদায়ক হয়।
- ঘুমানোর ডিম লাইটটেও যেন খুবই মৃদু আলোর হয় সেদিকেও লক্ষ্য রাখুন।
- লাইটের সুইচ গুলো এমন ভাবে স্থাপন করুন যেন সহজে তা অন অফ করা যায়। এতে তারা সময় মতো লাইট ফ্যান অফ করতে শিখবে।
বিভিন্ন ধরনের স্টোরেজ অপশন রাখুন
একটি বাচ্চা খেলনা থেকে শুরু করে বই খাতা কলম কাগজ ইত্যাদি জিনিস ব্যবহার করে। তাই তাদের এ সকল জিনিস রাখার জন্য বড় স্টোরেজ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- ছোট জিনিস গুলোর জন্য আলাদা রঙের বিভিন্ন ঝুড়ি রাখুন।
- বয়সের সাথে সাথে তাদের উচ্চতা কম বেশি হলে সেটার সাথে সামঞ্জস্য করে দেয়ালের তাক গুলো উঁচু-নিচু করুন।
- হাতের নাগালে পাওয়া যায় এরকম একটি জায়গায় বুকশেলফ স্থাপন করুন।
- বেডের পায়ের কাছে স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহার করা যায় এরকম বক্স শেপের বেঞ্চ রাখুন।
- দরজার কাছে এরকম একটি স্টোরেজ রাখতে পারেন যেখানে তারা তাদের ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি জিনিস রাখতে পারে।
তাদের পছন্দকে প্রাধান্য দিন
তারা যে ধরনের জিনিস পছন্দ করে সে ধরনের জিনিস দিয়ে রুমটিকে সাজান।
- তাদের পছন্দের কোনো চিত্রকর্ম অথবা সার্টিফিকেট দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখুন।
- দেয়ালে তাদের ফেভারিট ক্যারেক্টারের স্টিকার লাগান।
- দেয়ালের তাকে তাদের নিজ হাতে বানানো খেলনা বা ক্রাফটিংগুলো সাজিয়ে রাখুন।
- একটি বুলেটিন বোর্ড রাখুন যেখানে তারা তাদের প্রয়োজনীয় ছবি, স্মৃতি বিজড়িত নোটস ইত্যাদি সাটিয়ে রাখতে পারে।
তারা নিজেরা যদি কিছু এনে লাগাতে চায় সেটিও উৎসাহিত করুন। তাদেরকে বুঝতে দিন যে রুমটা তাদের নিজের।
টেকসই ফার্নিচার ব্যবহার করুন
বাচ্চারা স্বভাবতই অনেক দৌড়াদৌড়ি ও লাফালাফি করে। তাই তাদের ব্যবহৃত ফার্নিচার হওয়া উচিত অনেক শক্ত ও মজবুত।
- প্লাস্টিক বা বোর্ডের ফার্নিচার ব্যবহার না করে মেটাল অথবা শক্ত কাঠের ফার্নিচার ব্যবহার করুন।
- খাটের ফ্রেম যেন শক্ত হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
- এমন ফার্নিচার ব্যবহার করুন যেটাতে সহজে দাগ পড়ে না।
- শক্ত কাঠের ফ্লোরিং অথবা টেকসই পাপোশ ব্যবহার করুন কারণ সাধারণ পাপোশে খুব সহজে দাগ পড়ে।
- ফার্নিচার গুলোর কর্নারে যেন গোল করে কাটা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন কারণ সূচালো কর্নারে সহজেই বাচ্চাদের আঘাত লাগতে পারে।
উন্নত মানের ফার্নিচারে খরচ বেশি পড়লেও তা ব্যবহার করাই শ্রেয় কারণ একটি বাচ্চার স্মৃতির সাথে সেগুলো জড়িয়ে থাকে এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সেগুলো তাদের বড় হওয়া পর্যন্ত টিকে যায়।
রুমের ডিজাইনটি পরিবর্তন যোগ্য রাখুন
বাচ্চারা যেন নিজেই নিজেদের মতো করে রুম সাজিয়ে নিতে শিখে সে ব্যাপারে তাদের উৎসাহিত করুন।
- তাদের বিছানার চাদর অথবা বালিশের আকৃতি তাদেরকেই বেছে নিতে বলুন।
- তাদের রুমের দেয়ালে যদি তারা কিছু আঁকতে চায় সেটিতে আগেই বাধা দিবেন না। তাদের কল্পনার জগতকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ দিন।
- ড্রয়ার গুলোতে আলাদা আলাদা রং ব্যবহার করুন।
- তাদের পাওয়া পুরস্কার, চিত্রকর্ম, ছবি ইত্যাদি দেয়ালে সাজানোর জন্য উৎসাহিত করুন।
- দেয়ালে একটি চকবোর্ড রাখুন যেখানে তারা তাদের মন খুশিমতো আঁকতে বা লিখতে পারে।
তাদের রুম সহজেই পরিবর্তনযোগ্য হলে এবং তারা নিজেরা সেখানে পরিবর্তন আনতে পারলে এটি তাদের আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়।
পরিশেষ
দিনশেষে রুম সাজানোর কোন নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। আপনার বাচ্চার কল্পনার জগতকে এবং তাদের পছন্দ-অপছন্দকে প্রথমে প্রাধান্য দিয়ে রুমটি দেখতে যেরকম হবে সেটাই হবে তার জন্য সবচেয়ে ভালো ডেকোরেশন। পাশাপাশি রুমের ডিজাইন এমন রাখা উচিত যেন সেটি সহজেই সাজানো এবং গোছানো যায়। কারণ এই রুমে তারা বেড়ে উঠবে। তাদের সারাজীবনের স্মৃতির একটি বড় অংশ জড়িয়ে থাকবে এই রুমের সাথেই।
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ফার্নিচার ব্র্যান্ড হাতিল বাচ্চাদের বেডরুম সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরণের ফার্নিচার দীর্ঘকাল যাবৎ বানিয়ে আসছে। সেগুলো দেখতে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট অথবা আপনার নিকটস্থ হাতিলের শোরুম থেকে ঘুরে আসতে পারেন। ধন্যবাদ।