ছোট হোক কিংবা বড়- ঘর তখনই ঘর মনে হয় যখন এটা সুন্দর করে সাজানো থাকে। আপনার শোবার ঘর যদি সুন্দর করে গোছানো থাকে, তাহলে সেই ঘরে সময় কাটাতেও আপনার ভালো লাগবে। আবার বাসায় গেস্ট আসলেও সেই পরিপাটি বেডরুম দেখে আপনার রুচির প্রশংসা করবে।
তবে ছোট বেডরুম ডেকোরেশন করা অনেকের কাছেই চ্যালেঞ্জিং এবং সময়সাপেক্ষ ব্যাপার বলে মনে হতে পারে। আপনার শখের ঘরটি ছোট বলে সেখানে প্রয়োজনীয় সকল ফার্নিচার কিংবা ম্যাটেরিয়াল গোছগাছ করে রাখা নেহাতই চাট্টিখানি কথা নয়। অনেকেই আবার ভাবতে পারেন, “ছোট জায়গার আবার সাজসজ্জা কীসের? গাদাগাদি করে সব রাখতে পারলেই হলো।” তাদের জন্য বলছি, আপনারা চাইলেই সঠিক ডিজাইন টিপস এবং কৌশলের সাহায্যে সহজেই আপনার ছোট বেডরুমটি স্বপ্নের মত করে তুলতে পারেন।
ছোট বেডরুমের ফার্নিচার আইডিয়া
ছোট অথবা বড় সাইজের বেডরুম সাজানোর জন্য সবার প্রথমে রুমের স্পেস প্ল্যানিং এবং লাইটিং এর বিষয়টি খেয়াল রাখা জরুরি। পরিকল্পিতভাবে এই প্ল্যানিং করতে পারলে যেকোনো বেডরুমকেই সমসময় পরিপাটি রাখা যায়।
ছোট বেডরুমের বিছানা
ছোট সাইজের বেডরুমের জন্য নিত্য নতুন ডিজাইনের মডার্ন এবং ভার্সেটাইল বেড কিংবা বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইনের মাল্টিপারপাস বেড কিনতে পাওয়া যায়। মাল্টিপারপাস বেডগুলো সাধারণ সময়ে সোফা হিসেবে গুছিয়ে রাখা যায়, এবং বাসায় গেস্ট আসলে আপনি চাইলে এই সোফাকেই বেডে রুপান্তর করতে পারবেন। এই ধরনের মডার্ন বেডই এখন বেশ ট্রেন্ডিং এবং ঘরের ফার্নিচার হিসেবে বর্তমান জেনারেশনের প্রথম পছন্দ। তাই চোখ বন্ধ করে এই ধরনের বেডিং সিস্টেম আপনার ঘরে রাখতে পারেন।
শুধু বেড ভাল হলেই হবেনা, বেডের সাথে ম্যাট্রেসের কোয়ালিটিও প্রিমিয়াম হতে হবে। খারাপ কোয়ালিটির ম্যাট্রেস দীর্ঘসময় ব্যবহারে পিঠে এবং ঘাড়ে ব্যথা হয় এবং অনেক সময় স্পাইনাল কর্ড ইস্যু দেখা যায়। এছাড়াও, বয়স্ক মানুষদের জন্য লো-কোয়ালিটির ম্যাট্রেস আরো নানাবিধ ইস্যু তৈরি করতে পারে। তাই বেডের সাথে তোশক-জাজিম ব্যবহার না করে ভাল কোয়ালিটির নরম ম্যাট্রেস ব্যবহার করুন। তাছাড়াও, বিছানার সাথে মানানসই বালিশ ব্যবহার করুন।
সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট রাখুন
বেডরুমকে শুধু শোয়ার জায়গা হিসেবে সীমাবদ্ধ না রেখে এই রুমটিকে কমফোর্টেবল সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট দিয়েও সাজানো যায়। ধরা যাক, আপনার কোন নিকটাত্মীয় আপনার বেডরুমে এলে তাকে কি খাটে বসাবেন? অনেকেই এই বিষয়টা পছন্দ করেন না। কিন্তু গেস্ট আপ্যায়নের জন্য যদি রুমে একটা ছোট বসার জায়গা রাখতে পারেন, তাহলে ঘরটাকেও পরিপূর্ণ মনে হবে, আবার অতিথি আপ্যায়নও করা হবে। এই কাজের জন্য ছোট সোফা সেট রাখতে পারেন।
তবে, ঘর যদি খুবই ছোট হয় তবে দুই একটি চেয়ার সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারেন। আবার, বিন ব্যাগও রাখতে পারেন আপনার ঘরে। রুমের মেঝেতে ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করুন, এতে ঘরের সৌন্দর্য বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও বসার জায়গায় সুন্দর কুশন দিয়ে সাজিয়ে নিন।
অতিরিক্ত স্টোরেজ
ছোট বেডরুমে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে নিলেই যে কোন জায়গাকে মাল্টিপারপাস উপায়ে ব্যবহার করতে পারবেন। যেহেতু আপনার ঘর ছোট তাই, আসবাব বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। সুতরাং যে আসবাবই কিনুন না কেন, স্টোরেজ স্পেস আছে কিনা দেখে নিন। ধরুন, বসার ঘরে একটি ডিভান রাখবেন, যেটার ফলে বসার কাজে যেমন ব্যবহৃত হবে তেমনি মেহমান এলে শোবার কাজেও ব্যবহৃত হতে পারবে। খাটের নিচে কিন্তু প্রচুর স্টোরেজ স্পেস থাকে। যেখানে আপনি অনেক কিছুই রাখতে পারবেন। আবার ফোল্ডিং বেডও ব্যবহার করতে পারেন, যা ব্যবহার শেষে গুছিয়ে রাখা যায়। যত পারবেন দেয়ালের ওপরের অংশ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। চাইলে ড্রেসিং টেবিল কাম কেবিনেট, বুক শেলফ কিংবা কর্নার শেলফও নিতে পারেন। আলমারি যে বড় আর লম্বাই হতে হবে তা কিন্তু নয়। মাঝারি আকারের আলমারি বানিয়ে নিন। আলমারির ওপরেও অনেক কিছু রাখতে পারবেন। দেখবেন, জায়গা নেয়নি বেশি, অথচ দেখতে কি দারুণ লাগছে! এভাবে প্ল্যানিং করে তবেই ঘরের জন্য আসবাব কিনুন।
টেবিল সেটাপ
রুমে অন্যান্য আসবাবের পাশাপাশি একটি পড়ার টেবিল বা ওয়ার্ক স্টেশন থাকা অনেকেরই রিকোয়ারমেন্টে থাকে। বিছানার মতই এটাও যদি এক পাশে সেট করা যায় তাহলে সেটা রুমের নান্দনিকতা বজায় রাখবে। মনে রাখতে হবে, রুমে যদি আলাদা করে বুকশেলফ থাকে তাহলে আপনি চাইলে টেবিলটি ফোল্ডেবল হিসেবে দেয়ালের সাথে সেট করতে পারেন, যাতে প্রয়োজনের সময় সেটাপ করে সহজেই পড়াশোনা করতে পারেন। আবার ল্যাপটপ ইউজারদের জন্যও এই ফোল্ডেবল টেবিল অনেক উপকারে আসবে। কিন্তু যদি ডেস্কটপ ইউজার হয়ে থাকেন, তাহলে ফুল ফাংশনাল টেবিল ঘরে রাখাই উত্তম। চেয়ারের ক্ষেত্রে রিভলবিং – এক্সিকিউটিভ চেয়ার রাখতে পারেন।
ছোট বেডরুমের অন্যান্য আনুসাঙ্গিক সেটিংস
দিনের সবচেয়ে শান্তির সময়টা আমরা যেহেতু বেডরুমেই কাটাই, তাই এই ঘরের অন্যান্য বিষয় যেমন দেয়ালের রং, ভেন্টিলেশন, শোপিস, অন্যান্য ফার্নিচার এবং সিলিং হসব বেশ কিছু বিষয়ে আলোকপাত করাটাও জরুরি।
মিনিমালিজম
ছোট বেডরুমে মিনিমালিজমই হতে পারে আপনার আপনার ঘরকে হাইলাইট করার মূল এলিমেন্ট। যেমন আপনি রুম সাজাতে আয়না ব্যবহার করতে পারেন। যেমন, খাটের পাশের দেয়ালে আয়না লাগানো যেতে পারে। বেডরুমে আয়নার ব্যবহার করে ছোট রুমকে বড় করা একটি ক্লাসিক পুরোনো ট্রিক। এছাড়া ঘরের ভেতর আয়না রাখা বেশ রুচিশীল সাজ বটে। আপনার ঘরের যেকোনো একটি দেয়াল জুড়ে আয়না রাখলে আপনি দেখবেন যে আপনার ঘর বেশ খানিকটা বড় দেখাচ্ছে এবং এটি রুম ডেকোরের দিক থেকে বেশ গভীর একটা ছাপ ফেলছে।
যতটা সম্ভব ফ্লোর খালি রাখবেন। এমনিতেই ছোট ঘর তার মধ্যে যদি ঘরের ভেতর সবকিছু আঁটসাঁট করে রাখেন তাহলে, ঘর আরও গুমট লাগবে। এমন হতে পারে যে, বেডসাইডে টেবিল রাখার জায়গা হচ্ছে না। আপনি বিছানার পাশে সিলিং থেকে সুন্দর একটি হ্যাঙ্গিং শেলফ ঝুলিয়ে নিতে পারেন। এতে করে বেডসাইড টেবিলের কাজও হবে, আবার মেঝের স্পেসটাও বাঁচবে।
রুমের কালার
রঙের ব্যাপারে সকলেই শৌখিন হয়ে থাকে। একের অধিক রং আমাদের অনেকেরই পছন্দ, কিন্তু তাই বলে সব রং ঘরের ভেতর ছড়িয়ে দেওয়া কখনই ঠিক হবে না। তাই পছন্দের রংগুলোকে দিয়ে ঘর সাজানোর সময় যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে তারপর কাজ করা উচিত। আমরা সকলেই জানি যে, ঘরের সাজে রঙের প্রভাব প্রচুর। যেহেতু, ঘরটা এমনিতেই ছোট তাই সাজের বেলায় অবশ্যই কোন রঙে বেশি ব্রাইটনেস আসবে ঘরে সে দিকটায় নজর দিতে হবে আগে।
সাদা রং মানেই শান্ত – নিরিবিলি – নিশ্চুপ একটা রং! সাদার সাথে সফট নিউট্রাল রং মিশিয়ে সঠিক পরিমাণের ওয়ার্ম একটা ফিলিং তৈরি করা সম্ভব। তাই সাদার সাথে মিলিয়ে কোন কালার টেক্সচার ঘরের বাইরে থেকেও দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম।
ঘর সাজাতে জানালা
আলো বাতাসের চলাচল ছাড়াও জানালাকে আরো একটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায় সেটা হলো রুম ডেকোরেশনের কাজে। আপনি চাইলে একটি কফি টেবিল জানালার কাছে রাখতে পারেন, আবার আপনার বিছানাটি ঘরের মাঝখানে রাখার পরিবর্তে, জানালার কাছে বোর্ড দিয়ে তাক তৈরি করে তারপর রাখুন। বিছানা মাঝে না রেখে জানালার কাছে রাখলে, আপনি সকাল সকাল আলোটা বিছানায় পেয়ে যাচ্ছেন, ঝকঝকে আকাশ দেখার সুযোগটাও পাচ্ছেন এটাও বা কম কীসের!
জানালায় পর্দার ব্যবহার
ঘর সাজানোর সময় এই জিনিসগুলো একদমই ভুলবেন না। আপনার ঘরের দেওয়ালের রং এবং আসবাবের ধরন ও রঙের সঙ্গে মানানসই পর্দা লাগান ঘরে। আপনি যদি চান, আপনার ছোট ঘরও দেখতে বড় লাগে তাহলে উজ্জ্বল ও সুন্দর রঙের পর্দা লাগাতে ভুলবেন না।
ফ্লোরাল পর্দা নিতে পারেন। এক রঙের পর্দাও নিতে পারেন। এখন পর্দা কাস্টোমাইজও হয়। সেক্ষেত্রে পর্দাকে সুন্দর টাচ দিতে পর্দার নিচে বিডস বা লেস ডিটেলে যোগ করতে পারেন। এটা দেখতেও বেশি সুন্দর লাগে।
ঘরের সিলিং
আপনি চাইলে সিলিং এর মেকওভার করতে পারেন। সিলিং এর মেকওভারের জন্য সিলিংয়ের চারিদিকে বর্ডার যোগ করতে পারেন। এছাড়া এম্বিয়েন্ট লাইটিংও করতে পারেন যা সবসময় সিলিংকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। অনেক অফিসে খেয়াল করলে দেখতে পারবেন, ফলস সিলিং ব্যবহার করা হচ্ছে, আপনিও চাইলে এইরকম কিছুও ব্যবহার করতে পারেন।
দেয়ালের ব্যবহার
ওয়ালের সৌন্দর্যের উপরেও আপনার ঘরের সৌন্দর্য অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বেডরুমের দেওয়াল সাজানোর সময় গুরুত্ব দিন। আপনি চাইলে পারিবারিক বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি বাঁধিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখতে পারেন। ফটোওয়াল দেখতেও সুন্দর লাগে। ঘরের যে দেয়ালে বেশি জায়গা রয়েছে অথবা যে দেয়ালটা আপনি পুরোটা ব্যবহার করতে পারবেন। আপনার যদি কোন নকশা পছন্দ হয় তাহলে সেটা আঁকুন অথবা, পছন্দের কোন গানের পঙক্তি লিখুন, অথবা পছন্দের কোন কবির কবিতা!
ছোট বেডরুম সাজানোতে রাখুন সৃষ্টিশীলতার ছাপ
নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি ব্যবহার করে আপনার বেডরুম ছোট হলেও সেটা এমন ভাবে ডেকোরেশন করা সম্ভব যে , এটি তখন আর ছোট হিসেবে মনেই হবেনা। চেষ্টা করবেন প্রপার ভেন্টিলেশন সিস্টেম এবং নাইট লাইটিং সিস্টেম তৈরি করতে, এবং রুমের কালারের সাথে মিলিয়ে কনট্রাস্ট কালারের ফার্নিচার ব্যবহার করতে, এতে করে আপনার সবচেয়ে প্রিয় ঘরটি হয়ে উঠবে আরামদায়ক এবং চমৎকার।