নিত্যদিনের আলোচনা কিংবা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে বর্তমানে অফিসে একসাথে বসে মিটিং করার প্রয়োজনে কনফারেন্স টেবিল এক অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিসের জন্য মানানসই ও চাহিদা অনুযায়ী কনফারেন্স টেবিল কিনতে গিয়েও অনেককেই দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে দেখা যায়।
এই লেখায় তাই পছন্দের কনফারেন্স টেবিল কেনা সংক্রান্ত কিছু জরুরি পরামর্শ বা টিপস আলোচনা করা হলো।
পাঁচটি কনফারেন্স টেবিল কেনা সংক্রান্ত পরামর্শ বা টিপস
১/ রুমের আকার কেমন?
কনফারেন্স টেবিল যে রুমে রাখা হবে সেই রুমের আকারের উপর নির্ভর করেই কনফারেন্স টেবিল কিনতে হবে। ঐ রুমে শুধুই কি কনফারেন্স টেবিলই থাকবে? যদি শুধু কনফারেন্স টেবিলই থাকে সেক্ষেত্রে একটু বড় সাইজেরই কিনতে পারবেন টেবিল। অন্যথায় একই রুমে থাকা অন্যান্য ফার্নিচারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কিনতে হবে কাঙ্খিত এই টেবিল। বাজারে এখন বিভিন্ন আকারের কনফারেন্স টেবিল পাওয়া যায়। আয়তাকার, বৃত্তাকার, বর্গাকারসহ নানা ডিজাইনের এই টেবিলগুলো ছোট-বড় নানা আকারেই পাওয়া যায়। এতে করে সহজেই নিজের পছন্দের আকার ও ডিজাইনের কনফারেন্স টেবিল বাছাই করে নিতে পারেন।
২/ ক’জন বসবে টেবিলে?
কনফারেন্স টেবিল কেনার আগে রুম এবং টেবিলের সাইজ নিয়ে ভাবার সময় গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে তা হলো সিটিং ক্যাপাসিটি বা সহজ করে বললে ক’জন বসবে এক টেবিলে৷ আপনি যে আকার বা ডিজাইনের কনফারেন্স টেবিলই কিনুন না কেন আপনাকে অবশ্যই মানুষের সংখ্যা অনুযায়ী টেবিল সাইজের ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে৷ আমি কিছুটা সহজ করে দিতে পারি হিসেবটা। ধরে নিন, ৬ ফুট লম্বা টেবিলে ৬ জন বসতে পারে। একইভাবে ১৫ ফুট লম্বা টেবিলে ১৫ জনের বসার ব্যবস্থা করা যাবে। এমন করে আপনি যদি আগে থেকেই জানতে পারেন যে ক’জনকে আপনি একটি কনফারেন্স টেবিলে জায়গা দিতে চান তাহলে সেটি দারুণ সহযোগিতা করবে এই টেবিল কেনার ক্ষেত্রে।
৩/ টেবিলের ডিজাইন হবে কেমন?
কনফারেন্স টেবিলের ডিজাইন নিয়ে ভাবনার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সাথে মানানসই ডিজাইনেই মনোযোগী হওয়া উচিত। ক্যাজুয়াল মিটিংয়ে কনফারেন্স টেবিল কিছুটা ভিন্ন ডিজাইনেরই হতে পারে। এক্ষেত্রে টেবিলের রং নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারেন। তবে ফরমাল মিটিংয়ের জন্য নির্ধারণ করা কনফারেন্স টেবিলের ক্ষেত্রে রংয়ের খুব বেশি এক্সপেরিমেন্ট না করাই ভালো। এক্ষেত্রে কালো বা ট্রেডিশনাল বার্নিশ রংকে প্রাধান্য দিতে পারেন। তবে সব ধরনের মিটিংয়ের ব্যাপারে চিন্তা করেই টেবিলের রং এবং ডিজাইনের নির্বাচন করা উচিত।
সাধারণত চার ধরনের কনফারেন্স টেবিলের প্রচলন দেখা যায়। ট্রেডিশনাল, কনটেম্পোরারি, ট্রানজিশনাল এবং মডার্ণ ডিজাইনের কনফারেন্স টেবিল। ট্রেডিশনাল কনফারেন্স টেবিল স্ট্যান্ডার্ড শেপ যেমন আয়তাকার, নৌকা আকৃতি কিংবা ডিম্বাকৃতিতে ডিজাইন করা হয়। এ ধরনের টেবিলগুলো আইন অফিস, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় ব্যবহার হতে দেখা যায়।
কনটেম্পোরারি ডিজাইনের কনফারেন্স টেবিলগুলো এদের ভৌগোলিক শেপের জন্য বেশ পরিচিত। দারুণ বার্ণিশ এবং নিখুঁত ফিনিশিং দেওয়া এসব টেবিল প্রায়ই বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হয়ে থাকে।
ট্রানজিশনাল কনফারেন্স টেবিল হচ্ছে ট্রেডিশনাল এবং কনটেম্পোরারি ডিজাইনের যৌথ রূপ। দুটো ডিজাইনের মিশেলে এই টেবিল তৈরি হওয়ায় এটি এক নান্দনিক ডিজাইনে রূপ নেয়। এই ধরনের টেবিলগুলো সাধারণত সামরিক বাহিনীর কার্যালয়ে, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, অটোমোটিভ প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার হতে দেখা যায়।
মডার্ণ ডিজাইনের কনফারেন্স টেবিলগুলো সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তৈরি করা হয়। এতে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজাইনের বিষয়টি যেমন নান্দনিক করা হয় তেমনি মানের দিক থেকেও শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়ার চেষ্টা থাকে উৎপাদনকারীদের।
৪/ দেখতে হবে টেবিলের কোয়ালিটিও
আপনি যেহেতু ফি বছর কনফারেন্স টেবিল কেনার কথা ভাববেন না সেহেতু কনফারেন্স টেবিল কেনার সময় এর গুণগত মান নিয়েও নিশ্চিত হয়ে নিন। এক্ষেত্রে কনফারেন্স টেবিলটি কোন কাঠ দিয়ে তৈরি সে ব্যাপারটি বিবেচনায় নিতে পারেন। কিছু কনফারেন্স টেবিল আছে যেগুলো সুপিরিয়র কোয়ালিটি মেলামাইন ফেসড পার্টিকেল বোর্ড দিয়ে তৈরি৷ আন্তর্জাতিক কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড এবং লোড বিয়ারিং ক্যাপাসিটির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে এসব টেবিল তৈরি করা হয়ে থাকে ৷ তাই গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন থাকে না।
আবার কিছু কনফারেন্স টেবিল আছে যেগুলো কিল্ন ড্রাইড ইম্পোর্টেড বিচ উড এবং ভেনিয়ার্ড ইঞ্জিনিয়ারড উড দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে উচ্চ মানের পরিবেশবান্ধব ইতালিয়ান আল্ট্রা ভায়োলেট এবং পলিইউরিথ্রিন লিকুয়ার অ্যান্টিক ফিনিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এসব টেবিলে। তাই এসব কনফারেন্স টেবিলও যথেষ্ট মানসম্পন্ন।
এ দুই ধরনের আরো বেশকিছু ধরনের কনফারেন্স টেবিল রয়েছে যেগুলো ভিন্ন ভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি হলেও এই দুই ধরনের কনফারেন্স টেবিলের গুণগত মানের জন্য এগুলোর প্রতিই বাজারে সবচেয়ে বেশি চাহিদা লক্ষ্য করা যায়।
৫/ টেবিলের প্রতি যত্নশীল হওয়া জরুরি
কনফারেন্স টেবিল কেনার পর সেটি যখন ব্যবহার করা হবে তখন সেটির প্রতি যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। কারণ ধুলাবালি বা পচন ধরায় এমন তরল বা কঠিন দ্রব্য টেবিলে পড়লে সেটি টেবিলের স্থায়িত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। মিটিং শেষে তাই নিয়মিত টেবিলটি নির্ধারিত উপায়ে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। এছাড়া টেবিলের সৌন্দর্য বাড়াতে টেবিলের মাঝ বরাবর ফুলদানি, শোপিস বা এ জাতীয় সৌন্দর্যবর্ধক উপাদান রাখতে পারেন।
কনফারেন্স টেবিল একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে কাজের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে। একসাথে বসে আলোচনার প্রেক্ষিতে যেকোনো জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য কনফারেন্স টেবিল অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে। এতে প্রতিষ্ঠানের সাফল্য যেমন বিকশিত হয় তেমনি একে অপরের মতামত শোনার মাধ্যমে ব্যক্তিগত জ্ঞানও সমৃদ্ধ হয়। তাই কনফারেন্স টেবিলের গুরুত্ব বিবেচনা করে সব বিষয়ে ভেবেচিন্তে কনফারেন্স টেবিল কিনতে মনোযোগী হওয়া উচিত। সেই ভাবনার সাথে মানানসই এবং পছন্দ বা রুচির সাথে মেলে এমন কনফারেন্স টেবিল নেওয়ার ক্ষেত্রে কোনোরকম ভাবনা ছাড়াই দেশীয় ব্রান্ড হাতিল ফার্ণিচার বেছে নিতে পারেন।
আরও দেখুনঃ হাতিলের ১০টি কনফারেন্স টেবিলের ডিজাইন