কাঠের বেঞ্চের দাম ও মডেল জানুনঃ আসবাবে বৈচিত্র্য নিয়ে আসুন
কাঠের বেঞ্চ ঘরের ভিতরে বা বাইরের ব্যবহার, স্কুল, অফিস, রেস্তোরাঁ এমনকি পার্কের জন্যও দারুণ উপযুক্ত আসবাব। শক্তিশালী কাঠের গঠনের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়িত্বের কারণে অনেকেই কাঠের বেঞ্চকে পছন্দ করেন। তবে কাঠের বেঞ্চের দাম নির্ভর করে কাঠের প্রকারভেদ, ডিজাইন, সাইজ এবং কারুকার্যের উপর।
বাজারে সেগুন, মেহগনি, গামারি বা অন্যান্য কাঠের বেঞ্চ পাওয়া যায়, যার দাম শুরু হয় কয়েক হাজার টাকা থেকে এবং কারুকাজ ও কাঠের মান অনুযায়ী তা অনেক বেশি হতে পারে। এই ব্লগে আমরা কাঠের বেঞ্চের দামের সাথে সাথে কীভাবে হাতিল থেকে সেরা মানের কাঠের বেঞ্চ বেছে নেওয়া যায়, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
কাঠের বেঞ্চ থাকার মূল উদ্দেশ্য কি?
আসবাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রয়োজনীয়তা। তবে কাঠের বেঞ্চের আলোচনা করতে গেলে আগে আপনাকে সৌন্দর্যের ব্যাপারটা আগে বলতে হবে। ঘর সাজানোর আধুনিক কলাকৌশলে সোফা, ডিভান ও বিন ব্যাগ বেশ অনেকটা অংশজুড়ে আছে। তবে বাড়িতে কাঠের বেঞ্চের ব্যবহার খুব বেশি দেখা যায় না আসলে।
বাড়ির সাজসজ্জায় ক্লাসিক ব্যাপারটা ধরে রাখতে কাঠের বেঞ্চের বিকল্প নেই বলা যায়। বসার ঘর কিংবা বেলকনি সব জায়গাতেই নজর কাড়বে কাঠের বেঞ্চ। এর বাইরেও যেকোনো ঘরেই খাপ খাইয়ে নেয় কাঠের বেঞ্চ।
আপনার বাড়ির ছোট সদস্যের পছন্দে গুরুত্ব দিয়ে কত কিছু করা হয়। আসবাব বাছাইতেও তাদের ব্যাপারটা মাথায় রাখতে হয়। বাড়ির সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যের পছন্দের ব্যাপারটাও ঠিক একইভাবে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তাদের পছন্দের আসবাবগুলোর মধ্যে একটি হলো কাঠের বেঞ্চ।
নিশ্চয়ই ভাবছেন খুব একটা আরামদায়ক নয় কাঠের বেঞ্চ? একসময় কাঠের বেঞ্চ বলতে শুধু কাঠ দিয়ে বানানো বেঞ্চ বোঝাত। তবে বর্তমানে বাজারে পাওয়া যায় নানা রকম আরামদায়ক কাঠের বেঞ্চ। কুশনের সঙ্গে ফেব্রিক জড়ানো দারুণ সব কাঠের বেঞ্চ বদলে দিয়েছে কাঠের বেঞ্চের পুরো নকশা।
হাতিলের কাঠের বেঞ্চ
আসবাবের দুনিয়ায় সেরা নকশা ও মজবুত কাঠের কথা ভাবলে হাতিলের নাম ওপরের দিকেই থাকে। কাঠের বেঞ্চ তৈরিতেও হাতিল বেশ রুচিশীল। ক্লাসিক নকশার আরামদায়ক দুটি কাঠের বেঞ্চ মিলবে হাতিলে। ‘বেগল-১৯৯’ ও ‘কেসারোল-২০০’ বেঞ্চ দুটি হাতিলের কাঠের বেঞ্চ। গল্পের জসিম সাহেব বেশ কনফিউজড বেঞ্চ দুটি নিয়ে। এই দুই কাঠের বেঞ্চ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে জসিম সাহেবের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদেরও কনফিউশন ঘুচবে।
বেগল-১৯৯
বেগল-১৯৯ : ১১৫০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৩০ মিলিমিটার প্রস্থের এই কাঠের বেঞ্চটির নকশা বেশ সাধারণ। এই বেঞ্চের অ্যান্টিক রং ও সাধারণ নকশা এটিকে বেশ রুচিশীল আসবাবের পর্যায়ে নিয়ে গেছে। ৪৫৫ মিলিমিটার উচ্চতার এই কাঠের বেঞ্চ বেশ অল্প জায়গাতেই নিজেকে সেট করে ফেলে। যার কারণে বেঁচে যায় ঘরের অনেকটা জায়গা। আমদানিকৃত ক্লিন ড্রাইড বিচ কাঠের তৈরি এই বেঞ্চ। উন্নতমানের হার্ডওয়্যার ব্যবহার করে হয়েছে বেঞ্চটিতে। এটাতে ব্যবহার করা কুশনটিও বেশ আরামদায়ক। ভিন্ন পাঁচটি রং ও নকশার ফেব্রিক থেকে বেছে নেওয়া যাবে পছন্দের রং ও নকশার ফেব্রিক। দশ কেজি ওজনের এই বেঞ্চ তুলনামূলক বেশ হালকা। ফেব্রিকের নকশাভেদে বেগল-১৯৯ কাঠের বেঞ্চটির মূল্য ১১৮০০ থেকে ১২৩২৫ টাকা।
কেসারোল-২০০
কেসারোল-২০০ : অ্যান্টিক রঙের এই বেঞ্চটি ‘বেগল-১৯৯’-এর মতো আমদানিকৃত ক্লিন ড্রাইড বিচ কাঠের তৈরি হলেও নকশার দিক থেকে একদমই ভিন্ন। বেশ স্টাইলিশ এই বেঞ্চটি আপনার বসার ঘরের চেহারাই পাল্টে দিতে পারে একদম। এই বেঞ্চটি ডাইনিং টেবিলের সঙ্গেও ব্যবহার করা যায়, চেয়ারের বিকল্প হিসেবে। আরামদায়ক ও মোটা কুশনে তৈরি এই বেঞ্চের ওজন ১৫ কেজি। হাতিলের সব পণ্যের মতো এটাতেও ব্যবহার করা হয়েছে উন্নতমানের হার্ডওয়্যার ফিটিংস। ১১৫০ মিলিমিটার দৈর্ঘ্য ও ৪৫০ মিলিমিটার প্রস্থের এই বেঞ্চটি উচ্চতায় ৪৫০ মিলিমিটার। পাঁচটি ভিন্ন রং ও নকশার ফেব্রিক বাছাই করার সুযোগ পাওয়া যাবে এই বেঞ্চ কেনার ক্ষেত্রে। ফেব্রিকের রং ও নকশা অনুযায়ী ১৫০৫০ থেকে ১৫৪৮৮ টাকায় পাওয়া যাবে কেসারোল-২০০ কাঠের বেঞ্চটি।
বেশ ভালো জানাশোনা হয়ে গেল হাতিলের কাঠের বেঞ্চ দুটি সম্পর্কে। জসিম সাহেবের মতো কনফিউশনে না থেকে হাতিল থেকে দ্রুত বেছে নিন আপনার পছন্দের কাঠের বেঞ্চটি।
কাঠের বেঞ্চের দাম কিভাবে ক্রেতার জন্য সুবিধাজনক হতে পারে?
আমাদের পাশের বাসার ষাটোর্ধ্ব জসিম সাহেবের কাছে দিনে সবচেয়ে সুন্দর সময় ভোরবেলা। তার সকাল শুরু হয়ে ভোর ৬টায়। ঘুম ভাঙতেই মুখ ধুয়ে প্রতিদিন সকালে হাঁটতে বেরিয়ে যান তিনি। হাঁটতে হাঁটতে চলে আসেন পার্কে। জসিম সাহেবের ভোরবেলা হাঁটার অভ্যাসটা বেশ অনেক দিনের। প্রায় দশ বছর। ডায়াবেটিস ধরা পড়ার পর থেকেই হাঁটাহাঁটি শুরু। প্রথম দিকে ভোরে উঠতে হাঁটতে যেতে কিছুটা বিরক্ত অবশ্য তার লাগত। তবে আস্তে আস্তে তৈরি হওয়া অভ্যাসের সঙ্গে পুরো ব্যাপারটা উপভোগ করতে শুরু করেন তিনি। প্রতিদিন পার্কে এসে তিনি জুটিয়েছেন তার বয়সী বেশ কিছু বন্ধু। তবে পার্কে জসিম সাহেবের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু কাঠের বেঞ্চগুলো।
বাড়িতে একসময় ছিল শুধু চেয়ার। সোফা এসে দখল করল বসার ঘরের চেয়ারের জায়গা। কিছুদিন পর এল নানা রঙের ডিভান। ইদানীং নাতিনাতনিরা ব্যবহার করে বিন ব্যাগ। তবে জসিম সাহেবের সব সময়ই প্রিয় কাঠের বেঞ্চগুলো। সুযোগ পেলে বিকেলেও হাঁটতে হাঁটতে পার্কে চলে আসেন জসিম সাহেব। বিকেলে অবশ্য পার্কে তিনি হাঁটেন কম, বেঞ্চে বসে সবুজ দেখেন বেশি। একসময় ঝিমানো চলে আসে তার। ইচ্ছে হয় বেঞ্চেই ঘুমিয়ে পড়তে। তবে পার্ক তো আর নিজের বাসা না, চাইলেই ঘুমিয়ে পড়লাম। সুযোগ হলে পার্কের বেঞ্চগুলো সঙ্গে করে বাড়িতে নিয়ে যেতেন জসিম সাহেব। তবে সেই উপায় তো নেই। তাই ঘুমচোখে সন্ধ্যাবেলা বাড়ির পথ ধরেন তিনি।
জসিম সাহেবের কাঠের বেঞ্চপ্রীতির ব্যাপারটা বেশ কিছুদিন ধরে টের পাচ্ছে ছোট মেয়ে নীলিমা। তাই ছুটির দিনে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে হাতিলের শোরুমে হাজির হলো নীলিমা। ‘উডেন বেঞ্চ’ সেকশনে বাড়ির জন্য কাঠের বেঞ্চ দেখে বেশ অবাক জসিম সাহেব। তিনি এখন ‘বেগল-১৯৯’ ও ‘কেসারোল-২০০’ বেঞ্চ দুটির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। মাথা চুলকে ভাবছেন, এত সুন্দর বেঞ্চ দুটির মধ্যে কোনটা ছেড়ে কোনটা তিনি কিনবেন।
কাঠের বেঞ্চকে কোন কোন পদ্ধতিতে বাসায় ব্যবহার করা যায়?
কাঠের বেঞ্চ শুধু বসার জন্যই নয়, বরং এটি ঘরের বিভিন্ন স্থানে কার্যকরী ও নান্দনিকভাবে ব্যবহার করা যায়। নিচে কিছু চমৎকার উপায় দেওয়া হলো—
১. ডাইনিং বেঞ্চ হিসেবেঃ ডাইনিং টেবিলের চেয়ারের বদলে কাঠের বেঞ্চ ব্যবহার করলে এটি স্থান সাশ্রয়ী হয় এবং একসঙ্গে বেশি লোক বসতে পারে। এটি রাস্টিক বা মিনিমালিস্ট ইন্টেরিয়রের জন্য দারুণ মানানসই।
২. লিভিং রুমের অতিরিক্ত সিটিং ব্যবস্থাঃ সোফার পাশাপাশি কাঠের বেঞ্চ রাখতে পারেন, যা অতিথিদের জন্য বাড়তি বসার ব্যবস্থা তৈরি করবে। কুশন বা প্যাড যোগ করলে বেঞ্চ আরও আরামদায়ক হবে।
৩. প্রবেশপথ বা ফয়ার বেঞ্চঃ বাড়ির প্রবেশপথে বা ফয়ার এলাকায় কাঠের বেঞ্চ রাখলে জুতা পরা ও খোলার জন্য এটি বেশ উপকারী। নিচে সংরক্ষণের জন্য শেলফ বা ড্রয়ার থাকলে আরও ভালো হয়।
৪. বেডরুমে স্টোরেজ বেঞ্চঃ বিছানার পায়ের দিকে কাঠের বেঞ্চ রেখে সেখানে কুশন, কম্বল বা প্রয়োজনীয় জিনিস রাখতে পারেন। স্টোরেজ সুবিধাযুক্ত বেঞ্চ হলে তা আরও কার্যকরী হবে।
৫. বারান্দা বা গার্ডেন বেঞ্চঃ বারান্দা বা বাগানের জন্য কাঠের বেঞ্চ দারুণ মানানসই। এতে বসে বিকেলের সুন্দর প্রকৃতি উপভোগ করা যায় এবং ফুলের টব বা অন্যান্য সজ্জা যুক্ত করে পরিবেশ আরও সুন্দর করা যায়।
৬. স্টাডি রুম বা ওয়ার্কস্পেসেঃ ডেস্কের পাশে কাঠের বেঞ্চ ব্যবহার করলে কম জায়গায় বসার ব্যবস্থা করা যায়। এটি ছোট স্পেসের জন্য আদর্শ হতে পারে।
৭. বাচ্চাদের খেলার ঘরেঃ বাচ্চাদের পড়াশোনা বা খেলার জন্য কাঠের বেঞ্চ ব্যবহার করা যায়। এটি সহজে পরিষ্কার করা যায় এবং শিশুদের জন্য নিরাপদও হতে পারে।
৮. মাল্টিপারপাস স্টোরেজ ইউনিটঃ বেঞ্চের নিচে স্টোরেজ ব্যবস্থা থাকলে এটি জুতা, খেলনা, বই বা অন্যান্য ছোটখাটো জিনিস রাখার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাধারণত আমাদের দেশে যেকোনো সময় উৎসব ও উদযাপনের জন্য বাসায় অতিথির সমাগম হতে পারে। এসময় একটা কাঠের বেঞ্চ বেশ ভালভাবে ডাইনিং ও সময় কাটানোর স্পেস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
পরিশেষ
হাতিলের কাঠের বেঞ্চ গুণগত মান, আধুনিক ডিজাইন ও টেকসই কাঠামোর জন্য বাজারে বেশ জনপ্রিয়। সেগুন, মেহগনি বা উন্নতমানের প্রকৌশল কাঠ দিয়ে তৈরি এই বেঞ্চগুলো ঘর বা অফিসের জন্য নিখুঁত সমাধান হতে পারে।
দামের দিক থেকে হাতিল বিভিন্ন বাজেটের ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে লাক্সারিয়াস বেঞ্চের রেঞ্জ অফার করে, যা ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০,০০০ টাকার বেশি হতে পারে, নির্ভর করে ডিজাইন ও কাঠের মানের ওপর।
আপনি যদি দীর্ঘস্থায়ী ও স্টাইলিশ কাঠের বেঞ্চ খুঁজছেন, তবে হাতিলের সংগ্রহ এক নজর দেখে নেওয়া অবশ্যই উপকারী হবে। সঠিক পছন্দ করতে হলে আপনার প্রয়োজন, বাজেট ও স্থান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিন এবং ব্র্যান্ডের অফার ও ডিসকাউন্ট সম্পর্কে খোঁজ রাখুন।
কাঠের বেঞ্চের দাম ও উপকরণ নিয়ে সাধারণ প্রশ্নোত্তর
কাঠের বেঞ্চের দাম কীভাবে নির্ধারিত হয়?
কাঠের বেঞ্চের দাম নির্ভর করে কাঠের ধরন, ডিজাইন, আকার, কাঠের মান, কারুকাজ এবং ব্র্যান্ডের ওপর। সাধারণত সেগুন ও মেহগনি কাঠের বেঞ্চের দাম বেশি হয়, কারণ এগুলো বেশি টেকসই ও নান্দনিক। একারণে সকল লাক্সারিয়াস ফার্নিচার নির্মাতা সেগুন কাঠকেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
কাঠের বেঞ্চ কেনার সময় কী কী বিষয় বিবেচনা করা উচিত?
কাঠের মান, ফিনিশিং, ডিজাইন, ওয়ারেন্টি, মূল্য এবং ব্র্যান্ডের খ্যাতি বিবেচনা করা উচিত। এছাড়া, বেঞ্চ ইনডোর ও আউটডোরের মধ্যে কোথায় ব্যবহার করা হবে সেটিও মাথায় রাখা জরুরি। কারণ ভিন্ন স্থানে ব্যবহার করার জন্য বানানো বেঞ্চ গুলো ভিন্ন হয়, সাথে আবহাওয়া মোকাবেলা করতে ভিন্নভাবে কোটিং করা থাকে।