‘ইন্টেরিয়র ডিজাইন’ শব্দটা শুনতে বেশ ভারী মনে হলেও এই ব্যাপারটা জড়িয়ে আছে আমাদের জীবনের সাথেই। বাংলায় একে বলে ‘অন্দরসজ্জা’। এটি একই সাথে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, রুচি ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। আমরা সবাই নিজেদের বাড়ি কিংবা অফিস সুন্দর করে সাজাতে অনেক ধরনের পন্থাই অবলম্বন করি। বর্তমানে এই কাজের জন্য অনেকেই পেশাদার অভিজ্ঞ কোনো লোককে ভাড়া করে থাকে। আবার অনেকে নিজের মতো করেই সাজিয়ে তোলেন নিজেদের জায়গাটা। কিন্তু আপনি যদি এই কাজে অভিজ্ঞ না হন তাহলে ছোট-বড় বিভিন্ন ভুল হয়ে যেতে পারে। তাই আসুন জেনে নিই ইন্টেরিওর ডিজাইনের ৫টি সাধারণ ভুল যা আমরা সচরাচর করে থাকি ও তা সংশোধন করার উপায়।
পরিকল্পনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত
অন্দরসজ্জার বড় ভুল হলো আগে থেকে পরিকল্পনা না করা। কোনো জায়গার অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে ওই দেশের ভৌগোলিক অবস্থা বড় ভূমিকা পালন করে। শীতপ্রধান দেশের অন্দরসজ্জার চেয়ে গ্রীষ্মপ্রধান দেশের অন্দরসজ্জা হয় বেশ ভিন্ন। বাংলাদেশ গ্রীষ্মপ্রধান দেশ হলেও আমরা বেশির ভাগ সময়ই শীতপ্রধান দেশের অন্দরসজ্জার মতো করার চেষ্টা করি। অনেক আবার আগে থেকে বাজেট নির্ধারণ করি না। এভাবে কাজ শুরু করে ফেললে পরে প্রয়োজনের অধিক খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় পরিকল্পনা ছাড়া কাজে নেমে পড়লে বিরূপ প্রভাব পড়ে পরিবেশের ওপরও। তাই অন্দরসজ্জার কাজ শুরু করার আগে বাজেট হিসাব-নিকাশ, মাপজোকসহ সব পরিকল্পনা আগেই করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এসব ব্যাপারে অভিজ্ঞ ব্যক্তির পরামর্শ নিতে হবে।
ভুল মাপের আসবাব
অন্দরসাজের ক্ষেত্রে সঠিক আসবাব বাছাই না করে ভুল করি আমরা অনেকেই। বাড়ি, অফিস কিংবা অন্যান্য জায়গার আসবাব কেনার সময় দেখা যায় জায়গার মাপ ছাড়াই কিনে ফেলি অনেকে। এতে ঘরের অনুপাতে আসবাবের মাপ সঠিক হয় না। হয়তো দোকানে গিয়ে একটি খাট পছন্দ হলো, কিনে ফেললেন। কিন্তু বাড়ি এনে দেখেন শোবার ঘরে একটুর জন্য খাটটা জায়গা হচ্ছে না। কিংবা অফিসের বড় লাউঞ্জটাতে যে রকম সোফা দরকার, আপনার কেনা সোফাটি সেই অনুযায়ী বেশ ছোট। এতে অফিসের অন্যান্য ঝকঝকের সাজের সাথে কোনোভাবেই এই সোফাটি মানানসই লাগছে না। এ ধরনের পরিস্থিতি এড়াতে আগেই ঘরের মাপ নিন। দরজা ও জানালার উচ্চতা মেপে সেই অনুপাতের আসবাব কিনুন। পুরোনো আসবাব নতুন বাসায় জায়গা না হলে কিংবা বেমানান লাগলে সুযোগ থাকলে বদলে ফেলুন। নাহয় কাঠমিস্ত্রির সহায়তায় পুরোনো আসবাবকে দিতে পারেন নতুন রূপ।
আগেই দেয়াল রং করা
অফিস কিংবা বাড়ি, সব অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে আমরা এই ভুলটি সবচেয়ে বেশি করি। অনেকেই সবার প্রথমে দেয়াল রং করার কাজটা সেরে ফেলি। ভাবি এতে ঝামেলা কম হবে। আদতে হয় উল্টো। দেয়ালে এক ধরনের রং করে পরে যখন ঘরের আসবাব কিংবা অন্যান্য সাজসজ্জার সামগ্রী কিনতে হয় তখন বাধে বিপত্তি। কারণ দেয়ালের রঙের সাথে মানানসই আসবাব ও অন্যান্য উপকরণ খুঁজে পাওয়াটা মুশকিল হয়ে পড়ে। তাই আগেই দেয়ালটা রং না করে আগে নিজের পছন্দমতো আসবাব ও ঘর সাজানোর সামগ্রী কিনে ফেলতে হবে। পরে সেগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেয়ালের রং বাছাইয়ের অনেক বিকল্প পাওয়া যাবে।
ভুল আলোকসজ্জা
অন্দরসজ্জায় পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না রেখে ভুল করে থাকি আমরা অনেকেই। সঠিক আলোকব্যবস্থা ঘরের সাজ অনেকাংশেই পাল্টে দেয়। সে ক্ষেত্রে, ঘরে কম আলোর ব্যবস্থা যেমন ঘরকে অন্ধকার, গুমোট একধরনের পরিবেশ দেয় তেমনি অধিক আলোকসজ্জাও ঘরের নান্দনিকতা নষ্ট করে ফেলে। অনেকে ঘরের আলোকসজ্জার জন্য হরেক রকম দামি ঝলমলে বাতি ব্যবহার করে থাকে। অনেকে সব ঘরেই একই ধরনের আলো ব্যবহার করে। সেগুলো আদতে ঘরের শোভা বৃদ্ধির বদলে ঘরের গ্রহণযোগ্যতা কমিয়ে ফেলে। তাই, স্থান বুঝে উপযুক্ত আলোকসজ্জা করতে হবে। শোবার ঘরে রিসেসড লাইটের পাশাপাশি ল্যাম্পশেড ব্যবহার করা যেতে পারে। বসার ঘরে থাকতে পারে ঝলমলে ঝাড়বাতি বা একক ঝুলবাতি। রান্নাঘরে অপর্যাপ্ত আলো থাকলে কাজে অসুবিধা হবে। তাই সেখানে একাধিক আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। অফিসের ক্ষেত্রে সব সময় উজ্জ্বল বাতি ব্যবহার করা উচিত।
সময়ের সাথে না চলা
অন্দরসজ্জার ক্ষেত্রে সময়ের সাথে চলাটা খুবই জরুরি। কিন্তু এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখি না অনেকেই। একসময় ভারী নকশার কাঠের আসবাবের খুব চল ছিল। খাটের হেডবোর্ড হোক অথবা সোফার হাতল, সব আসবাবেই দেখা যেত ঘন নকশা। বর্তমানে হালকা নকশার সাদামাটা আসবাবের ব্যবহার বেশি। আগে কাঠের আসবাব সব প্রায় একই রঙের হলেও এখন আসবাব পাওয়া যায় বিভিন্ন রঙের। এ রকম আসবাবের পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে আলোকসজ্জাসহ অন্যান্য জিনিসেও। পরিবর্তন এসেছে অফিসের আসবাব ও সাজসজ্জায়ও। কিন্তু অনেকে এখনো ঘর সাজানোর সময় সেই পুরোনো খেয়ালে ঘর সাজানোর পরিকল্পনা করে ফেলে। এতে রকমারি জিনিস দিয়ে সাজালেও ঘরকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় দেখায় না। অনেকে আবার পুরোনো ও আধুনিকের মিশেলে অন্দরসজ্জার জগাখিচুড়ি বানিয়ে ফেলে। মনের মতো সাজাতে গিয়ে এমন পরিস্থিতিতে যেন পড়তে না হয় তাই আগে থেকেই নিজের রুচির সাথে মিল রেখে কোন ধরনের সাজে ঘরকে সুন্দর দেখাবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করতে হবে।
অন্দরসাজ বা ইন্টেরিয়র ডিজাইন শুধু সৌন্দর্যের জন্যই নয়, প্রয়োজন নিজের আরামের জন্যও। অন্দরসাজের এই ভুলগুলো আপনিও কখনো করেছেন কি না কিংবা আর কী ধরনের ভুল আমরা করে থাকি সেগুলো জানাতে পারেন কমেন্টে।