সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে মানুষ হয়ে উঠেছে আরো আধুনিক। আধুনিকতার এ ছোঁয়া যেমন লেগেছে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে, তেমনি লেগেছে দৈনন্দিন জীবনযাপনের গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ ফার্নিচারে। তাই পছন্দ, প্রয়োজন আর নান্দনিকতা, সব দিক থেকে বিবেচনা করেই আধুনিক এ সময়ে, পরিবর্তন এসেছে ফার্নিচারের ধরনে, পরিবর্তন এসেছে এর ব্যবহারে। আর এ কারণেই বর্তমান সময়ে ট্রেন্ডি ফার্নিচার হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্মার্টফিট ফার্নিচার। স্মার্টফিট ফার্নিচার হচ্ছে ফার্নিচারের এমন একটি ধরন, যেখানে একসঙ্গে একের অধিক আসবাব থাকে এবং তা বহুমাত্রিকভাবে ব্যবহার করা যায়। এগুলো খুব সহজেই যেমন ভাঁজ করে রাখা যায়, আবার ব্যবহারের সময় অনায়াসেই ভাঁজ খুলে নিয়ে, প্রয়োজনমতো ব্যবহার করা যায়। ঘরের খুব অল্প জায়গা নিয়ে এই ফার্নিচারগুলো সাজানো যায় বলে ছোট অ্যাপার্টমেন্টগুলোতে এর রয়েছে বাড়তি চাহিদা। দেখতেও ভীষণ স্লিম এবং আকর্ষণীয়। আর এসব কারণেই, যুগ যুগ ধরে চলে আসা সাধারণ খাট, ড্রেসিং টেবিল, কিংবা ডাইনিং টেবিলের বদলে, আধুনিক সময়ে জায়গা করে নিয়েছে ট্রেন্ডি এই আসবাবগুলো।
স্মার্টফিট ফার্নিচার মানেই আধুনিক আর অর্গানাইজড
এক যুগ আগেও এ ধরনের ফার্নিচার বাংলাদেশের মানুষের জন্য ছিল অপরিচিত এক অধ্যায়। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে অসংখ্য মানুষ তাদের পছন্দের তালিকার প্রথমেই রেখেছেন ফার্নিচারের নতুন এই ট্রেন্ডটিকে। আর রাখবেন নাই-বা কেন? শহুরে জীবনে চারদেয়ালের ঘরটা কতটুকু বড় হবে, কত স্কয়ার ফিটে বন্দী হবে যাপিত জীবনের পরিসীমা, তা সবটাই মেপে নিতে হয় আয় কিংবা অর্থের জোগানের ওপর ভিত্তি করে। ব্যস্ততম জীবনে, সময়কে দিন কিংবা ঘণ্টায় নয়, মাপতে হয় সেকেন্ডের কাঁটার হিসেবে। আর এ কারণেই, প্রয়োজন পড়ে এমন ফার্নিচারের যা একাধিক কাজের সুবিধা দেবে, একই সাথে হবে আধুনিক আর অর্গানাইজড। আর ঠিক এই কাজটিই করে হাতিলের স্মার্টফিট ফার্নিচার। এটি একদিকে যেমন স্পেস বাঁচায়, অন্যদিকে ঘরের ইন্টেরিয়রেও যোগ করে বাড়তি মাত্রা। এ সময়ের ফার্নিচার ট্রেন্ডে স্মার্টফিট ফার্নিচার কেন এত জনপ্রিয়, কীভাবে তা আপনার ঘরের ছোট একটি স্পেসকে বহুলভাবে ব্যবহার উপযোগী করে তোলে, তার আদ্যোপান্ত জানাব আজকের লেখায়।
যেমন হবে লিভিং রুমের ফার্নিচার
ভাবুন তো, আপনার বাসার বেডরুমগুলো পরিবারের নির্ধারিত সদস্যদের জন্য বরাদ্দ। তাই বাসায় যখন অতিথি আসে তখন থাকার জায়গা নিয়ে পড়তে হয় মহা বিপাকে। অথচ বাড়তি বিছানা রাখারও কোনো স্পেস নেই। কেমন হয় যদি লিভিংরুমের সোফাটাই আপনার বিছানার প্রয়োজন মেটাতে পারে? ঠিক এমন চিন্তা থেকেই তৈরি হয়েছে, হাতিলের জুভেনাইল-১৯৮-এর মতো সোফা কাম বেড ফার্নিচারগুলো । যা দেখতে একদম সোফার মতো। কিন্তু সোফার ভাঁজ খুলে দিলেই হয়ে যাচ্ছে বিছানা। এটি কিন্তু নবদম্পতিদের জন্যও ভীষণ মানানসই ফার্নিচার। সংসারজীবনের একদম শুরুতে, চাইলেই অনেক টাকা দিয়ে বড় বাসা নেওয়া যায় না, আবার একসাথে অনেক ফার্নিচার কেনারও সুযোগ থাকে না। এ ক্ষেত্রে একটি ফার্নিচার দিয়েই যখন দুটি ফার্নিচারের প্রয়োজন মেটানো যায়, তখন নিঃসন্দেহে তা নবদম্পতির নতুন সংসারকে স্বল্প খরচে গুছিয়ে নেওয়ার চমৎকার উপায় হয়ে দাঁড়ায়।
লিভিংরুমের সোফার ভাঁজেই লুকিয়ে থাকবে বেড
তবে লিভিংরুমের জন্য প্রয়োজন বুঝে ঠিক স্লিমফিট ফার্নিচারটি বাছাইয়ের জন্যও রয়েছে দারুণ কিছু উপায়। যেমন ধরুন, আপনার লিভিং স্পেসটিতে, সোফার সামনে সেন্ট্রাল টেবিল রাখার পর, চলাচলের জন্যই পর্যাপ্ত জায়গা থাকে না। কিন্তু অতিথি আপ্যায়নে কিংবা বিকেলবেলায় সোফায় বসে চায়ে চুমুক দিয়ে চায়ের কাপটি রাখার জন্যও একটি দৃষ্টিনন্দন সেন্ট্রাল টেবিল খুব জরুরি। আর এ সমস্যার সমাধান করতেই বেছে নিতে পারেন হাতিলের সোফা মেলন- ২৬০ ফার্নিচারটি। এই ফার্নিচারটি আপাতদৃষ্টে কেবল সোফা মনে হলেও নিচ থেকে টান দিলেই বেরিয়ে আসবে সোফার সাথে মানানসই চমৎকার একটি সেন্ট্রাল টেবিল। বর্তমানে লিভিংরুমের ফার্নিচার হিসেবে অনেকেই বেছে নেন চার সিটের সোফাকেই দুই সিটের সোফার মাঝে গুছিয়ে রাখা যাবে, কিংবা সোফার মাঝেই এক্সট্রা ড্রয়ার পাওয়া যাবে, এমন সব ফার্নিচার। আপনার কোন সুবিধাটি প্রয়োজন, সেটি বুঝে স্মার্টলুকের এই ফার্নিচারগুলো বেছে নিতে পারলেই লিভিংরুমে থাকবে আধুনিকতার ছাপ। সেই সাথে মিটবে একের ভেতর অনেক প্রয়োজন।
ডাইনিং স্পেসে ট্রেন্ডি ফার্নিচার
একটা সময় ছিল, যখন ডাইনিং টেবিল মানেই ছিল ৮ সিটের চার কোনা আকৃতির বড় টেবিল। ডাইনিংয়ের জন্য কেবিনেট মানেই তখন দেয়ালজুড়ে বিশাল কেবিনেট। তবে সময় বদলেছে, সেই সাথে বদলেছে মানুষের পছন্দ ও প্রয়োজন। বর্তমানের অধিকাংশ অ্যাপার্টমেন্টেই জায়গার স্বল্পতার কারণে আলাদা করে ডাইনিং স্পেস থাকে না, থাকে ডাইনিং কাম লিভিং স্পেস। আর যদিও বা ফ্ল্যাটে আলাদা ডাইনিং স্পেস থাকে, ১টি ৬ সিটের টেবিল বসানোর পরে সেখানে কেবিনেট, ফ্রিজ বা অন্যান্য আসবাব রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যায় না। এসব সমস্যার সমাধান হিসেবে ডাইনিং স্পেসের ক্ষেত্রেও নতুন ট্রেন্ড নিয়ে এসেছে স্মার্টফিট ফার্নিচার। এ ধরনের ফার্নিচারগুলোতে ৪ সিটের ডাইনিং টেবিলের সাথেই সংযুক্ত থাকে কেবিনেট। ফলে কেবিনেটের জন্য বাড়তি স্পেসের দরকার হয় না। আপনি চাইলে বুকশেলফ হিসেবেও এই কেবিনেটকে কাজে লাগাতে পারেন। অনেক সময় ডাইনিং টেবিলের নিচের অংশতেই শেলফ করা থাকে যেখানে ডিনারসেটসহ ডাইনিংয়ের নানা জিনিসপত্র সাজিয়ে রাখা যায়, স্পেস বাঁচিয়েই। স্লিমফিট বলেই এগুলো দেখতে যেমন মডার্ন তেমনি ছোট ঘরকে বড় দেখাতেও ভীষণ কার্যকর।
এ সময়ের বেডরুম ফার্নিচার
বেডরুম ফার্নিচার কেমন হবে, তা নির্বাচন করতে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হচ্ছে এর আয়তন । বিশেষ করে ছোট পরিসরের বেডরুমের জন্য ফার্নিচার বাছাই বেশ চ্যালেঞ্জিং। কারণ, ছোট বেডরুমে চাইলেই বেড, সোফা, ড্রেসিং টেবিল ও ওয়ার্ডরোবসহ সব বেডরুম ফার্নিচার আঁটানো সম্ভব হয় না। আবার বহু কষ্টে সব ফার্নিচার রাখা গেলেও ঘরের খোলামেলা ভাবটি কিন্তু তখন আর আগের মতো থাকে না। এ ক্ষেত্রে বেডরুমের স্পেস বাঁচাতে এবং বেডরুমে পরিপাটি ভাব ফুটিয়ে তুলতে, আস্থা রাখা যায় মাল্টিপারপাস ও স্পেস সেভিং আসবাবগুলোতে।
কিন্তু ফার্নিচারের এই চাহিদাগুলো একেক পরিবারের জন্য একেক রকম। অনেকের প্রয়োজন এমন একটি ফার্নিচার যেখানে আলমারির মাঝেই থাকবে ড্রেসিং টেবিল, অনেকেই আবার চান বেডের মাঝেই কেবিনেটের মতো স্পেস রয়েছে এমন একটি ফার্নিচার। এমন অসংখ্য পরিবারের আলাদা আলাদা প্রয়োজন বুঝে হাতিলও নিয়ে এসেছে বেডরুমের জন্য বিভিন্ন রকম স্মার্টফিট ফার্নিচার। তাই আপনার ঘরকে মাল্টিফাংশনাল করার জন্য চাহিদানুযায়ী বেছে নিতে পারেন যেকোনোটি। এতে অল্প জায়গার মধ্যেও আরামদায়কভাবে বসবাস করা যায় এবং ঘরের মাঝেও একটি খোলামেলা পরিসর বজায় থাকে। একের ভেতর দুই
স্মার্টফিট ফার্নিচারের এই ট্রেন্ডটি নতুন হলেও জনপ্রিয়তায় সব থেকে এগিয়ে। কেবল বেড, ডাইনিং কিংবা লিভিং স্পেসই নয়, কিচেন থেকে শুরু করে কিডস রুমের জন্যও রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সব স্মার্টফিট ফার্নিচার।
ঘরের মাঝে জায়গার স্বল্পতা, আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও আরো নানা সংকটের সহজ সমাধান হিসেবেই জন্ম নিয়েছে স্লিমফিট ফার্নিচার। তবে পিছিয়ে নেই আধুনিকতা কিংবা নান্দনিকতার বিচারেও। লেকার ও বার্নিশসহ বিভিন্ন রঙে, বৈচিত্র্যময় ডিজাইনে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফার্নিচারের এই নতুন ট্রেন্ডটি। তাই থাকার জায়গাটুকুকে পরিপাটি ও রুচিশীলভাবে সাজাতে, নিশ্চিন্তে নজর বুলিয়ে নিতে পারেন স্মার্টফিট ফার্নিচারে। আর এসব ফার্নিচারের মধ্য থেকে আপনার ঘরের জন্য কোনটি বেছে নিচ্ছেন, জানাতে ভুলবেন না কমেন্ট সেকশনে!