নাবিলার পারিবারিক বাসার বেশির ভাগ আসবাবপত্র প্রায় ২০-২৫ বছর আগে ওর মায়ের বিয়ের সময় কেনা। এখন পর্যন্ত সেসব যে শুধু “পারফেক্ট” অবস্থায় আছে, তা কিন্তু নয়, প্রতিটি আসবাব দেখতেও এখনো একদম নতুনের মতো। চাকরির কারণে নাবিলাকে যখন আলাদা বাসা নিতে হলো, তখন সেই বাসার জন্য আলাদা করে আসবাবপত্র কিনতে গিয়ে মনে হলো এগুলো সংরক্ষণের জন্য তার বাবা-মায়ের কাছ থেকে কিছু পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত। না হলে তার যে স্বভাব, ঠিকমতো যত্ন তো নিতে পারবেই না, উল্টো অল্প কিছুদিনের মাঝেই এই আসবাবপত্রগুলোর কোনো ধরনের ক্ষতি হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল।
শুধু নাবিলা নয়, আমরা যারা এই প্রজন্মের মানুষ এবং নতুন নতুন adulting তথা নিজেদের দায়িত্ব নেওয়া শিখছি, আমাদের সবারই কিন্তু এই পরামর্শগুলো প্রয়োজন। চলুন, তাহলে দেখে নেওয়া যাক নাবিলার বাবা-মা ওকে আসবাবপত্রের আয়ু বাড়ানোর জন্য কী কী পরামর্শ দিয়েছিলেন।
নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
যেকোনো আসবাবপত্রের যত্ন নেওয়ার প্রথম ধাপ হলো তা পরিষ্কার রাখা। সেটা শুধু বড় কিংবা ভারী আসবাব হতে হবে, এমন না। ছোট থেকে ছোট আসবাবপত্রও নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত। ঢাকা শহরে এমনিতেই অনেক ধুলাবালি। একটু দরজা-জানালা খুলে রাখলেই সবকিছুর ওপর যেন এক স্তর ধুলা পড়ে যায়। তাই প্রতিদিন সম্ভব না হলেও সপ্তাহে একদিন কিংবা দুই দিন নিয়ম করে প্রথমে শুকনো এরপর হালকা ভেজা কাপড় দিয়ে আসবাবপত্র মুছে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ভেজা কাপড়টি যেন ভালোমতো নিংড়ানো থাকে এবং আসবাবপত্রে যেন কোনো রকম পানি জমে না যায়। আর যদি কখনো আসবাবপত্রের ওপর খাবার কিংবা তরল কোনো পদার্থ পড়ে যায়, তবে সাথে সাথে তা পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনোভাবেই আসবাবপত্রে দাগ না পড়ে যায়।
আসবাবপত্রের অনধিগম্য কোনাগুলোয় অনেক সময় ধুলাময়লা জমে থাকে। যেগুলো অনেক সময়ই আমাদের পরিষ্কার করার কথা মনে থাকে না। কিন্তু এগুলো আবার অনেক দিন ধরে জমতে থাকলে আসবাবপত্রের ক্ষতি হতে পারে। তাই এসব কোনা খুব ভালো করে পরিষ্কার করতে হবে। ভ্যাকুয়াম ক্লিনার এই জায়গাগুলো পরিষ্কার করার জন্য বেশ ভালো কাজ করে।
কেমিক্যাল ক্লিনার দিয়ে আসবাবপত্র পরিষ্কার করার আগে গায়ের লেবেলে উল্লেখ করা উপাদানগুলো দেখে নিতে হবে। এবং যদি খুব কড়া ধরনের উপাদান থাকে, তবে তা দিয়ে আসবাবপত্র পরিষ্কার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, এতে আসবাবপত্রের রং এবং বার্নিশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
ছবি : আসবাবপত্র নিয়মিত পরিষ্কার কাপড় দিয়ে মুছে রাখতে হবে
প্রাকৃতিক আলো-বাতাস
প্রাকৃতিক আলো-বাতাস আসবাবপত্রের জন্য যেমন ভালো, তেমনি অতিরিক্ত সূর্যের আলো আসবাবপত্রের জন্য ক্ষতিকারক; বিশেষ করে কাঠের আসবাবপত্রের জন্য। তাই ঘরে প্রতিদিন ঘর এবং বারান্দার দরজা-জানালা খুলে দিয়ে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস আসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আর সেই সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন সূর্যের আলো সরাসরি আসবাবপত্রে অনেকক্ষণ সময় ধরে না পড়ে। এতে আসবাবপত্রের রং এবং ওপরের বার্নিশ দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে দিনের বেলার একটা বড় অংশ ঘরের পর্দা টেনে রাখা যেতে পারে।
ধারণক্ষমতার বাইরে জিনিসপত্র রাখা যাবে না
অনেক সময় আমরা বুকশেলফ, শোকেস, ক্লজেটের মতো আসবাবপত্রে ধারণক্ষমতার বাইরে জিনিস দিয়ে বোঝাই করে রাখি। এতে আসবাবপত্র দুর্বল হয়ে যায়। এমনকি অনেক সময় ভেঙে যেতে পারে। যেমন অনেকে শোকেস এমনভাবে কাচের আসবাবপত্র, শোপিস দিয়ে বোঝাই করে রাখলেন যে একদিন হুট করে শোকেসের তাক ভেঙে পড়ে গেল। তাতে আসবাবপত্রের যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি তাতে রাখা জিনিসপত্রও ভেঙে বড়সড় একটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তাই এই ধরনের আসবাবপত্রে সব সময় ধারণক্ষমতা অনুযায়ী আসবাব রাখতে হবে।
ছবি : তৈজসপত্র রাখতে হবে আসবাবের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী
দ্রুত আসবাবপত্র মেরামত করা
অনেক সময় আসবাবপত্র ভেঙে যাওয়া, ভিজে ফুলে ওঠা, পেরেক বের হয়ে যাওয়া, রং উঠে যাওয়া, ঘুণে ধরা౼এমন আরও অনেক ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কোনো কারণে আসবাবপত্রের ক্ষতি হলে যত দ্রুত সম্ভব তার মেরামতের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে ক্ষতির সাথে সাথে বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। স্টিল কিংবা লোহার আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যথা পাওয়ার মতো কোনো ধারালো কোণ বের না হয়ে থাকে। কাচের আসবাবপত্র ভেঙে গেলে দ্রুত কাচ বদলাতে হবে। না হলে হাত-পা কেটে যাওয়ার মতো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেক দোকানেই আসবাবপত্রের কোণ ক্ষতি হলে তা মেরামত করে নেওয়ার সুবিধা থাকে। সে ক্ষেত্রে পেশাদার মানুষের সাহায্য নিতে হবে।
ছবি : নিয়মিত যত্নে আসবাবপত্র ভালো থাকে
বিবিধ
হাতিলসহ অনেক দোকানেই আসবাবপত্রের সাথে সেগুলোর ব্যবহারবিধি দিয়ে দেওয়া থাকে। এগুলো একটু ভালো করে পড়ে দেখতে হবে। এবং যেই ধরনের আসবাবপত্রের জন্য যেই ধরনের পরিষ্কারবিধি দেওয়া থাকবে, সেগুলো অনুসরণ করতে হবে। যেমন গদিওয়ালা আসবাবপত্রপত্রের গদি এবং গদির কভার অনেক সময় হাতে ধোয়া যায়, আবার অনেক সময় ড্রাই ওয়াশের নির্দেশ থাকে। এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে। কাঠের আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে বছরে কিংবা দুই বছরে একবার রং ও বার্নিশ করতে হবে। স্টিল কিংবা লোহার আসবাবপত্রের ক্ষেত্রে কিছু বছর পরপর রং করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পানির কারণে যেন জং না ধরে যায়। যেকোনো ধরনের আসবাবের ওপর সরাসরি খুব গরম কিংবা খুব ঠাণ্ডা কিছু না রেখে টেবিল ম্যাটজাতীয় কিছুর ওপর রাখা শ্রেয়। এগুলো বিভিন্ন আকারের এবং উপাদানের তৈরি পাওয়া যায়। এ ছাড়া বর্ষাসহ বিশেষ কিছু ঋতুতে আসবাবপত্রের যত্ন নেওয়ার বিশেষ কিছু উপায় রয়েছে। এগুলো মাথায় রাখলে ভালো।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের আসবাবপত্র সচরাচর কেনা হয় না। আর নিয়মিত যত্নে আসবাবপত্র দীর্ঘদিন টেকসই হয়। সেই সাথে ঘরের শোভাবর্ধন করে। আপনারা যদি আসবাবপত্রের যত্ন নেওয়ার বিশেষ কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেন, তাহলে কমেন্টে আমাদের তা অবশ্যই জানাবেন। আর হ্যাঁ, আসবাবপত্রবিষয়ক যেকোনো প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন হাতিলের সাথে। কারণ আসবাবপত্রের ভালো-মন্দ হাতিল ছাড়া আর কে বোঝে?