কাঠের ডাইনিং চেয়ার ডিজাইন নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। আমাদের ধারণা হয়তো ডাইনিংয়ের চেয়ারগুলো কোনো একটা সাদামাটা হলেই হলো, তবে এই ছোট্ট বিষয়টি আপনার ব্যক্তিত্বে তুমুল ঝড় তুলে দিতে পারে। বিশেষ করে ফ্ল্যাট বাসার জন্য ডাইনিং রুমের ফার্নিচার বেশ সেন্সিটিভ জিনিস! কারণ এখানেই বসে পরিবারের সবাই খাবার খায় ও গল্প করে।
কিন্তু স্বস্তি ও ফাংশনালিটির দিক থেকে সব চেয়ার টেবিলের বৈশিষ্ট্য একইরকম হয় না। ভুল চেয়ার কিনলে অল্প ব্যবহারেই দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। আপনি যেন এসব ঝামেলায় না পড়েন, তাই আজকের পোস্টে আমরা জানাবো আধুনিক কাঠের চেয়ারের ডিজাইন কেমন হতে হবে এবং সঠিক চেয়ার নির্বাচনের কি কি পদ্ধতি রয়েছে।
আধুনিক কাঠের ডাইনিং চেয়ার ডিজাইন কেমন হওয়া চাই?
এরপর ডাইনিং চেয়ার গুলোর ডিজাইন টেবিলের সাথে ম্যাচিং করতে হবে। এক্ষেত্রে টেবিল ও চেয়ারের সেট নিতে পারলে ভালো হবে। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ডাইনিং টেবিল ও চেয়ার গুলোর সেটের ডিজাইন খুবই সাদামাটা এবং সাধারণ হয়। হাতিলের অসাধারণ ও অত্যাধুনিক ডাইনিং টেবিল গুলো আপনার জন্য সেরা বাছাই হবে।
শুধু সেট ম্যাচিং করাটাই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি আপনাকে চেয়ার ও টেবিলের রং ম্যাচিং করতেই হবে। তাছাড়া আপনাকে চেয়ারের লেদার ও ফোমের দিকে বিশেষ যত্নবান হতে হবে। কোনোরকম একটা লেদার – ফোম দিলে আপনার পুরো পরিশ্রমটাই বৃথা হয়ে যাবে। আপনার ঘরের উচ্চতা, টাইলস – মেঝের রং, ডিজাইন ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন কেমন চেয়ার আনা চাই।
আরো দেখুন: হাতিলের সেরা কাঠের ডাইনিং চেয়ার এর ডিজাইন এবং দাম
কিভাবে সঠিক ডাইনিং চেয়ারের ডিজাইন বেছে নিবেন?
খুব বেশি না— মাত্র ৫টি টিপস ফলো করে সঠিক ডাইনিং চেয়ারের ডিজাইনটি বেছে নিতে পারেন। এগুলো হলো পর্যায়ক্রমে—সঠিক মাপ, প্রস্থ, কম্বিনেশন, ম্যাটেরিয়েল ও কুশন নির্বাচন করা। আসুন বিস্তারিত জেনে নিই কিভাবে এগুলো করবেন।
১ম ধাপঃ সঠিক মাপের চেয়ার নির্বাচন করা
আপনার ডাইনিং রুমের ডাইনিং চেয়ার গুলোর মাপ হওয়া চাই পারফেক্ট। যেকারণে রুমের সাথে করেই ডাইনিংয়ের চেয়ার বাছাই করতে হয়। ডাইনিং রুমের স্পেস বেশী থাকলে আপনার ডাইনিং রুমের টেবিলটাও বড় হবে, আর টেবিল বড় হওয়া মানে চেয়ারটাও বড় হবে। না হলে চেয়ারে বসা মানুষগুলো ডাইনিং টেবিলের কেন্দ্র পর্যন্ত পৌছতে পারবে না।
তবে ডাইনিং রুমের চেয়ারের একটি গড় মাপ ও কিছু নিয়ম কানুন আছে। যেমনঃ ডাইনিং রুমের চেয়ারটি মেঝে থেকে আসন পর্যন্ত প্রায় ১৮ ইঞ্চি এবং সাধারণ টেবিলটি প্রায় ৩০ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। আপনার টেবিলটি যদি খুব বেশীই বড় হয় তবে চেয়ারের উচ্চতাও বাড়বে। না হয় চেয়ারে বসা মানুষগুলো সহজেই টেবিলের কেন্দ্র পর্যন্ত পৌছতেই পারবে না। ডিজাইন ও স্টাইল যতই পরিপাটি হোক, মাপচোখের দিকে ফেইল হয়ে গেলে মেহমানদের ভ্রু কুঁচকে যাবেই যাবে।
আরো দেখুন: হাতিলের সেরা কাঠের চেয়ার এর ডিজাইন
২য় ধাপঃ ডাইনিং চেয়ারের প্রস্থ নির্বাচন করা
শুধু ডাইনিং চেয়ারই নয়, যেকোনো চেয়ারেরই প্রস্থের মাপটা খুবই গুরুত্ব পূর্ণ। চেয়ারে কেউ একজন বসবে তবে তার বসাটা আরামদায়ক না হলে সে বেশিক্ষন চেয়ারে বসতে পছন্দ করবেই না।
ধরুন, আপনার ডাইনিংয়ের চেয়ারের গড় উচ্চতা ১৮-২০ ইঞ্চি। সেক্ষেত্রে প্রস্থ হতে হবে ৬ ইঞ্চি। এর বেশী রাখা যাবে না কারণ প্রস্থে বেশী হলে চেয়ারে বসা মানুষটির সাথে চেয়ারের গ্রিপ পারফেক্ট হয় না। আর চেয়ারের প্রস্থ ৬ এর কম হলে তো কেউ চেয়ারে বসতেই চাবে না। তবে আপনার এই মাপ নির্ধারনের বিষয়টি মারাত্মকভাবে নির্ভর করে ডাইনিংয়ের চেয়ারের উপরই।
৩য় ধাপঃ টেবিল ও চেয়ারের কম্বিনেশন তৈরি করা
ডাইনিংয়ের টেবিল ও চেয়ার হলো এমন একটি জুটি যা একটির সাথে আরেকটি মিলতে হবে। একটি ৭২ ইঞ্চি আয়তাকার বা ওভাল ডাইনিং টেবিলের সাথে ৬ জন মানুষ সহজেই পুরো দিক থেকেই টেবিলের নাগাল পায়। সেক্ষেত্রে মিডিয়াম টেবিল গুলো ৯৬ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। মিডিয়াম টেবিল গুলোতে অনায়াসে ৮ জন মানুষ বসতেই পারে। তবে আপনার বড় ডাইনিং রুমের জন্য বড় ডাইনিং টেবিলটির মাপ হবে ১২০ ইঞ্চি। ১২০ ইঞ্চি মাপের এই বড় ডাইনিং টেবিলটিতে ১০ জন খুব আরাম করে স্বাচ্ছন্দ্যে বসতে পারবে।
তবে আপনার টেবিলটি যদি গোল হয় সেক্ষেত্রে আপনার গোল টেবিলটির মাপ হবে ৪৮ ইঞ্চি এবং সেখানে ৪ জন মানুষ বসতে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে। গোল ডাইনিং টেবিলটি আরেকটু বড় (মিডিয়াম) সাইজের হলে মাপ হবে ৬০ ইঞ্চি সেখানে বসতে পারবে প্রায় ৬ জন মানুষ। গোল ডাইনিং টেবিলগুলো খুব বেশী বড় হয় না। তবুও কেউ বড় টেবিল বানাতে গেলে সর্বোচ্চ ৭২ ইঞ্চি মাপ হবে এবং এতে ৮ জনের বেশী মানুষ বসলে অন্যদের বসতে অসুবিধা হবে।
আপনার ডাইনিংয়ের চেয়ারগুলো বা টেবিল যেই মাপেরই হোক না কেনো প্রতি চেয়ারে মাঝখানে ৬ ইঞ্চি পরিমান জায়গা রাখা শ্রেয়। এর বেশী রাখার প্রয়োজন নেই। তবে কম জায়গা রাখলে চেয়ারে বসার আগে অন্য চেয়ারের সাথে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা থাকে। আপনার ডাইনিংয়ের এর চেয়ার ও টেবিল গুলোর পাশাপাশি আরো আসবাবপত্র ঘরের মধ্যেই থাকবে। তবে প্রতিটা আসবাবপত্র থেকে ডাইনিং টেবিল থাকবে কেন্দ্রে এবং মাঝে দূরত্ব থাকবে প্রায় ৩৬ ইঞ্চি।
৪র্থ ধাপঃ ডাইনিং চেয়ারের জন্য পারফেক্ট ম্যাটারিয়াল দেখা
টেকসই ফলাফল পেতে ডাইনিং রুমের চেয়ারগুলো কাঠের ম্যাটেরিয়েল হতে হবে। কাঠ হচ্ছে এক পুরনো ঐতিহ্য যা যুগের পর যুগ টিকে যেতে পারে। আবার কাঠের চেয়ারগুলোতে নিজের ইচ্ছামত ডিজাইন দেওয়া যায় বা প্রিবিল্ট ডিজাইন পাওয়া যায়। চেয়ার লোহার হলে খুব বেশী ডিজাইন দেওয়া যায় না। স্টিল বা লোহার ধাতব ব্যবহার করলে হয়তো কিছু আলাদা সুবিধা পাবেন। কিন্তু এতে আপনার আসবাবপত্র সরাতে কিছুটা কষ্টও হবে। বাজারে টেকসই ও ডিজাইনের দিক থেকে কাঠের তৈরী চেয়ার গুলোর চাহিদাই বেশী।
৫ম ধাপঃ ডাইনিং চেয়ারের কুশন বেছে নেওয়া
কুশন তো একটা হলেই হবে এই ধারণা কারো থাকলে এই আর্টিকেলটিই বৃথা। আপনার ডাইনিং টেবিলের রং, চেয়ারের রং, সাইজ, ডিজাইন সবকিছুতে মিল থাকলেও কুশনে যাচ্ছে তাই হলে সবকিছুই শেষ। তবে মজার কথা হচ্ছে ডাইনিং টেবিল ও চেয়ারের রং এর মতন হুবুহু কুশন হলে ব্যাপরটা জমে না, তাই আপনাকে ব্যতিক্রম রং ও ডিজাইনের কুশন কিনতে হবে।
বিষয়টা এই রকম যে লাল রংয়ের শার্টে লাল বা কালো বোতাম দিলে পার্থক্য থাকে না। তবে লাল শার্টে সাদা বুতাম দিলো আপনার শার্টে একটি ভিন্ন রকম ভাব লক্ষণীয় থাকে। আমরা এই দিকটিকে অন্য ভাষায় কালার ম্যাচিং বলে থাকি।
কাঠের ডাইনিং চেয়ারের বেস্ট ডিজাইন হয়েছে কিনা কিভাবে বুঝবেন?
আপনি ডাইনিং টেবিল বানালেন। ডাইনিং চেয়ারেও তৈরী করলেন। কুশন টিও অলমোস্ট রেডি, তবে আপনার ডাইনিং চেয়ারের ডিজাইন কেমন হবে তা কিন্তু এখনো জানা হয় নি। আপনি মেটাল বা কাঠ যা দিয়েই চেয়ার বানান না কেনো আপনাকে এর ডিজাইন করাতে হবে খুব যত্ন নিয়ে।
কাঠের চেয়ার গুলো বেশ সৌখিনতার সাথে ডিজাইন করা যায়। আর মেটাল চেয়ার গুলোতে আপনাকে আলাদা কাঠের প্রলেপ দিয়ে ডিজাইন করতে হয়। তাই কাঠের ডাইনিং চেয়ার গুলো ডিহাইনের জন্য ভালো। বেশীরভাগ মানুষই কাঠের ডিজাইনের টেবিল ও চেয়ার তৈরী করে।
এটি একটি কমন ডিজাইন বলা যায়। আপনি চাইলে কাঠের উপর বোর্ডের কিছু প্রিন্ট দিতে পারেন। এতে আপনি কিছু নকশা জুড়ে দিতে পারবেন যা আপনার চেয়ারকে একটা মাচো ফিল দিবে।
ডাইনিং চেয়ারের পিছনের শ্লেড থাকবে বহু ডিজাইন করা। অর্থাৎ পিঠের পিছনের ডিজাইনটি ভালো ভাবে করতে হবে। আপনি চেয়ারের হাতল (যদি থাকে) সেখানে আলাদা হালকা ডিজাইন রাখতে পারেন।
চেয়ারের পায়ের দিকে আলাদা ছোট্ট হাতল দিতে হবে যেন মেহমানরা চেয়ারে বসার পর পা রাখতে পারে। চেয়ারের নিচে পা রাখার ব্যবস্থা না থাকলে অনেকেই পা ঝুলিয়ে রাখেন। এতে চেয়ারে বসা মেহমানরা অস্বস্তি পান এবং চেয়ার গুলোও দেখতে খারাপ দেখা যায়।
আপনার ডাইনিং রুম আপনার রুচিশীলতার পরিচয় দিবে। আপনি আপনার মেহমানদের যখনই ডাইনিং রুমে বসার ব্যবস্থা করাবেন তখনই দেখবেন মেহমান আপনার নিখুঁত স্বভাবের প্রশংসা করতে ব্যস্ত।
তাই গতানুগতিক ফার্ণিচারদের উপর ডাইনিং রুমের সব আসবাবপত্রের ভার না দিয়ে নিজেই কিছু পরামর্শ দিয়ে ডাইনিং রুমে নিজের রুচি ফুটিয়ে তুলুন।
হাতিল যেভাবে কাঠের ডাইনিং চেয়ার ডিজাইনকে সহজ করেছেঃ
হাতিল-এর অত্যাধুনিক ফ্যাক্টরিতে সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ারদের হাতে ডিজাইন করা চেয়ারগুলি অটোমেটিক মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। তাই চেয়ারে কোনো প্রকার খুত থাকে না। আবার ক্লিনিক্যাল উপায়ে তৈরি করার জন্য চেয়ারের ডিজাইন শরীরের কোনো প্রকার ক্ষতি করেনা। আপনি সহজে হাতিল ওয়েবসাইট ভিজিট করে বিভিন্ন রকম ডাইনিং চেয়ার -এর ইলাস্ট্রেশন দেখে নিশ্চিন্তে পছন্দের ডিজাইন বেছে নিতে পারেন।
ডাইনিং চেয়ারের ডিজাইন নিয়ে কিছু বহুল প্রচলিত প্রশ্নোত্তরঃ
ফার্নিচার নির্মাতারা ডাইনিং চেয়ার তৈরিতে কোন ধরনের কাঠ ব্যবহার করে?
আধুনিক ডাইনিং চেয়ারে সর্বাধিক ব্যবহৃত কাঠ হলো কিলন চেম্বারে টেম্পার করা ব্লীচ উড ও ভিনিয়ার্ড উড। এগুলো যেরকম সুন্দর সোজাসাপ্টা শেপে বানানো যায়, ঠিক সেভাবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা যায়। এধরনের কাঠের উপর লিকুইর ও এন্টি লিকুইর দুরকমেরই ফিনিশ দেওয়া সম্ভব। তাই ক্রেতারা বর্তমানে এই কাঠের চেয়ার বেশি পছন্দ করছে।
পুরনো ডাইনিং চেয়ার ও আধুনিক ডাইনিং চেয়ারের তফাত কি?
পুরনো ডাইনিং চেয়ারগুলি হাতে বানানো হত। বেশি পুরু হবার সাথে সাথে এগুলোকে পুরনো আমলের মত রাজকীয় নকশা করা থাকে। অপরদিকে আধুনিক ডাইনিং চেয়ারগুলো বেশ ছিমছাম হয়ে থাকে। পুরনো চেয়ার সরানো একটু কষ্টসাধ্য হলেও আধুনিক চেয়ার সরানো এবং পরিষ্কার করা বেশ সহজ।
সবচেয়ে প্রিমিয়াম ডিজাইনের কাঠের ডাইনিং চেয়ারের দাম কেমন হয়?
প্রিমিয়াম ডিজাইনের মডার্ন ও বোহেমিয়ান ডাইনিং চেয়ারের দাম ৬ হাজার তেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে হতে পারে। ব্র্যান্ড ও গুণগত মান ভেদে এর চেয়ে কমেও ডাইনিং চেয়ার পাবেন। কিন্তু সেগুলোতে ঠিকমত ওয়ারেন্টি সেবা ও টেকসইত্বের গ্যারান্টি পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়।