রঙিন ভুবন : ৫টি সহজ উপায়

আমাদের দেশে বেশির ভাগ বাসাবাড়িতেই কিছু কমন রং দেখা যায়। দেয়ালে হয়তো সাদা বা ঘিয়ে রং করা। আসবাবগুলো কাঠের বার্নিশের অথবা গাঢ় রঙের। পর্দা, বিছানার চাদরগুলো সেই চিরায়ত হালকা কোনো রঙের। এ রকম কিছু রং মিলে যেন বাসার জন্য একধরনের কালার প্যালেট স্থায়ী হয়ে গেছে। তবে অনেকেই এই হালকা রংগুলোর বদলে একটু উজ্জ্বল, গাঢ় রঙে ঘর সাজাতে চান। ঘরে বৈচিত্র্য আনতে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার হতে পারে দারুণ উপায়। কিন্তু কোথায় কোন রং ব্যবহার করা যেতে পারে, কীভাবে সাজানো যেতে পারে, তা নিয়ে হিমশিম খায় অনেকেই। তাই আজ বলছি আপনার ভুবনকে রঙিন করার কিছু সহজ উপায়।

 

রঙিন আসবাব

বসার ঘরে রাখতে পারেন উজ্জ্বল রঙের ফেব্রিকের সোফা বা ডিভান

ঘরে বৈচিত্র্য আনতে রঙিন আসবাবের জুড়ি নেই। আমাদের দেশে বহু বছর ধরেই কাঠের আসবাবের প্রচলন। কিছুদিন আগপর্যন্তও কাঠের আসবাবে রঙিন কোনো ছোঁয়া ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে এ দেশে রঙিন ও কুশনিং আসবাবের চল এসেছে। তাই ঘরকে অন্য রকমভাবে সাজাতে চিরায়ত কাঠের রঙের আসবাবের বদলে কিনতে পারেন উজ্জ্বল রঙের কোনো আসবাব। বসার ঘরে রাখতে পারেন একটি উজ্জ্বল কুশনিং সোফা বা ডিভান। লাল টুকটুকে একটা ডিভান আপনার বসার ঘরকে রঙিন করে তুলবে। শোবার ঘরের খাট কেনার সময় বাছাই করতে পারেন একটি রঙিন হেডবোর্ড। রঙিন আসবাবের ক্ষেত্রে হাতিলের জুড়ি মেলা ভার।  Aloe-196 এমন একটি খাট যেখানে আপনি আপনার পছন্দের রং বাছাই করতে পারবেন। তা ছাড়া কুশনিং সোফা, ডিভান ইত্যাদিতেও পছন্দের রং বাছাইয়ের সুযোগ রয়েছে। এ ধরনের আসবাবগুলো দেয়ালের রং যেমনই হোক , অন্যান্য আসবাব যেমনই হোক সবকিছুর সাথে মানিয়ে যায় বেশ ভালোভাবে। উজ্জ্বল রঙের আসবাব সহজেই ঘরের সৌন্দর্য বদলে দেয়। 

 

রঙিন দেয়াল, মেঝে

একটি দেয়ালকে ভিন্ন রঙে সাজিয়ে তৈরি করতে পারেন অ্যাকসেন্ট ওয়াল

বাসাকে রঙিন করার সবচেয়ে সহজ ও প্রচলিত উপায় হচ্ছে দেয়াল রং করা। কিন্তু দেয়াল রং করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন গাঢ় বা উজ্জ্বল রংগুলো ঘরে গুমোট ভাব সৃষ্টি না করে। সে ক্ষেত্রে পুরো ঘরের দেয়াল একরঙা না করে যোগ করা যেতে পারে বিভিন্ন প্যাটার্নের নকশা। অথবা সব দেয়াল হালকা রঙের রেখে একটা বড় দেয়াল বেছে সেটিকে বানিয়ে ফেলা যেতে পারে অ্যাকসেন্ট ওয়াল। অ্যাকসেন্ট ওয়ালে উজ্জ্বল ও গাঢ় রংগুলোর মধ্যে টি রোজ, লিলিয়াক, বারগ্যান্ডি, জ্যাড গ্রিন, অলিভ ইত্যাদি রংগুলো থাকতে পারে। দেয়ালে রং করার উপায় না থাকলে দেয়ালে ব্যবহার করা যেতে পারে ওয়ালপেপার। একটি বড় দেয়ালজুড়ে সুন্দর নকশার ওয়ালপেপার ঘরকে রঙিন করবে। আর ওয়ালপেপার সাশ্রয়ী ও বদল করতেও সুবিধা।

মেঝের রং বদল করা বেশ খরচসাপেক্ষ ও দীর্ঘস্থায়ী। কেউ যদি সেই ঝামেলায় যেতে না চায় তাহলে মেঝেকে রঙিন করতে ব্যবহার করতে পারেন কার্পেট। সে ক্ষেত্রে মেঝের টাইলসের বিপরীত রঙের কোনো কার্পেট পেতে দিতে পারেন। বসার ঘরে বড় অংশজুড়ে থাকতে পারে আধুনিক নকশার একটি কার্পেট। এগুলো যেমন মেঝেকে রঙিন করবে, তেমনই করবে আরামদায়ক।

 

রঙিন কুশন, পর্দা ও টেবিলক্লথ

গাঢ় ও উজ্জ্বল রঙের কুশন, বিছানার চাদর দিয়ে শোবার ঘরকে রঙিন করে তুলতে পারেন

উজ্জ্বল রঙের আসবাব বা দেয়াল রং করার মতো বড় ও দীর্ঘস্থায়ী উপায়ে যদি না যেতে চান তাহলে আপনার জন্য সহজ উপায় হতে পারে কুশন, বিছানার চাদর, পর্দা, টেবিলক্লথে বৈচিত্র্য আনা। একরঙা পর্দার বদলে দরজা-জানালায় ব্যবহার করতে পারেন উজ্জ্বল রঙের জ্যামিতিক নকশার পর্দা। ডাইনিং টেবিলে টেবিলক্লথটা হতে পারে গাঢ় কোনো রঙের। তা ছাড়া একরঙা সোফা বা বিছানায় রাখতে পারেন বেশ কিছু রং ও নকুশার কুশন। এগুলো ঘরকে আরামদায়ক ও রঙিন করবে। আবার সোফা ও কুশনের রঙে বৈপরীত্য রেখেও ঘরকে রঙিন আবহ দিতে পারেন।

 

রঙিন অনুষঙ্গ

বাঁধাই করা ছবির ফ্রেম হতে পারে একটি রঙিন অনুষঙ্গ

ঘরকে যে উজ্জ্বল রঙেই সাজাতে হবে, এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। তবে কেউ যদি মনে করেন হালকা রঙের ছিমছাম ঘরেও একটু রঙিন ছোঁয়া থাকুক তাঁরা ব্যবহার করতে পারেন ঘর সাজানোর রঙিন কিছু অনুষঙ্গ। আধুনিকভাবে সাজানো ঘরে একটি দেয়ালে বড় একটি রঙিন চিত্রকর্ম টাঙানো যেতে পারে। অথবা নিজের ও পারিবারিক ছবি রঙিন ফ্রেমে বাঁধাই করে একটি দেয়াল সাজিয়ে নেওয়া যেতে পারে। বাঙালি ভাবধারার ঘরে কারুশিল্প ব্যবহার করে সাজানো যেতে পারে। নকশিকাঁথার একটি ফ্রেম দেয়ালে টাঙানো যেতে পারে। টেবিলে রাখা যেতে পারে রঙিন মাটির ফুলদানি।

রঙিন প্রকৃতি

বসার ঘরে ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতে পারেন রঙিন ফুল

নিজের ভুবন রঙিন করতে যে আসবাব বা অনুষঙ্গ কিনতে হবে তা নয়। আপনার ঘরকে সাজাতে পারেন প্রকৃতির রঙে। জানালার কার্নিশে রাখতে পারেন ছোট ছোট ইনডোর প্ল্যান্টের টব। বসার ঘরে সেন্টার টেবিলে সিরামিকের টবে রাখতে পারেন ছোট গাছ কিংবা ফুলদানিতে সাজিয়ে রাখতে পারেন রঙিন কিছু ফুল। ঘরের কোণে পাতাবাহার গাছগুলো যেমন রঙিন আবহ তৈরি করবে তেমনই আপনার মনকে করবে সজীব।

দীর্ঘমেয়াদি উপায়ে না গিয়ে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি করতে পারেন আপনার নিজের রঙিন ভুবন। রুচিশীল উপায়ে ফুটিয়ে তুলতে পারেন আপনার ব্যক্তিত্ব। ঘরকে রঙিন করে সাজিয়ে তোলার এই উপায়গুলো কেমন লাগল, তা জানাতে পারেন কমেন্টে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।