কাঠের দরজায় মূলত কাঠের দরজার ডিজাইন দরজার সৌর্ন্দয্যকে প্রকাশ করে থাকে। আজকের এই লেখায় আমরা কাঠের দরজার নকশার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো।
সুদীপ্তরা সবে নতুন বাসায় উঠেছে। বাসাটি ঝকঝকে নতুন কোনো অ্যাপার্টমেন্ট নয়। বরং বেশ আগের ছিমছাম মোজাইকের বাসাগুলোর মতো। সুদীপ্তর অবশ্য একেবারে নতুন আধুনিক অ্যাপার্টমেন্টের চেয়ে এমন পুরোনো দিনের বাসাগুলোই বেশি ভালো লাগে। এই ধরনের বাসাগুলোয় সাধারণত বেশ বড় বারান্দা এবং বড় রান্নাঘর থাকে।
এ ছাড়া এমন বাসাগুলো অনেক বেশি খোলামেলা হয়। মধ্যবিত্তের জন্য উপযুক্ত এখনকার নতুন অ্যাপার্টমেন্টগুলোয় এত খোলামেলা জায়গা পাওয়া দায়। সব মিলিয়ে সুদীপ্তরা যেন এমনই একটি বাসা বহুদিন ধরে খুঁজছিল।
সমস্যা একটাই, বহু পুরোনো বাসা হওয়াতে দরজাগুলোও বেশ পুরোনো হয়ে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই কাঠ ফুলে এমন অবস্থা হয় যে দরজা খোলাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ওদের তাই প্রতিটি রুমের দরজাই বদলাতে হবে।
সুদীপ্তদের মতো কোনো কারণে যাঁরা বাসার দরজা পাল্টানোর কথা ভাবছেন কিংবা নতুন বাসায় নতুন দরজা লাগানোর কথা চিন্তা করছেন, তাঁদের জন্যই আজকের আমাদের এই ব্লগ। পরিবারের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরজার গুরুত্ব অনেক।
আবার যেকোনো বাসার সজ্জার ক্ষেত্রেও দরজা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আপনার দরজার টেক্সচার এবং নতুন দরজার ডিজাইন বাসার অন্য সবকিছুর সজ্জার থেকে পুরোপুরি আলাদা হলে তা মোটেই ভালো দেখাবে না।
কয়েক প্রজন্ম ধরেই আমাদের দেশের বাসাগুলোয় কাঠের দরজা ব্যবহার করার প্রচলন বাড়ছে। বিশেষ করে শহরের প্রায় সব ফ্ল্যাট বাসাতেই এখন কাঠের দরজা ব্যবহার করা হয়। কাঠের ওপর নানা ধরনের দরজার নকশা এবং টেক্সচার তৈরি করা খুবই সহজ। তাই বাসার সজ্জার সাথে মানিয়ে দরজা পছন্দ করা সম্ভব।
বিভিন্ন আধুনিক কাঠের দরজার ডিজাইন
হাতিলের আধুনিক কাঠের দরজার ডিজাইন
আবার অনেক দিন টেকসই হয় বলে কাঠের দরজার জনপ্রিয়তা অনেক দিন ধরেই আকাশচুম্বী। তাই আজ বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং আধুনিক কিছু কাঠের দরজার ব্যাপারে জেনে আসা যাক:
১। সলিড কাঠের দরজা
এ দেশের বাসাবাড়িতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সলিড কাঠের দরজা। লাল ওক কাঠ এবং উত্তর আমেরিকার বিচ কাঠ দিয়ে তৈরি এই কাঠের দরজাগুলো অনেক টেকসই তো বটেই, পাশাপাশি যেকোনো ধরনের বাসাতেই এই দরজা ডিজাইন মানিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ওক এবং বিচ কাঠ ব্যবহার করার কারণে এই ধরনের দরজার দাম অন্য ধরনের দরজার তুলনায় একটু বেশি হয়। এরপরও এই ধরনের দরজার বড় সুবিধা হচ্ছে, একবার এই ধরনের দরজা কিনলে প্রায় আজীবনের জন্য নির্ভার থাকা যায়।
তাই অনেকেই সলিড কাঠের দরজা অন্য সব ধরনের দরজার চেয়ে বেশি পছন্দ করেন। এই ধরনের দরজার আরেকটি বড় সুবিধা হলো, প্রবেশপথের দরজা হোক কিংবা অভ্যন্তরীণ কোনো রুম, সলিড কাঠের দরজা মানিয়ে যায় সব জায়গায় এবং সব প্রয়োজনেই।
সলিড কাঠের দরজার সিম্পল ডিজাইন ও নানন্দিকতায় মুগ্ধ করার মতো। ওক এবং বিচ কাঠের দারুণ টেক্সচার যেকোনো ধরনের ইনটেরিয়রের সাথেই মানিয়ে যায়। কার্যকারিতা এবং নন্দিকতার সংমিশ্রণের সলিড কাঠের দরজাকে এ দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তুলেছে।
আরো পড়ুন: হাতিলের সেরা ১০ টি ওয়ারড্রব ডিজাইন
২। দরজায় কাচের ব্যবহার
নকশায় কাচওয়ালা কাঠের দরজা ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সলিড কাঠ কিংবা ভিনেয়ার দরজার মাঝে কাচের ব্যবহারই এই ধরনের দরজার মূল বৈশিষ্ট্য। কাচের ব্যবহারে দরজার নান্দনিকতা তো বাড়েই, একই সাথে পুরো রুমের সজ্জাও যেন এক নিমেষেই যেন পাল্টে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই ধরনের দরজায় ইনসুলেটেড কাচ ব্যবহার করা হয়। ইনসুলেটেড কাচ তাপমাত্রা এবং বিদ্যুৎনিরোধক হয়। প্রয়োজনের ভিত্তিতে অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেকে নন-ইনসুলেটেড কাচও ব্যবহার করে থাকেন।
তবে যেই ধরনের কাচই ব্যবহার করা হোক না কেন, প্রাইভেসি বজায় রাখতে এই ধরনের দরজা সাথে পর্দা ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়ে। অনেকে আবার স্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ঘোলা কাচ ব্যবহার করেও প্রাইভেসি নিশ্চিত করেন।
আপনার বাড়ির নান্দনিকতার সাথে মানিয়ে নিতে অনেক ধরনের কাচের নকশার দরজা ব্যবহার করা যেতে পারে। টেম্পারড গ্লাস দিয়ে করা ডিজাইনগুলো এখন ক্রেতাদের মাঝে দারুণ জনপ্রিয়।
আবার অনেকে জ্যামিতিক প্যাটার্নেও কাচের নকশা করে থাকেন। বাড়ির সজ্জায় শৈল্পিক ধাঁচ আনতে চাইলে স্টেইনড গ্লাসের নকশাগুলো আপনার ভালো লাগতে পারে। এ ধরনের নকশায় কাচের ওপর নানা ধরনের শিল্পকর্ম করা হয়। এতে দরজায় যোগ হয় বাড়তি শৈলী।
সলিড কাঠের কাচের দরজা কিংবা ভিনেয়ার কাচের দরজা ব্যবহারে আপনার বাসা হয়ে উঠতে পারে অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তবে এই ধরনের দরজা বানানো অনেক জটিল কাজ। নকশায় সহজেই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই এগুলো কেনার সময় হাতিলের মতো অভিজ্ঞ কোম্পানিগুলোর ওপরেই নির্ভর করা ভালো।
আরো দেখুন: হাতিলের অন্যান্য সেরা কাঠের দরজার ডিজাইন ও দাম
৩। ভিনেয়ার ফ্লাশ দরজা
ভিনেয়ার কাঠের দরজা বলতে আমরা এমন দরজা বুঝি, যেগুলোর ভেতরে পার্টিকেল বোর্ড কিংবা ফাইবার বোর্ডের মতো হালকা ম্যাটেরিয়ালের ওপর সলিড কাঠের চিকন পাটাতন জোড়া লাগিয়ে বানানো হয়। ওপরে শক্ত কাঠের স্তর থাকার কারণে ভিনেয়ার ফ্লাশ দরজাগুলো বাইরে থেকে দেখতে সলিড কাঠের দরজার মতোই।
তবে সলিড কাঠের দরজার তুলনায় এগুলো খুবই বাজেট ফ্রেন্ডলি। পুরোটা শক্ত কাঠ দিয়ে বানানো না হওয়াতে এগুলো খুবই হালকা হয়। তাই বাথরুমের দরজা কিংবা স্টোররুমের দরজার ক্ষেত্রে এখন অনেকেই ভিনেয়ার ফ্লাশ দরজা পছন্দ করে থাকেন।
ব্যবহারিক সুবিধা তো আছেই। এ ছাড়া চিকন কাঠের পাটাতন ব্যবহার করা হয় বলে পরিবেশসচেতন মানুষদের কাছে ভিনেয়ার ফ্লাশ দরজাগুলো খুবই প্রিয়। এই ধরনের দরজা বানাতে আস্ত গাছ কেটে ফেলতে হয় না, অল্প কাঠেই চলে যায়। তাতে পরিবেশের ক্ষতি কিছুটা কম হয়।
ভিনেয়ার ফ্লাশ দরজা অনেক ধরনেরই হতে পারে। তবে বাজারে একেবারে সাধারণ এবং ডেকোরেটিভ ভিনেয়ার দরজাগুলোই বেশি জনপ্রিয়। সাধারণ ভিনেয়ার দরজাগুলোয় একেবারে মিনিমাল ডিজাইন ব্যবহার করা হয়।
অন্যদিকে শিল্পমনা মানুষদের কাছে ডেকোরেটিভ নকশার ভিনেয়ার দরজাগুলো বেশি জনপ্রিয়। একই সাথে বাজেটবান্ধব এবং নানন্দিক হওয়ার কারণে ভিনেয়ার ফ্লাশ দরজা আপনার অনেক প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতা রাখে।
আরো পড়ুন: এক্সেন্ট চেয়ারের সাথে ঘরে নিয়ে আসুন নতুনত্বের ছোঁয়া
পরিশেষে, আপনার বাসায় কেমন দরজা চাই, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক কিছু ভেবে নেওয়া প্রয়োজন। একই সাথে আপনার প্রাইভেসি রক্ষা করতে এবং আপনার ঘরের সামগ্রিক নানন্দিকতা ফুটিয়ে তুলতে উপযুক্ত দরজাটি খুঁজে বের করতে পেরেছেন কি না, তা এখনই কমেন্টে জানিয়ে দিন আমাদের।
আরো দেখুন: হাতিলের অন্যান্য সেরা কাঠের দরজার ডিজাইন