এই শীতে খাবার ঘরের সাজসজ্জা

ঘর গোছানো নিয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকেন আফরিন। হালফ্যাশনের ট্রেন্ডগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করেন সব সময়। এমনকি মৌসুমি রঙের সাথে মিলিয়ে পরিবর্তন করেন ঘরের রংগুলোও। বসন্ত, গ্রীষ্ম পার করে শীতকালে চলে এল। লেপ-কাঁথা-কম্বল বের করে শোবার ঘরগুলোকে যেমন প্রস্তুত করা যায়, আফরিনের মনে হলো খাবার ঘরটায়ও এমন কিছুটা পরিবর্তন আনা দরকার। কিন্তু খাবার ঘরে তো লেপ-কাঁথা যোগ করা যায় না, পরিবর্তনগুলো হতে হবে আরও সূক্ষ্ম। আবার  অতিথির সংখ্যাও বেড়ে যায় কীভাবে যেন ঠান্ডার মাঝে। এত সব চিন্তা করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে যান আফরিন। শীতকালে ঘরকে প্রস্তুত করার জন্য এমন সমস্যার সম্মুখীন হন অনেকেই। বাকি ঘরগুলো প্রস্তুত করা সহজ হলেও খাবার ঘরটা শীতের সাথে ঠিক কীভাবে পরিবর্তন করা যায়, তা বোঝা দুষ্কর। এই কঠিন কাজটা সহজ করার জন্য কিছু টিপস নিয়ে এসেছি আমরা। 

শীত মানেই অতিথি আপ্যায়নের মৌসুম 

ডাইনিং টেবিল বাছাই 

শীতের জন্য আলাদা করে ডাইনিং টেবিল কেনার তো প্রশ্নই ওঠে না। তবে টেবিলটি হতে হবে এমন যাতে সব মৌসুমেই ব্যবহার করা যায়। শীতের অতিথির আপ্যায়নের জন্য একটু বড় টেবিল সবারই প্রয়োজন। ডাইনিং টেবিল জিনিসটি যেহেতু পুরো বাসা সাজানোর অনেক বড় একটি অংশ তাই এটি নিয়ে বিস্তরভাবে বলা প্রয়োজন। 

বেশি অতিথির জন্য প্রয়োজন মানানসই আকারের ডাইনিং টেবিল 

ঘরের আকার 

ঘর যদি ছোট হয় তবে খুব বড় ডাইনিং টেবিলের প্রয়োজন নেই। এতে ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হবে। তবে ছোট জায়গায় বেশি মেহমানের ব্যবস্থা করার উপায়? এই সমস্যার সমাধান করতে হাতিল এনেছে নতুন “স্মার্টফিট” ফার্নিচার। একের ভেতরে অনেকগুলো কাজ সম্ভব এই ফার্নিচারগুলোর মাধ্যমে। খাবার টেবিলের মাঝেই কেবিনেট পাওয়া যাবে হাতিলের ইয়োগার্ট-১০১ টেবিলটিতে। দাঁড় করিয়ে রাখলে টেবিলের সাথেই জোড়া লাগানো কেবিনেট পাওয়া যায়। আবার ভাঁজ করলে পুরো জিনিসটাই কেবিনেট হিসেবে কাজ করবে। ছোট ঘরের জন্য একদম উপযুক্ত হবে এটি। 

খাবার টেবিলে আরাম 

সাধারণত ডাইনিং টেবিলে পুরোপুরি কুশনসহ চেয়ার পাওয়া যায় না। অথচ শহুরে পরিবারগুলোতে দেখা যায় খাওয়ার সময়ই আরাম করে পরিবারের সাথে কিছুটা সময় কাটানো হয়। তাই বসার ঘর, শোবার ঘরে যেমন আরামের প্রয়োজন, তেমনটাই ব্যবস্থা করা উচিত খাবার ঘরেও। এমনি আরামদায়ক একটি ডিজাইন হবে হাতিলের এডমুন্ড-১৯৪ কিংবা জোয়েল-১৭৭। পর্যাপ্ত কুশনিং থাকায় আরামে এই চেয়ারেই পার করে দিতে পারবেন শীতের দিনের ঘণ্টার পর ঘণ্টা। শুধু খাবার সময়ই নয়, সকালে এক কাপ কফি বা অলস বিকেলে চা-নাশতা খাওয়ার জন্যও বাড়ির সবাই চলে আসতে চাইবে খাবার ঘরেই। 

এডমুন্ড-১৯৪ ও ট্রাফল-১৯১ ডাইনিং সেট 

জোয়েল-১৭৭ ও সুশি-১৭৭ ডাইনিং সেট 

ঘরের স্টাইল নির্ধারণ 

পুরো বাড়ি যদি মডার্ন ও মিনিমাল স্টাইলে সাজানো থাকে তবে ডাইনিং টেবিলেও মিনিমাল ডিজাইন রাখতে হবে। আবার যদি ঘরে গতানুগতিক ট্র্যাডিশনাল আসবাব বেশি ব্যবহার করেন, তবে বাকি ঘরেও যেন থাকে সেই ঐতিহ্যের ছোঁয়া। ট্র্যাডিশনাল ডিজাইনের দিক থেকে বেছে নিতে পারেন হাতিলের প্যাকার-১৮৩ ও অরলান্দ-১৯৮। আড়ম্বরহীন সরল ডিজাইনের মাঝেই সুন্দরভাবে ট্র্যাডিশনাল ভাবধারায় ঘর সাজানো ফুটে উঠবে এই ডাইনিং টেবিলটিতে। 

প্যাকার-১৮৩ ও অরলান্দ-১৯৮

ডাইনিং টেবিলে ভিন্নতা

টেবিলের সাথে চেয়ার তো সব সময়ই থাকে। এই চেয়ারের কনসেপ্টটি কিছুটা বদল করে ব্যবহার করলে কেমন হয়? চেয়ারের বদলে স্টাইলিশ বেঞ্চ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন হাতিলের ক্যাসেরোল-২০০। কিছুটা বৈচিত্র্য খাবার ঘরে আনার সাথে সাথে জায়গাও কম খরচ হবে বেঞ্চ ব্যবহার করলে, আবার  ঘরে বোহেমিয়ান ভাবও চলে আসবে। 

বেঞ্চসহ নতুনত্ব আনুন ডাইনিং টেবিলে 

ছোটখাটো  আসবাব

ষড়ঋতুর দেশে মৌসুমে মৌসুমে ফার্নিচার বদলানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না। তবে বদলানো  যায় সাধারণ সাজ ও আবহ। শীতের অতিথি আপ্যায়ন ও ঠান্ডার মাঝে কিছুটা আরামের আমেজ আনার জন্য ফার্নিচার বদলের পরিবর্তে ঘরে যোগ করা যায় ছোট ছোট কিছু উপাদান। 

ছোট আসবাব পরিবর্তন করে ফেলে পুরো ঘরের চেহারা 

উষ্ণ ফেব্রিক ব্যবহার 

উল ও পশমের তৈরি সজ্জা ব্যবহারের উপযুক্ত সময় শীতকাল। কার্পেটের ক্ষেত্রে উল বা “faux ফার”-এর তৈরি কার্পেট যোগ করতে পারেন ঘরের মেঝেতে। চেয়ারের ওপরে সাজিয়ে রাখতে পারেন গরম কাপড়ের তৈরি শাল বা ছোট ব্লাঙ্কেট। ডাইনিং টেবিলে এমন কিছু চিন্তা করতে অদ্ভুত লাগলেও শীতের সকালে এক কাপ কফি খেতে বসে ছোট শাল গায়ে জড়িয়ে নিতে পারলে, এর থেকে আরামদায়ক আর কী হতে পারে? 

মোমবাতির আলোয় উজ্জ্বল 

গ্রীষ্মের থেকে শীতকালটা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বেশি অন্ধকার থাকে। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোর অভাব অনুভব করা যায় প্রতিটি মুহূর্তেই। খাবার ঘরে কয়েকটা ভিন্ন আকারের মোমবাতি যোগ করলে তা কাজ করতে পারে কিছুটা বাড়তি আলোর উৎস হিসেবে। অনেক আলো না দিতে পারলেও মোমবাতির আলোটা পুরো ঘরে একটি আরামদায়ক আমেজ এনে দেবে। তা ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন সুবাসযুক্ত “সেন্টেড” মোমবাতি অনেক জনপ্রিয়। এই মোমবাতিগুলো দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি ঘর ভরে দেবে অবিশ্বাস্য সুন্দর গন্ধে। মোমবাতি বিভিন্ন আকারের কিনলে তা ঘরের কোনাও সুন্দর একটি শোপিস হিসেবেও কাজ করবে। 

সবুজে সবুজে প্রাণবন্ত 

শীতকালে আবহাওয়াটা কেমন যেন বিষন্ন হয়ে থাকে। গাছের পাতাগুলো ঝরে যাওয়ার সাথে সাথে বিদায় নেয় প্রকৃতির সবুজ। এই সবুজের শূন্যতাটা ঘরের মাঝে পূরণ করতে পারলে দিনটা হয়ে উঠবে আরও সজীব। যেকোনো জায়গায় প্রাণের ছোঁয়া এনে দিতে পারে গাছ। তাই খাবার ঘরের কোণে যোগ করে নিতে পারেন ছোট-বড় ইনডোর প্লান্ট। ডাইনিং টেবিলে পর্যাপ্ত জায়গা থাকলে টেবিলের মধ্যমণি হয়ে থাকতে পারে এই সবুজের সমাহার। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক যেকোনো গাছ ব্যবহার সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক গাছ ব্যবহার করাই ভালো। আবার মৌসুমি ফুল সুন্দর করে সাজিয়ে রাখলে তা সুগন্ধ ও রূপ দিয়ে প্রাণবন্ত করে ফেলবে গোটা ঘরকে। 

হালকা রঙের প্রাধান্য 

শীতকালের থিমের সাথে তাল মিলিয়ে হালকা রঙের ব্যবহার করলে মন্দ হয় না। সাদা, বেইজ, ধূসর এবং অন্যান্য নিরপেক্ষ রঙের প্রাধান্য থাকলে নিজের ঘরকেই  “winter wonderland” বানিয়ে ফেলা সম্ভব। জানালার পর্দা, মেঝের কার্পেট, টুকিটাকি আসবাব ইত্যাদিতে হালকা রং আনলে সহজেই ঘরটা দেখাবে শীতের স্বর্গের মতো। ছোটখাটো আসবাব যদি একই রঙের বা কাছাকাছি রঙের হয় তবে তা সমগ্র ঘরেই আনবে আভিজাত্যের ছোঁয়া। কিছুটা সৃজনশীলতা প্রয়োগ করলে বাজার থেকে কম দামি শোপিস কিনে সেগুলোও ঘরে বসে এক রং করে ফেলা সম্ভব। 

কেবিনেট ও ডিনার ওয়াগন 

ডাইনিং টেবিলের পরই খাবার ঘরের অনবদ্য অংশ ডিনার ওয়াগন আর কেবিনেট । সব মৌসুমে যাতে ভিন্নভাবে সাজানো যায় এই ফার্নিচারগুলো তা নিশ্চিত করা দরকার। বহুমুখী ব্যবহারের যোগ্য ফার্নিচার পাওয়া গেলে তো আর কথাই নেই। এসব আসবাব বাছাই করার জন্যও কিছু জিনিস মাথায় রাখা প্রয়োজন। 

কেবিনেটের আকার 

কী ধরনের কেবিনেট ঘরে রাখা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করুন ঘরের আকার বিবেচনা করে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকলে ডিনার ওয়াগনের বদলে ছোট আকারের কেবিনেট ব্যবহার করেও একই উদ্দেশ্য পূরণ করা যায়। ছোট আকারের কেবিনেটের মধ্যে হাতিলের হিলিওস-১০২ পর্যাপ্ত স্টোরেজের সাথে ডাইনিং রুমে যোগ করতে পারবে আধুনিকতার ছোঁয়া। অল্প জায়গার মাঝে শীতের অতিথি আপ্যায়নের জন্য মিনি কেবিনেটগুলোই হবে আপনার সবচেয়ে কার্যকর আসবাব। 

টুকিটাকি সাজানোর উপযুক্ত জায়গা 

শুধু ফার্নিচার দিয়েই তো পুরো ঘর সাজিয়ে ফেলা যায় না, সাথে রাখতে হয় কত টুকিটাকি। সব মৌসুমের জন্য ঘরের রূপ বদলের জন্য এই টুকিটাকিগুলোই যথেষ্ট। কিন্তু এই ছোট ছোট আসবাব কোথায় রাখবেন? আলাদা করে টেবিলের ব্যবস্থা করা অনেক সময়ই সম্ভব নয়, আবার খুব বেশি কার্যকরও নয়। কেবিনেট বা ডিনার ওয়াগনের মাঝেই জায়গা করে দেওয়া দরকার এইসব আসবাবের। এ ক্ষেত্রে হাতিলের লিনেন-১০৪ একটি উপযুক্ত মিনি কেবিনেট। কারণ নিচে স্টোরেজ ব্যবস্থা করার পাশাপাশি এটির ওপরে আছে সুন্দর কাচের একটি স্তর। বসার ঘরে যেভাবে শোপিস সাজানো হয়, ঠিক সেভাবেই এই জায়গাটিও সাজিয়ে ফেলতে পারবেন প্রিয় সব আসবাবে। 

লিনেন-১০৪

ডিনার ওয়াগনের ব্যবহার 

ডিনার ওয়াগন জিনিসটি সাধারণত আকারে একটু বড়ই হয়। তাই ঘরের আকারের সাথে মানানসই না হলে ডিনার ওয়াগন ব্যবহার করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। তবে যদি ঘর হয় কিছুটা বড়, তবে সুন্দর সুন্দর কাচের বাসনগুলো প্রদর্শন করার ক্ষেত্রে এর জুড়ি নেই। ডিনার ওয়াগনের পাল্লাগুলো কাচের হলে সহজেই ভেতরে কাচের পাত্র ছাড়াও সাজিয়ে রাখা যায় বিভিন্ন আসবাব। হাতিলের ফাজিতা-১০৮ একটি সময়োপযোগী মডার্ন ডিজাইনের ডিনার ওয়াগন যা ডাইনিং রুমের যেকোনো কোনায় মানিয়ে যাবে খুব সহজেই। চোখের সামনেই সব থালাবাসন থাকায়, অতিথি আপ্যায়নের প্রক্রিয়াটাও হয়ে যাবে অনেক সুবিধার। 

ফাজিতা-১০৮

দেরি না করে নিজেকে প্রস্তুত করার সাথে সাথে বাড়ির প্রতিটি ঘরকে করে নিন শীতের উপযোগী।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।